বিনয়ের কণ্ঠেও সেই গুরুংয়ের সুর

পাহাড়ে শান্তির কথা বলছিলেন বিনয় তামাং। কদিন যেতে না যেতেই মুখোশ খসে পড়ল। এখন হুঙ্কার ঝাড়ছেন, সাংসদ আলুয়ালিয়াকে পাহাড়ে উঠতে দেব না। কাকে খুশি করতে এই হুমকি?‌ ‘‌অনুপ্রেরণা’‌ সত্যিই বড় ভয়ঙ্কর জিনিস। লিখেছেন রক্তিম মিত্র।।

বিমল গুরুংয়ের ভূত আস্তে আস্তে ঘাড়ে চাপছে বিনয় তামাংয়ের। এবার তিনিও গুরুংয়ের ঢঙেই হুশিয়ারি দিতে শুরু করেছেন। তাঁর হুশিয়ারি, সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুয়ালিয়াকে দার্জিলিংয়ে উঠতে দেবেন না। তিনি পাহাড়ে উঠতে গেলেই তাঁর গাড়ি আটকানো হবে।
শিলিগুড়িতে তৈরি হয়েছে পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র। অনেকদিন ধরেই তার উদ্বোধন আটকে আছে। উদ্বোধন করতে আসার কথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ আলুয়ালিয়ার। তার আগেই হুমকি দিয়ে রাখলেন জিটিএ পরিচালন বোর্ডের চেয়ারম্যান।

binay tamang3
আলুয়ালিয়ার বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, পাহাড় যখন বন্‌ধ চলছিল, তখন সাংসদ কোথায় ছিলেন?‌ বন্‌ধের সময় যখন থাকেননি, তখন এখন আসার দরকার নেই।
বিনয়বাবুর যুক্তিটা বোঝা গেল। আসলে, মানুষ যখন তাঁবেদারি করতে শুরু করে, তখন সে সব বোধ–‌বুদ্ধি–‌যুক্তি হারিয়ে ফেলে। আলুয়ালিয়াকে হুশিয়ারি দেওয়া আসলে তৃণমূলের কাছে নিজের নম্বর আরও একটু বাড়িয়ে নেওয়া। বিজেপি–‌কে হুঙ্কার দিলে মুখ্যমন্ত্রী হয়ত খুশি হবেন, শুধুমাত্র এই অঙ্ক।

binay tamang2
বন্‌ধের সময় আলুয়ালিয়া না হয় আসেননি। কিন্তু বন্‌ধের সময় বিনয় তামাংয়ের ভূমিকা কী ছিল?‌ ১০০ দিনের বেশি বন্‌ধ চলেছে। পাহাড়ে হিংসা ছড়িয়েছে। বিনয় তামাং ছিলেন সেই হিংসা ছড়ানোর দলে। কে বন্‌ধ ডেকেছিল?‌ ঘটনাচক্রে এই বিনয় তামাং তখন মোর্চার আহ্বায়ক। যতদিন বন্‌ধ চলেছে, বিনয় তামাংয়ের মুখেও পাহাড়কে সচল করার ডাক শোনা যায়নি। বরং তিনি ছিলেন অচল করার রাস্তায়।
যখন বুঝলেন গুরুং কোণঠাসা, যখন রাজ্য সরকার ক্ষমতার ললিপপ ঝুলিয়ে দিল, তখনই ডিগবাজি খেলেন। হঠাৎ করে পাহাড়ে শান্তি চাইলেন। শান্তির দূত হয়ে উঠলেন। সরকারের তাঁবেদার হয়ে পাইয়ে দেওয়া চেয়ারে বসে পড়লেন। আলুয়ালিয়া তো তবু নির্বাচিত সাংসদ। বিনয় তামাং তো তাও নন। বিনয় তামাং এখন যে চেয়ারে বসেন, সেটা বিশ্বাসঘাতকতার পুরস্কার। তাই মাথার ওপর মমতা ব্যানার্জির ছবি টাঙিয়ে রাখতে হয়।
একদিকে বলছেন, শান্তিপূর্ণ পথে, আলোচনার মাধ্যমে পাহাড়ের উন্নয়ন করতে হবে। অন্যদিকে হুঙ্কার ছাড়ছেন, সাংসদকে পাহাড়ে উঠতে দেব না। দুটো তো একেবারেই পরস্পরবিরোধী। বোঝাই যাচ্ছে, বিশেষ কাউকে খুশি করতেই এই হুঙ্কার দিতে হচ্ছে।
সত্যিই, ‘‌অনুপ্রেরণা’‌ বড়ই সাঙ্ঘাতিক জিনিস।।

web-banner-strip

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.