সেই হরিদয়ালকে মনে পড়ে?‌

সরল বিশ্বাস

সেই হরিদয়াল রায়কে মনে পড়ে?‌ এতদিনে আপনি নিশ্চয় ভুলে গেছেন। এতদিনেই বা বলি কী করে?‌ দিন সাতেক আগেও তো সেই কীর্তিমান শিক্ষককে নিয়ে কত লেখালেখি!‌ ফেডারেল ফ্রন্ট, রামনবমী, বল বিকৃতি–‌এসব নিয়ে মাথা ঘামাতে গিয়ে সব ঘেঁটে গেছে, তাই তো?‌ এখন আর ময়নাগুড়ির সেই প্রধান শিক্ষককে মনেই পড়ে না।

এভাবেই আমাদের স্মৃতি থেকে কত কিছু হারিয়ে যায়। একেকদিনে নতুন নতুন কাণ্ড। পুরানো সবকিছুকে ঢেকে দিয়ে যায়। সেই হরিদয়ালের কী হল?‌ অনেকদিন তাঁর ছবি নেই। খবর নেই। তাঁকে নিয়ে বিবৃতি নেই। তিনি কোথায়, হদিশ নেই। শোনা যায়, ময়নাগুড়িতে এখনও ফেরেননি। শোনা যায়, কলকাতাতেই আছেন। যেখানে যেখানে যাওয়ার দরকার, নিশ্চয় দরবার করছেন।

না, তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়নি। গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাঁর শিক্ষারত্ন ফিরিয়ে নেওয়াও হয়নি। উল্টে তাঁর হয়ে কদিন আগে ময়নাগুড়িতে মিছিল হয়ে গেল। ভাবতে অবাক লাগে, এখনও, সবকিছু জানাজানি হওয়ার পরেও এই হরিদয়ালের হয়ে মিছিল করার লোক পাওয়া যায়!‌ যায় বৈকি। অনুপ্রেরণা বড় সাংঘাতিক জিনিস।

haridayal

তাঁকে নাকি মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ডেকে পাঠিয়েছিল। পর্ষদ সভাপতি দীর্ঘ কথা বলেছেন। এবার সভাপতি ছুটেছেন শিক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে। শিক্ষামন্ত্রীও নাকি দীর্ঘ সময় ধরে পর্ষদ সভাপতির কথা শুনেছেন। তারপর কী হল?‌ না, কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি। কারণ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার না তো পর্ষদ সভাপতির আছে, না আছে শিক্ষামন্ত্রীর। যিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে ‘‌ফেডারেল ফ্রন্ট’‌ ‘‌ফেডারেল ফ্রন্ট’ করে হিল্লি–‌দিল্লি ছুটে বেড়াচ্ছেন, তিনি যতক্ষণ না বলবেন, ততক্ষণ কোনও সিদ্ধান্তই হবে না। মাধ্যমিক পেরিয়ে গেছে। লোকের স্মৃতি থেকেও হারিয়ে গেছে। তাঁর এখন এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কোথায়?‌

পর্ষদ সভাপতি অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছে অনেক কথা শুনেছেন। শিক্ষামন্ত্রী শুনেছেন পর্ষদ সভাপতির কাছে। কিন্তু এসব কোনওকিছুই কি শোনার সময় হবে মুখ্যমন্ত্রীর?‌ এত সময়ও নেই। আর এত ধৈর্যও নেই। শিক্ষামন্ত্রী আমতা আমতা করে দু’‌লাইন বলার আগেই তিনি থামিয়ে দেবেন। হয় বলবেন, এখনও গ্রেপ্তার করেননি কেন?‌ এটাও কি আমাকে বলে দিতে হবে?‌ ‌অথবা বলবেন, এসব নিয়ে মাতামাতি করার কী আছে?‌ সিপিএমের খেয়েদেয়ে কাজ নেই, তাই কুৎসা করে বেড়াচ্ছে। এসবকে একদম পাত্তা দেওয়ার দরকার নেই। দু একজনকে প্রশ্ন বলেছে তো কী হয়েছে?‌

যদি প্রথমটা বলেন, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় গ্রেপ্তার বা সাসপেন্ড হয়ে যাবে। আর যদি দ্বিতীয়টা হয়, তাহলে ধামাচাপা পড়ে যাবে। তাহলে, এত ঘটা করে তদন্ত তদন্ত খেলার দরকার কী?‌ শোনা যাচ্ছে নাকি সেই ছাত্র ও তার পরিবারকে ডেকে পাঠানো হবে। এসব প্রহসনের দরকার কী?‌ সিদ্ধান্ত যখন একজনই নেবেন এবং কোনও কিছু না শুনেই নেবেন, তখন এসব সস্তার নাটক আর নাইবা করলেন।

এভাবেই একটার পর একটা নতুন নতুন কাণ্ড ঘটে। একের পর এক হরিদয়ালরা নিস্তার পেয়ে যান। আর যদি কমিটি হয়, তাহলে তো আর দেখতে হচ্ছে না। ধামাচাপা দেওয়ার সুন্দর একটা প্রতিশব্দ হল ‘‌কমিটি’‌। আমাদের স্মৃতি সত্যিই দুর্বল। সে তিন দিন আগের কথাও বেমালুম ভুলে যায়।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.