রক্তিম মিত্র
আবার মুখ্যমন্ত্রীর একটি সাক্ষাৎকার দেখলাম। এবার ২৪ ঘণ্টা চ্যানেলে। ই টিভিতে যেমন পেটোয়া ইন্টারভিউ ছিল, এটা অবশ্য ততটা ছিল না। ই টিভির ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী নিজে যত না নিজের ঢাক পেটাচ্ছিলেন, সঞ্চালক যেন তাকেও ছাপিয়ে যাচ্ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে ফিরিস্তি দিতে তিনিই যেন বেশ ব্যস্ত ছিলেন। ২৪ ঘণ্টার ক্ষেত্রে তেমনটা ছিল না। মৃদু হলেও কিছু অপ্রিয় প্রশ্ন উঠে এসেছে। পুরো সাক্ষাৎকার নিয়ে নয়। আমি একটি বিশেষ উত্তর নিয়ে
একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলে বসলেন, বিরোধীদের যারা জিতবে, তাদের ধরে রাখতে পারবেন তো?
কী মারাত্মক কথা! রাজ্যে অশান্তি ও হাঙ্গামার উৎসটা কোথায়, এই মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার বোঝা যায়। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য হুশিয়ারি ছাড়া আর কী? অর্থাৎ বিরোধীদের হয়ে জেতার পরেও তিনি সেই দলের হয়ে থাকতে পারবেন না? যেভাবেই হোক, তাঁকে তৃণমূলে নাম লেখাতেই হবে। কোথাও টাকার লোভ দেখিয়ে টানা হবে। কোথাও হামলা হবে। কোথাও ভয় দেখিয়ে টানা হবে। যেভাবে সারা রাজ্যে দলবদল হচ্ছে।
মনোনয়ন দিতে গেলে আক্রান্ত হতে হচ্ছে। মনোনয়ন দেওয়ার পরে তুলে নিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যখন সেই সময় পেরিয়ে গেল, তখন বিরোধী প্রার্থীদের জোর করে তৃণমূলের মিছিলে হাঁটানো হচ্ছে। ভোটের দিন কী হবে, বোঝাই যায়। তারপরেও যদি বিরোধীদের কেউ জিতে যান, তাঁরও নিস্তার নেই। কী কী হবে, আগাম যেন দিকনির্দেশ দিয়ে দিচ্ছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।
এরকম ‘অনুপ্রেরণা’ জেলায় জেলায় মাতব্বররা তো নিজেদের নম্বর বাড়ানোর চেষ্টা করবেই। ভেবে দেখুন তো, এরকম যদি জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা বলতেন! ওই একটা মন্তব্য নিয়ে কত ঝড় বয়ে যেত। কিন্তু এক্ষেত্রে এমন একটা মারাত্মক মন্তব্য শিরোনামে আনার সৎসাহস দেখানো গেল না।
এরপরেও কেউ কেউ বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী হিংসা চাইছেন না। স্থানীয় কিছু লোক অতি উৎসাহে করে ফেলছেন। কী চমৎকার ব্যাখ্যা! এই অতি উৎসাহের উৎসটা কী? এই জাতীয় হুঙ্কার কি সেই অতি উৎসাহীদের আরও একটু অতি–অতি–অতি উৎসাহিত করে না?
এমন একটি মারাত্মক কথা। মামলায় কাজে লাগতে পারে, প্রচারে কাজে লাগতে পারে। কিন্তু বিরোধীরা নিশ্চিতভাবেই রেকর্ড করে রাখেননি। তাঁরা সেই ভাঙা রেকর্ডই বাজিয়ে যাবেন।