রক্তিম মিত্র
কয়েকদিন ধরেই প্রশ্নটা ভেসে আসছে। বাংলায় এমন মিছিল হলে কী হত? এই সুযোগে বামেদের চিমটি কাটার পর্বও চলছে। বামেরা এখানে কি আদৌ এমন মিছিল করতে পারত? প্রশ্নের পর নিজেরাই উত্তর ছুঁড়ে দিচ্ছেন, দলটাই তো সাইনবোর্ড হয়ে গেছে। সঙ্গে লোকই নেই।
একটা কথা দ্ব্যর্থহীনভাষায় বলা দরকার, এর থেকে ঢের বড় মিছিল এই বাংলায় হয়েছে। বামেরা ক্ষমতায় থাকার সময়ে হয়েছে। আবার বামেরা ক্ষমতায় না থাকাকালীনও হয়েছে। লোকসভায় আসন ২ এ নেমে যাওয়ার পরেও হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় জেলায় যে জাঠা বেরিয়েছিল, তার লোক সমাগম তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতোই। হ্যাঁ, এত শৃঙ্খলিতভাবে হয়ত হয়নি। বড় মিছিল হওয়ার পরেও মানুষের মনে সেভাবে রেখাপাত করেনি। সে অন্য প্রশ্ন।
একটু অন্যভাবে ভাবা যাক। যদি বিভিন্ন জেলা থেকে এরকম মিছিল আসত, সেই মিছিল কি আদৌ কলকাতায় ঢুকতে পারত? নবান্ন বা বিধানসভা তো দূরের কথা, সেই মিছিল গঙ্গা পেরোতে পারত? সাঁতরাগাছি আসার আগেই মিছিল আটকে দেওয়া হত। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা তেমনই। মহারাষ্ট্রে দেবেন্দ্র ফড়নবীশ যে গণতান্ত্রিক সৌজন্যের পরিচয় দিয়েছেন, বাংলায় মমতা ব্যানার্জি তা দিতেন? কৃষকদের বলা হত, ভাড়াটে গুন্ডা। বলা হত, বিজেপি লোক পাঠিয়েছে। বলা হত, টাকা দিয়ে লোক এনেছে। বলা হত, আমাকে খুন করার চক্রান্ত হয়েছিল। শতাধিক কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। একটি ক্ষেত্রেও তিনি স্বীকার করেননি। বিরোধীদের কুৎসা বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন। এক্ষেত্রেও কৃষকদের মিছিল শহরে ঢোকার আগেই লাঠি চালানো শুরু হয়ে যেত। আর তিনি একবার ‘গুন্ডা’ তকমা দিয়ে দিলে বশংবদ কাগজগুলিও সেই সুরেই গান গাইত। চ্যানেলগুলিতেও এই কৃষকদের হয়ত জঙ্গি হিসেবেই তুলে ধরা হত। তাঁর অনুপ্রেরণায় কী না হয়! জেলায় জেলায় খোঁজ নেওয়া হত কারা কারা সেই জাঠায় গিয়েছিল। তাদের বাড়িতে নানা উৎপাত শুরু হত।
চাপে পড়েই হোক বা পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতাতেই হোক, মহারাষ্ট্র সরকার যথেষ্ট উদারতার পরিচয় দিয়েছে। একথা স্বীকার করতেই হবে। রাজ্যের সাধারণ মানুষ থেকে মিডিয়া সবাই খুব সদর্থকভাবেই দেখেছেন এই সমাবেশকে। আমার আন্দোলনটাই আন্দোলন, আর বাকিদের আন্দোলন মানেই জঙ্গিপনা, এই মানসিকতা আমাদের শাসক দলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে আছে। এখানে চিটফান্ডে জড়িয়ে থাকা লোকেদের সমর্থনে বিশাল মিছিল বেরোয়, সেই মিছিলে টলি ও টেলি উডের তারকারা হাঁটেন। সেই শহরে কৃষকদের মিছিল! না, এমন মিছিল দেখার যোগ্যতাও বোধ হয় আমাদের নেই।