স্বরূপ গোস্বামী
পড়ি গেল কাড়াকাড়ি,
আগে কেবা প্রাণ করিবেক দান
তারি লাগি তাড়াতাড়ি।
কবিতার লাইনগুলো আবার মনে পড়ে গেল। মমতা ব্যানার্জির ডিলিট নিয়ে নানা ব্যঙ্গবিদ্রুপ উঠে আসছে। কাগজে তেমন শোরগোল না থাকলেও সোশাল মিডিয়ায় অন্তত অনেকে স্বাধীন মতামতটুকু দিতে পারছেন। অধিকাংশ বিদ্রুপই মুখ্যমন্ত্রীকে ঘিরে। আমরা বরং একটু অন্য চোখে দেখি।
কে সবার আগে তাঁর নাম প্রস্তাব করলেন? স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য। পাছে অন্য কেউ এমন মহার্ঘ্য প্রস্তাবটা তুলে ফেলে! তাই তড়িঘড়ি প্রস্তাব। শুধু সমাজসেবার জন্য ডিলিট দিলে, তবু না হয় কথা ছিল। তাই বলে সাহিত্যের জন্য! কী আর করা যাবে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মমতা ব্যানার্জিকেই অগ্রগণ্য সাহিত্যিক মনে করেন।
শুধু কেউ প্রস্তাব করলেই তো হবে না। কাউকে একটা সোচ্চারে সমর্থন করতে হবে। এবার এগিয়ে এলেন কলেজ সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান। পাছে অন্য কেউ আগে সমর্থন করে নিজের নম্বর বাড়িয়ে নেয়! তাই তিনি জোর গলায় সমর্থন ভাসিয়ে দিলেন।
এবার কার ঘাড়ে কটা মাথা যে বিরোধীতা করবেন? অগত্যা একের পর এক হাত উঠে গেল। কিন্তু উপাচার্য! তাঁর কোনও ভূমিকা থাকবে না? সত্যিই তো, এস এস সি চেয়ারম্যান নম্বর বাড়িয়ে নিলেন, সি এস সি চেয়ারম্যানও নম্বর বাড়িয়ে নিলেন। তিনি কিনা উপাচার্য। তাঁর ঘরের মাঠে অন্যরা গোল দিয়ে যাবেন! হয় নাকি! অতএব, প্রস্তাব রাজ্যপালের (আচার্য) কাছে যাওয়ার আগেই তিনি ঘোষণা করে দিলেন।
নিয়ম অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব আগে আচার্যর কাছে যাওয়ার কথা। তিনি সম্মতি দিলে তারপরই নাম ঘোষণা। কিন্তু এক্ষেত্রে আগেই নাম ঘোষণা হয়ে গেল। এই ঘোষণাটুকু অন্তত উপাচার্য করতে পারলেন। তাঁর নম্বরও কিঞ্চিত বাড়ল বই কি।
মুখ্যমন্ত্রীকে পরে দোষারোপ করবেন। ভেবে দেখুন, তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাথায় কারা বসে আছেন। এস এস সি, সি এস সি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়— এই তিন প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ তিন কর্তা মনে করছেন, মমতা ব্যানার্জিকে সাহিত্যের জন্য ডিলিট দেওয়া যায়। হলফ করেই বলা যায়, এই তিনজনের কেউই মমতা ব্যানার্জির লেখা কোনও বই পুরোটা পড়েননি। আর যদি পড়ার পরেও মনে হয়, মমতার সাহিত্যের জন্য ডিলিট দেওয়া যায়, তাহলে এঁদের করুণাই করা যেতে পারে।
মমতা ব্যানার্জি ডিলিট পেলেন কিনা, সেটা বড় কথা নয়। এই তিন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কয়েক লক্ষ ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যত জড়িয়ে। এমন লোকেরা যদি মাথায় থাকেন, সেই প্রতিষ্ঠানগুলি কেমন চলবে, সেটা আরও বড় প্রশ্ন। তাঁরা তিনজনেই প্রমাণ করে গেলেন, প্রশাসক হিসেবে তাঁদের টিঁকি কোথায় বাঁধা। এররপর সিএসসি বা এসএসসি নিয়োগ নিয়ে আর ভরসা রাখতে পারবেন!