সরল বিশ্বাস
গত কয়েকদিনে ভিক্টরকে নিয়ে বেঙ্গল টাইমসের লেখাটি রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছে। কত পোর্টালে ভিন্ন নামে ছড়িয়ে গেছে। ফেসবুকের কত দেওয়ালে ছড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে একটা ইতিবাচক দিকও আছে। লেখাটি মনোগ্রাহী হয়েছে বলেই অনেকে নিজের ওয়ালে নিয়েছেন, শেয়ার করেছেন। বেশ করেছেন।
আসল কথা হল, ঠিকঠাক লড়াইটা ফিরিয়ে দিতে পারলে মানুষ মনে রাখে। মানুষ তাকে কুর্নিশ জানায়। সেই লড়াইটা ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন আলি ইমরান (ভিক্টর)। রাজ্যে একটি মাত্র ব্লক যেখানে সমস্ত আসনে বামেরা প্রার্থী দিতে পেরেছেন। তৃণমূল হঠাৎ খুব উদার হয়ে গেল, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং, এই মুহূর্তে যে কয়েকটি কেন্দ্রে শাসকদল সর্বশক্তি দিয়ে ঝাপাচ্ছে, সেই তালিকায় অবশ্যই সামনের দিকে চাকুলিয়া। মন্ত্রীরা বারবার হুঙ্কার দিয়ে এসেছেন, চাকুলিয়াকে বিরোধীশূন্য করব। ফরওয়ার্ড ব্লককে একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনব। কিন্তু দেখা গেল, সেখানে সব আসনে প্রার্থী দিল বামেরা।
কীভাবে সব আসনে লড়াই করা সম্ভব হল, সেটা আগের প্রতিবেদনে বিস্তারিত লেখা হয়েছে। অনেকেই জানেন (এই প্রতিবেদনের নিচে আবার সেই লিঙ্ক দেওয়া আছে। যাঁরা পড়েননি, ফের পড়ে নিতে পারেন)। হ্যাঁ, শাসক যে ভাষাটা বোঝে, সেই ভাষাতেই জবাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটাই একমাত্র কারণ নয়। অনেক দিন ধরে তলায় তলায় প্রস্তুতিটাও ছিল। মনে রাখবেন, এটিই একমাত্র বিধানসভা কেন্দ্র যেখানে শতকরা একশোভাগ আসনেই বাম ঐক্য হয়েছে। কোন আসনে সিপিএম লড়বে, কোন আসনে ফরওয়ার্ড ব্লক লড়বে, অনেক আগে থেকেই তা নিয়ে আলোচনা চলেছে। তখনও সংরক্ষণ তালিকা ঘোষণা হয়নি। কোন আসন তফশিলি, কোন আসন মহিলা, কিছুই জানা যায়নি। তবু তলায় তলায় প্রস্তুতি ছিল। জেনারেল আসন হলে কে দাঁড়াবেন, রিজার্ভ হলে কে দাঁড়াবেন, মহিলা হলে কে দাঁড়াবেন, অনেকদিন আগে থেকেই আলোচনা চলছিল। এমনকী রাম যদি শেষমুহূর্তে কোনও কারণে সরে যান, বিকল্প হিসেবে শ্যামের নামটাও ভাবাই ছিল। রাজ্যের আর কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে এই প্রস্তুতি ছিল?
অধিকাংশ জেলায় ব্লক স্তরে তো দূরের কথা, জেলাস্তরেও ঠিকঠাক বাম সমন্বয় বৈঠকটাই করা যায়নি। তাই ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই অজুহাতের মিছিল। ‘আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। ’ এরকম একটা কোরাস শোনা গিয়েছিল। প্রশ্ন হল, প্রস্তুত ছিলেন না কেন? সারা বছর ধরে কী এমন মহান কাজটা করছিলেন যে, কাকে কোথায় প্রার্থী করা হবে, সেটা ভেবে উঠতেও পারেননি? প্রার্থী দিতে পারুন বা নাই পারুন, অন্তত ভাবনাটা তো থাকবে। সেটাকে রূপায়ণ করার সাধ্যমতো চেষ্টা তো থাকবে।
তাই চাকুলিয়ার এই সাফল্য, ভিক্টরের এই সাফল্য চোখে আঙুল দিয়ে অনেক কিছু দেখিয়ে দিল। চাপ দিয়ে এত এত জায়গায় নমিনেশন তুলিয়ে নেওয়া গেল। কই, চাকুলিয়ায় তো গেল না! কারণ, চাপ এলে পাল্টা চাপের চিত্রনাট্যটা তৈরি ছিল। সেটা আর কেউ না বুঝুক, স্থানীয় তৃণমূল হাড়ে হাড়ে বোঝে। প্রশাসনও হাড়ে হাড়ে বোঝে। সহজ কথা, প্রস্তুতি ছিল। সারাবছর ধরে লড়াইয়ের ধারাবাহিকতা ছিল। পায়ের তলায় একটা শক্ত মাটি ছিল। লড়াইয়ের মতো সাহস ছিল। সর্বোপরি, লড়াইয়ের জন্য বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্ব ছিল। সবকিছুর সমন্বয়েই সব আসনে প্রার্থী দেওয়া গেছে। এবং লিখে রাখুন, অন্তত এই একটি পঞ্চায়েত সমিতি বামেরাই জিতবে।
এই লড়াই থেকে অনুপ্রেরণা নিতে আলিমুদ্দিন কি তৈরি আছে?
*********
বেঙ্গল টাইমসে প্রকাশিত আগের লেখার লিঙ্ক:
https://www.bengaltimes.in/21127-2/