সংহিতা বারুই
২০০৬ সালে শেষবার বইমেলা হয়েছিল ময়দানে। সেবার বইয়ের বিক্রি কত ছিল? গিল্ডের হিসেব থেকেই জানা যাচ্ছে, সেবার কুড়ি কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছিল।
তখন যে বইয়ের দাম ছিল পঞ্চাশ টাকা, সেই বই এখন পাওয়া যায় দুশো টাকায়। সেদিন যেটা সত্তর টাকা, আজ সেটা প্রায় তিনশো। সবমিলিয়ে চার গুণ থেকে পাঁচগুণ বেড়ে গেছে বইয়ের দাম। বই কেনার অনুপাত যদি সমান থাকে, তাহলে তো এই অঙ্কটা নিদেনপক্ষে আশি কোটিতে পৌঁছে যাওয়ার কথা। নিদেনপক্ষে ষাট কোটি।
কিন্তু এবারের বিক্রি কত? গিল্ডের হিসেব, ১৭ কোটি। যেখানে সত্তর কোটি হওয়ার কথা, সেখানে সতেরো কোটি! সেভেনটির জায়গায় সেভেনটিন! পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, মানুষের বই কেনার বা বই পড়ার অভ্যেস কমে আসছে। যদিও অন্যরকম ব্যাখ্যাও আছে। ১) অনেকে অনলাইনে বই কিনে নিচ্ছেন, ফলে তাঁরা আর বইমেলায় আসছেন না। ২) নেটে অনেক বই সহজে পাওয়া যাচ্ছে, ফলে কেনার দরকার পড়ছে না। ৩) জেলায় জেলায় বইমেলা হচ্ছে। সেখানে পছন্দের বই কিনে নিচ্ছেন অনেকেই। তাঁরাও আর কলকাতামুখী হচ্ছেন না। ৪) হাওড়া বা শিয়ালদার যাত্রীদের পক্ষে মিলনমেলা বা সল্টলেক আসা মুশকিল। ফলে, ময়দানে হলে যে সাড়া পাওয়া যেত, সল্টলেকে সেই মানুষের সমাগম হচ্ছে না।
কিন্তু মোটের ওপর বই পড়ার অভ্যেস কমেছে। অনেকেই দায়ী করছেন মোবাইল নামক যন্ত্রটিকে। স্মার্টফোনের জমানায় সেই ধৈর্য কোথায়? এমনকী বইমেলায় এসেও একটা বিরাট অংশের মানুষ ব্যস্ত রয়েছেন সেলফি তোলায়। ভিড় বেড়েছে ফুড কোর্টে। বইয়ের বিক্রি যত না হয়েছে, খাওয়ার দোকানের লাইনটা বোধ হয় তার থেকে বেশিই ছিল। সবমিলিয়ে পরিসংখ্যান মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়।