রজত সেনগুপ্ত
মুর্শিদাবাদ দখলে উঠেপড়ে লেগেছিল তৃণমূল। তাই ভোটের আগেই জেলা পরিষদ দখল হয়ে গেল। বাঁকুড়া, বীরভূমের সঙ্গে মুর্শিদাবাদও এসে গেল সেই তালিকায়। তবু নিশ্চিন্ত থাকা যাচ্ছে না। যেসব আসনে ভোট হবে, সেখানে জয় আসবে তো! মুর্শিদাবাদ দখলে বারবার শুভেন্দু অধিকারীকেই এগিয়ে দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। এ অনেকটা শত্রুকে দিয়ে বাঘ মারতে পাঠানোর মতো। হয় বাঘ মরবে, নয়তো শত্রু।
শুভেন্দু হুঙ্কার দিয়ে এসেছেন, লোকসভাতেও বহরমপুরে তৃণমূলই জিতবে। অধীরকে যেতে হবে বিজেপি–তে। জাতীয় রাজনীতির নানা বাধ্যবাধকতা আছে। সেই বাধ্যবাধকতায় মমতাকে দরকার সোনিয়ার। তাই কংগ্রেস ও তৃণমূল ফের কাছাকাছি আসতেই পারে। তখন অধীরের থেকেও মমতাকে তুষ্ট রাখা হাইকমান্ডের প্রথম কাজ হয়ে দাঁড়াবে। দিল্লির সমর্থন না পেয়ে পেয়ে অধীর একসময় হতাশ হয়ে পড়তেই পারেন। নিজের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে বিজেপিতে গেলেও যেতে পারেন। আগামী দিনে সত্যিই যদি এমন ছবিটা দেখা যায়, অবাক হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু শুভেন্দু কি নিশ্চিত করে বলতে পারেন, তিনি বিজেপি–তে যাবেন না? যাঁরা রাজনীতির অল্প বিস্তর খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা জানেন বিজেপি–র সঙ্গে তাঁদের কথাবার্তা কতদূর এগিয়েছিল। তিনি আজ যোগ দিচ্ছেন নাকি কাল, এই ছিল রাজ্য রাজনীতির আলোচ্য বিষয়। শোনা যায়, বছর তিন আগে, তিনি নাকি অমিত শাহর সভায় যোগ দেবেন বলে রওনাও হয়ে গিয়েছিলেন। কোনও একটি বিশেষ কারণে মাঝপথ থেকে ফিরে যেতে হয়েছিল।
আবার সেই পরিস্থিতি আসতেই পারে। মমতা শুভেন্দুকে কতখানি ‘স্নেহ’ করেন, সেটা শুভেন্দু নিজে সবথেকে ভাল জানেন। কেন তাঁকে লোকসভা থেকে সরিয়ে আনা হল, সেটা শুভেন্দু বেশ ভাল জানেন। অভিষেকের নেতৃত্ব মেনে যদি শুভেন্দুকে চলতে হয়, সেটা তাঁর পক্ষে খুব সম্মানজনক হবে? এখন মালদা দখল করতে হবে, মুর্শিদাবাদ দখল করতে হবে, তাই এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে কী অবস্থা হবে, সেটা সময়ই বলবে। সহজ কথা, শুভেন্দুর পথেও ফুলের পাপড়ি ছড়ানো নেই। কখন চিত্রনাট্য কোনদিকে বাঁক নেবে, কেউ জানে না।
সেদিন শুভেন্দুকেও হয়ত অন্য আশ্রয় খুঁজতে হবে। কে বলতে পারে, সেদিন অধীর আর শুভেন্দু হয়ত পাশাপাশি বসে সভা করবেন।