খোলা চিঠি, দেবকে
সৌম্যজিৎ চৌধুরি
আপনার অনেক অনুরাগীদের মধ্যে আমিও একজন। আপনার অধিকাংশ ছবিই আমি দেখেছি। সবগুলোই টাটকা দেখেছি, এমন নয়। কোনও কোনও ছবি পরে টিভিতেও দেখেছি। আমার বন্ধুরা সবাই জানে, আমি দেবের ভক্ত। অনেকে রাগায়। আপনার নামে নানা কার্টুন তৈরি করে পাঠায়। আগে রেগে যেতাম। এখন আর রাগি না। বরং, আপনার প্রতি আমার ভালবাসা বেড়েই চলে।
এই খোলা চিঠি অভিনেতা দেবকে নয়। প্রযোজক দেবকে। আপনাকে সত্যিই ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে। কাগজে দেখখাম, সুবাসিনী মিস্ত্রীকে নিয়ে বায়োপিক হচ্ছে। আর এই ছবির প্রযোজক আপনি।
হিন্দিতে অনেক বায়োপিক হয়েছে, হচ্ছে। কিন্তু বাংলায় এই বায়োপিক তেমন নেই। মৃত মানুষদের নিয়ে অনেক ছবি হয়েছে। কিন্তু একজন মানুষের সারাজীবনের লড়াই নিয়ে তারই জীবদ্দশায় তেমন ছবি হয়নি। হলেও সেভাবে প্রচার পায়নি। ফলে, মানুষের কাছে পৌঁছয়নি।
সুবাসিনীদেবীর লড়াইয়ের কথা আগেও শুনেছি। ২৪ ঘণ্টা একবার তাঁকে অনন্য সম্মান দিয়েছিল। তারপর থেকেই বিভিন্ন সময়ে তাঁকে নিয়ে কয়েকটি লেখাও পড়েছি। এবার পদ্মশ্রী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ায় বেশ ভাল লেগেছিল। গতবছর পেয়েছিলেন জলপাইগুড়ির অ্যাম্বুলেন্স দাদা করিমুল হক। এবার পাচ্ছেন ‘সবজি মাসি’ সুবাসিনী মিস্ত্রী। এই সব মানুষদেরই তো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া উচিত, এইসব মানুষকে দেখেই লড়াই করার প্রেরণা পাওয়া যায়।
ভাবলেও অবাক লাগে, একজন মহিলার কী লড়াকু জীবন! স্বামী মারা গেলেন বিনা চিকিৎসায়। জীবনযুদ্ধে নেমে পড়লেন সুবাসিনী। সবজির ঝুড়ি নিয়ে বসতে লাগলেন বাজারে। মনের মধ্যে স্বপ্ন পুষে রেখেছিলেন, একদিন এই সবজি বিক্রি করেই হাসপাতাল বানাবেন। বিনা খরচে সেখানে সবার চিকিৎসা করাবেন। আর কাউকে বিনা চিকিৎসায় মরতে দেবেন না। স্বপ্ন দেখার পক্ষে ভাল। তাই বলে এটা বাস্তবে করে দেখানো সম্ভব? অনেকেই হাসাহাসি করেছিলেন। সুবাসিনী কিন্তু হাল ছাড়েননি। সবজি বিক্রি করেই ছেলেকে ডাক্তারি পড়ালেন। ধীরে ধীরে সেই হাসপাতাল তৈরিও হল। লড়াইয়ের একটা বৃত্ত যেন সম্পূর্ণ হল।
কোনও কাল্পনিক কাহিনি নয়। ঠাকুরপুকুর গেলেই পাওয়া যাবে সুবাসিনীর সেই ‘হিউম্যানিটি হসপিটাল’। যেখানে বিনা খরচে গরিব মানুষের চিকিৎসা হয়। এমন লড়াকু মানুষদের নিয়েই তো সিনেমা হওয়া উচিত। ভাবতে ভাল লাগছে, সেই ছবির প্রযোজনা করতে আপনি এগিয়ে এসেছেন। বড় বড় প্রযোজক সংস্থাগুলি যখন হাত গুটিয়ে রইল, তখন আপনি এগিয়ে এলেন। এই ছবি হয়ত বাণিজ্যিকভাবে সফল নাও হতে পারে। অনেক ক্ষতির আশঙ্কা। তা সত্ত্বেও আপনি এগিয়ে এলেন। আপনার প্রতি গর্ব অনেকটাই বেড়ে গেল।