নীলাচলে কীরীটী, প্রথমটা ঠিকঠাক, তারপরই গাঁজাখুরি

স্বনাম গুপ্ত

প্রথমেই অকপটে স্বীকার করে নেওয়া ভাল, নীহাররঞ্জন গুপ্তর কোনও উপন্যাসই আমি পড়িনি। স্বভাবতই কীরীটী রায়ও পড়িনি। তাই সাহিত্যের সঙ্গে সিনেমায় কী কী ফারাক, তালিকা দিতে পারব না। সিনেমাটাকে সিনেমা হিসেবেই দেখি। নীলাচলে কীরীটী দেখার পর তাই বোদ্ধার মতো বিশ্লেষণ করতেও পারব না। একেবারে সাধারণ দর্শক হিসেবে ভাল লাগা–‌মন্দ লাগা তুলে ধরতে পারি।

কেমন লাগল?‌ প্রধমার্ধটা ঠিকঠাক, বিশ্বাসযোগ্য। দ্বিতীয়ার্ধটা আস্ত গাঁজাখুরি। লাটাই থেকে অহেতুক সুতো ছাড়তে গিয়ে শেষমেশ ঘুড়ি সামলানো যায়নি। ভোকাট্টাই বলা যায়।

kiriti

‌‌উইকিপিডিয়ায় দেখলাম, লেখকের মৃত্যু ১৯৮৮ সালে। মানে, আজ থেকে তিরিশ বছর আগে। গল্পকে সিনেমার স্বার্থে পরিচালক কিছুটা আধুনিক করতেই পারেন। কিন্তু তাতে মূল সুরটাই যদি হারিয়ে যায়, তাহলে এটাকে সাহিত্যধর্মী না বলাই ভাল।

কোনও খুনের পেছনে নিদ্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য থাকে। সেই উদ্দেশ্যটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হয়। এখানে একজন তিন–‌তিনটে খুন করে ফেলল। কারণটা কী?‌ সে ছেলে থেকে মেয়ে হতে চায়। তার জন্য টাকা দরকার। আর সেই টাকার জন্যই তিন–‌তিনটে খুন!‌ সত্যি করে বলুন তো, নীহার রঞ্জন বাবুর সময় ছেলে থেকে মেয়ে হওয়ার এই হুজুগটা ছিল?‌ বাঙালি ব্যকরণ ছাড়া কোথায় লিঙ্গ পরিবর্তন করেছে?‌ মাইকেল জ্যাকসনের পর ব্যাপারটা প্রচারে এল?‌ আরও প্রচারে এল ঋতুপর্ণ ঘোষের একটা সিনেমা ও সেই সংক্রান্ত কিছু আলোচনায়। কিন্তু নীহার রঞ্জন গুপ্তর সময় নিশ্চিতভাবেই এমনটা ছিল না। তাহলে এই জাতীয় কারণ টেনে আনতে হল কেন?‌ কদিন আগে হলদে গোলাপ লিখে স্বপ্নময় চক্রবর্তী আনন্দ পুরস্কার পেয়েছিলেন। পরিচালক কি এমন বিষয়টা এনে চমক দিতে চেয়েছেন?‌ দিতেই পারেন। তার জন্য কীরীটী রায় কেন?‌

kiriti2

ছবিটার আগাগোড়া মোবাইল। টাওয়ার লোকেশান থেকে শুরু করে আই ফোন সিক্স। যত্রতত্র মোবাইলের ব্যবহার। কই ফেলুদা বা ব্যোমকেশ করতে গিয়ে তো মোবাইলের এত ফিরিস্তি ঢোকাতে হয়নি। জোর করে আধুনিক করা কি খুব জরুরি?‌

একটা খুন হল, তার কিনারা হল, বোঝা যায়। এখানে যেন পাইকারি হারে খুন হয়েই চলেছে। একটা ছাড়া কোনও খুনটাই ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়। যেন খুন করতে হবে, সংখ্যায় বাড়াতে হবে, এটাই উদ্দেশ্য। অহেতুক জট পাকানো হয়েছে। উপকাহিনির ভিড়ে কাহিনি হারিয়ে গেছে। গোয়েন্দা গল্প মানেই অহেতুক জটিল করার একটা প্রবণতা চলে এসেছে। অঞ্জন দত্ত নাকি অরিন্দম শীল, কে আগে এনেছেন, বলা মুশকিল। তবে রোগটা ভারী ছোঁয়াচে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এতই যদি জট পাকানোর ইচ্ছে হয়, নিজেরা গপ্প লিখুন, সিনেমা বানান। এই সব চরিত্রগুলোকে নাই বা টেনে আনলেন!‌

 

(এখানেই শেষ নয়। ছবিটি নিয়ে আরও একাধিক লেখা থাকতেই পারে। আপনারাও যদি দেখে থাকেন, নিজেদের মতামত তুলে ধরতে পারেন। নানা আঙ্গিক, নানা মত উঠে আসুক। লেখা পাঠানোর ঠিকানা:‌ bengaltimes.in@gmail.com)

book-banner-strip

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.