স্বরূপ গোস্বামী
কী বেরিয়ে আসতে পারে এই রায় থেকে?
১) মনোনয়নের জন্য আরও একদিন বা দুদিন সময় বাড়ানো হতে পারে।
২) ভোট পিছিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
৩) শুধু ব্লক অফিস নয়, প্রয়োজনে এসডিও অফিস বা জেলাশাসকের অফিসেও মনোনয়নের ব্যবস্থা হতে পারে।
৪) পুলিশ প্রশাসনকে বলা হতে পারে, কেউ যদি মনোনয়ন দিতে চায়, তা নিশ্চিত করতে।
৫) বিনা লড়াইয়ে যে সব কেন্দ্রে জয় এসেছে, সেগুলি বাতিল হতে পারে। নতুন করে মনোনয়নের সুযোগ দেওয়া হতে পারে।
ধরে নেওয়াই যায়, এগুলি সরকারের পছন্দ হবে না। বিষয়টিকে ইগোর জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এই সরকারের জুড়ি নেই। নিশ্চিতভাবেই তারা ডিভিশন বেঞ্চে যাবে।
গত কয়েকদিন যথেষ্ট ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা দেখিয়েছেন মাননীয় বিচারপতি। সব পক্ষকে নিজেদের দাবি তুলে ধরার পর্যাপ্ত সময় দিয়েছেন। এমনকী ঘণ্টার পর ঘণ্টা কল্যাণ ব্যানার্জির যুক্তিহীন–অবান্তর কথাও শুনে যেতে হয়েছে। কে কী যুক্তি তুলে ধরলেন, সে বিষয়ে না ঢুকেও কতগুলো বিষয় পরিষ্কার।
১) নির্বাচন কমিশন যে স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারেনি, এটা নিয়ে কোনও দ্বিমত থাকার কথা নয়। এই কমিশনের ওপর পুরোপুরি ভরসা রাখা যে যায় না, তাও পরিষ্কার।
২) মনোনয়নে হিংসা কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। স্থানীয় গন্ডগোলও নয়। এমন কোনও জেলা নেই, যেখানে এই হাঙ্গামা ঘটেনি। সব জেলার অর্ধেকের ওপর ব্লকে সন্ত্রাসের ছবিটা পরিষ্কার। যেসব জায়গায় আগে কোনওদিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয় হয়নি, সেইসব ব্লকও কার্যত বিরোধীহীন করে তোলা হয়েছে।
৩) বিরোধী প্রার্থীরা ও সমর্থকরা খোদ ব্লক অফিসেই আক্রান্ত। পুলিশ নির্বিকার। এমনকী জেলাশাসকের অফিসেও তাণ্ডব চালিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। তারপরেও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
৪) বাসুদেব আচারিয়া, রামচন্দ্র ডোমদের মতো দীর্ঘদিনের সাংসদরাও আক্রান্ত। সুজন চক্রবর্তী, অমিয় পাত্র, বিশ্বনাথ কারকের মতো নেতারাও আক্রান্ত। অনেকক্ষেত্রে টিভিতেই পরিষ্কার দেখা গেছে। মহিলা প্রার্থীকে চুলের মুঠি ধরে কীভাবে মারধর করা হচ্ছে, তা ভাইরাল হয়ে গেছে।
৫) প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে মন্ত্রীরা, শাসক দলের সাংসদ–বিধায়করা উস্কে গেছেন। আরও প্ররোচনা দিয়ে গেছেন। নির্বাচন কমিশনারের বাড়িতে গিয়েও শাসিয়ে এসেছেন।
৬) অনেক সাংবাদিকও ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত। প্রতিবাদে রাজপথে মিছিলে নামতে হয়েছে সাংবাদিকদেরও।
৭) স্বনামধন্য অনুব্রত। দিনের পর দিন হুমকি চালিয়ে গেছেন। ৪২ এর মধ্যে ৪১ জেলা পরিষদে প্রার্থী হতেই দিলেন না। যদিও বা একজন হয়েছিলেন, প্রকাশ্যেই হুমকি দেওয়া হল তাঁকে। দেখা গেল, তিনিও তুলে নিলেন।
৮) এতকিছুর পরেও মুখ্যমন্ত্রী কোনও ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, উল্টে দুর্বৃত্তদের হয়ে সাফাই গাইলেন। নিজে সমস্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব ভুলে গিয়ে আক্রমণ করলেন বিরোধীদের।
এগুলো কোনওটাই অভিযোগ নয়। প্রায় সবগুলোই ঘটেছে দিনের আলোয়, একেবারে প্রকাশ্যে।
এরপরেও বিচারপতি শুধু মনোনয়নের দিন বাড়িয়ে বা ভোটের দিন পিছিয়েই ক্ষান্ত থাকবেন?
যে নির্বাচন কমিশন কার্যত পুতুলের মতো আচরণ করছে। যে প্রশাসন চক্ষুলজ্জাটুকুও বিসর্জন দিয়েছে, তাঁদের ন্যূনতম ভর্ৎসনাটুকুও করবেন না? তাই বিচারপতির কাছে আবেদন, শুধু ভোট পেছনো নয়। আরও তীব্র হোক আপনার রায়। রাজ্য প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন যে চূড়ান্ত অপদার্থতার পরিচয় দিয়েছে, এই কড়া বার্তাও আপনার রায়ে উঠে আসুক। অন্তত আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা যেন থাকে, তা আপনাকেই সুনিশ্চিত করতে হবে।