রক্তিম মিত্র
দিন তিনেক আগে কাগজে ছোট্ট একটা খবর। অনেক খবরের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার মতোই। মুকুল রায় নাকি দেখা করেছেন কিরেন রিজিজুর সঙ্গে। কে এই কিরেন রিজিজু? অরুণাচল থেকে নির্বাচিত, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী।
হায় রে! মুকুল রায়ের এ কী দশা! অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করেন। মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন। যখন তখন রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে চা খেয়ে আসেন। তিনি কিনা দরবার করলেন রিজিজুর কাছে? রাজনাথ সিংয়ের সময় হল না? পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র নেই, বিরোধীদের আক্রমণ করা হচ্ছে, ফোন ট্যাপিং হচ্ছে— এসব অভিযোগ তিনি কিনা জানিয়ে এলেন রিজিজুর কাছে। আর লোক পেলেন না?
পরে জানা গেল, টেলিফোন ট্যাপিং নিয়ে নাকি তদন্ত হবে। এখনই বলে দেওয়া যায়, তদন্তের গতিপ্রকৃতি কী হবে। তাঁর ফোন ট্যাপিং হচ্ছে, মুকুল রায়ের এই অভিযোগ মোটেই উড়িয়ে দেওয়ার নয়। তাঁর দাবি, প্রতিটি মন্ত্রীর ফোন নাকি ট্যাপ হয়। মন্ত্রীরা আতঙ্কে আছেন। এটাও উড়িয়ে দেওয়ার মতো অভিযোগ নয়। প্রমাণ করা কঠিন। তবে বিশ্বাস করা মোটেই কঠিন নয়। অতীতের নানা ঘটনাপ্রবাহ বলছে, এমনটা হতেই পারে। এবং হওয়াটাই অত্যন্ত স্বাভাবিক।সবিনয়ে জানতে ইচ্ছে করে, এই ট্যাপিংয়ের প্রবণতা কি হঠাৎ করে শুরু হয়েছে ? কয়েক বছর আগে থেকেই কি এই রেওয়াজ চলছে না? একসময় মুকুল রায়ের কথাতেই নাকি পুলিশ চলত? এমন ট্যাপিংয়ের রিপোর্ট কি তাঁর কাছেও পৌঁছত না? সেই ট্যাপিংয়ের কথা অন্তত স্বীকার করুন। তাহলে, এখনকার অভিযোগটা আরও বিশ্বাসযোগ্য হবে।
এই অভিযোগের কী হিল্লে হবে? রাজনাথ সিং যতই আশ্বাস দিন, পর্বতের মূষিক প্রসব ছাড়া কিছু হওয়ার নেই। ধরা যাক, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তদন্তে ধরা পড়ল, মুকুল রায়ের ফোন ট্যাপ হত। ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা। স্বীকার করার সৎসাহসটুকু দেখাতে পারবেন রাজনাথ সিং? নিন্দা করা তো অনেক দূরের কথা। পাছে অন্য কেউ রেগে যান, তাই রাজনাথ দেখা করার সাহসও পাননি। ভিড়িয়ে দিয়েছেন কিরেন রিজিজুকে। সেই তিনি ফোন ট্যাপিংয়ের অভিযোগ করবেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে? যদি পুলিশ ট্যাপিং করেও থাকে, সেটা নিশ্চয় ‘অনুপ্রেরণা’ ছাড়া সম্ভব হয়নি। কার অনুপ্রেরণা? তাঁকে ঘাটানোর ক্ষমতা অন্তত রাজনাথ সিংয়ের নেই।