অজয় কুমার
উফ, কেষ্টাকে নিয়ে আর পারা গেল না। একের পর এক কাণ্ড করেই চলেছে। আর মিডিয়াও হয়েছে তেমনি, সব ব্যাটাকে ছেড়ে কেষ্টা ব্যাটাকেই ধর।
কখনও বলছেন বোমা মারব। সেই শুরু। সেই ওঁকে সবাই চিনতে শিখল। খ্যাতি একবার এসে গেল যা হয়! সেই খ্যাতি ধরে রাখা এক বিরাট সমস্যা। কত লোক দারুণ শুরু করে। পরে ধারাবাহিকতা হারিয়ে যায়। সে নিজেও হারিয়ে যায়। জীবনের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি। তারপর সারা জীবনে আর কোনও সেঞ্চুরি নেই। ভারতীয় ক্রিকেটে এমন নজির ভুরি ভুরি। আমাদের কেষ্টবাবু মোটেই তেমন নন। তাঁর ধারাবাহিকতা দেখার মতো। তাই এত জেলায় এত সিন্ডিকেট, এত দাপাদাপি, এত গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। আজ উপাচার্য পালাচ্ছে। তো কাল কোনও মালিক শিল্প গুটিয়ে পালাচ্ছে। এতকিছুর মাঝেও কেষ্টবাবু কিন্তু ঠিক শিরোনামে চলে আসছেন। দিদির লন্ডন সফরকে ছাপিয়ে কেষ্টবাবুর কথাই ঘুরছে মুখে মুখে। দিদি স্বয়ং যা পারেন না, তাঁর অনুপ্রেরণায় কেষ্টবাবু তা আরও ভাল পারেন।
অবলীলায় বলে দিতে পারেন, ওসব মান্নান–ফান্নান চিনি না। আবার এলে পা ভেঙে দেব। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশবাবু সম্পর্কেও প্রায় একইরকম দাওয়াই। তাঁর অপরাধ কী? তিনি টুপি পরে এসেছিলেন। সহজ কথা, কে আসবে, কোথায় আসবে, কী পোশাক পরে আসবে, সব আগাম কেষ্টবাবুর পার্মিশন নিয়ে আসতে হবে। এসে বলতে হবে, কেষ্টবাবুর অনুপ্রেরণায় আমরা এই প্রতিবাদ সভা করছি।
পুলিশকেও কী অবলীলায় হুমকি দিতে পারেন। তিন ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। ধরে আনুন। নইলে সব বাড়ি জ্বালিয়ে দেব। কী করতে হয়, আমি বুঝে নেব। আমাদের পুলিশ কী নিষ্ঠা সহকারে সেসব শুনল। দন্ত বিগলিত করে কার্যত ‘ইয়েস স্যার, ইয়েস স্যার’ করে গেল। একঝাঁক মিডিয়ার সামনে তিনি অবলীলায় ডিএসপি–কে নির্দেশ দিতে পারেন। কোথাও কোনও প্রতিবাদ নেই। স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী ও দলের মহাসচিব বলেন, কেন বলেছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতটা বুঝতে হবে। এরপর পাশে থাকা আর কাকে বলে? স্তাবক মিডিয়া যাই বুঝুক, আসল সারসত্যটা কেষ্টবাবু ঠিক বুঝেছেন। তাই বলতে পারেন, দল আমার পাশেই আছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, সিন্ডিকেট চলবে না। কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না। পুলিশও শোনে না। কিন্তু কেষ্টবাবুর কথা না শুনে উপায় নেই। পুলিশকে যদি চাকরি করতে হয়, তাঁর কথা শুনতেই হবে। এমনকী বাড়ি জ্বালাব, বোম মারব বললেও বিগলিত দন্তে শুনতে হবে।
একটা ভাল আইডিয়া এসেছে। যদি অভয় দেন তো বলি। মুখ্যমন্ত্রী নানা কাজে ব্যস্ত। তাঁকে বিনিয়োগ আনতে হয়, ডেঙ্গু হয়নি প্রতিষ্ঠা করতে হয়, ছবি আঁকতে হয়, ফেস্টিভাল করতে হয়, মুকুলের খোঁজ রাখতে হয়, কেন্দ্রের সঙ্গে লড়াই করতে হয়, একদিকে উদ্ধব ঠাকরে অন্যদিকে ত্বহা সিদ্দিকিদের সামলাতে হয়। কী জানি, আরও কত কী করতে হয়। হলফ করে বলতে পারি, পৃথিবীর কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে এতকিছু করতে হয় না। আমরা কি তাঁর গুরুদায়িত্ব একটু লাঘব করতে পারি না? পুলিশ দপ্তরটা যদি অন্য কেউ দেখত! আর যাই হোক, পার্থবাবুর দ্বারা সেটা হবে না। শিক্ষাতেই রোজ এমন ল্যাজেগোবরে হচ্ছেন, পুলিশে না জানি কী হবেন। দিদির প্রতিভা আছে। তাই তিনি প্রতিভার কদর করতেও জানেন। এমন প্রতিভা কিনা শুধু বীরভূমে পড়ে থাকবেন? পুলিশমন্ত্রী হিসেবে যদি অনুব্রত মণ্ডল শপথ নিতেন, কেমন হত! ডিজি–আইজি–নগরপালরাও হাড়ে হাড়ে বুঝত, পুলিশমন্ত্রী কাকে বলে।