নন্দ ঘোষের কড়চা
আই এফ এ খুব খারাপ, তাই মোহনবাগান নাকি বিহারে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করবে। ভাল কথা। ফেডারেশন খুব খারাপ। তাহলে নেপালে বা বাংলাদেশে গেলে কেমন হয়! এত চিঠি লিখলেও ফিফা পাত্তা দেয় না। মঙ্গল গ্রহে গিয়ে মঙ্গল–লিগে একা একাই চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়। পুজোর পর স্বমহিমায় নন্দ ঘোষ। তাঁর টার্গেট মোহন কর্তারা।
এ ভারী অদ্ভুত এক ক্লাব। অভিযোগের শেষ নেই। কিছুতেই এদের শান্তি নেই। এই চাই, ওই চাই, এটা নেই কেন, ওটা নেই কেন? সারাক্ষণ শুধু বাজার গরম করার চেষ্টা। ক্লাবটা মন্দ নয়। সমর্থকরাও মন্দ নয়। কিন্তু কর্তাগুলো হাড় বজ্জাত। সবসময় শুধু নাটক করে যায়। আরে বাবা, নাটক করার এতই যখন শখ, তখন অ্যাকাডেমিতে হল ভাড়া করে শো করলেই পারে। নাম হতে পারে মোহন–অপেরা। এই নামে একটা যাত্রা দল ছিল। সেই মোহনবাবু নেই। তবে মোহন–কর্তারা তো আছেন। আবার সেই জৌলুস ফিরিয়ে আনতে পারে গঙ্গাপারের ক্লাবের কর্তারা।
সভাপতি টাকা–পয়সা দিয়েই খালাস। তিনি অবশ্য তেমন নাক গলান না। সচিব একসময় নানা চমক তৈরি করতেন। এখন অসুস্থ। ফলে, এখন এক স্ফীতোদর কর্তা একাই বাজার নিয়ে চলেছেন। রোজ কথায় কথায় প্রেস কনফারেন্স। আবোল তাবোল বকে চলেছেন। না বোঝেন ফুটবল, না বোঝেন আইন কানুন, না বোঝেন যুক্তি। একেবারে এঁড়ে পণ্ডিত বলতে যা বোঝায়, তাই। পেট দিন দিন মোটা হচ্ছে, মাথাটাও তাই।
কখনও বলেন, লিগে খেলব না। আবার দল নামিয়ে দেন। বলেন, লিগে ইস্টবেঙ্গলের একতরফা জয়ের রেকর্ড ভাঙতে হবে। ডার্বির আগে নানা গরম গরম মন্তব্য। জিতলে সব ক্রেডিট নেওয়ার চেষ্টা। আর লিগ হাতছাড়া হলেই বলেন, এটা পাড়ার লিগ, এগুলো ওরা জিতুক। আরে বাবা, লিগের যদি গুরুত্বই নেই, সেই লিগ নিয়ে এত ঝগড়া করেন কেন মশাই। সেই ডার্বি নিয়ে এত হইচই করেন কেন? সেই লিগে রেফারি কী করল না করল, তা নিয়ে এত সস্তা নাটক করেন কেন? সবসময় কিছু না কিছু অশান্তি তাঁকে পাকাতেই হবে।
ইদানীং তিনি নতুন একটা হাওয়া বাজারে ছেড়েছেন। আইএফএ–র সঙ্গে নাকি সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। বাংলা ছেড়ে বিহার বা অন্য রাজ্য থেকে নাম নথিভুক্ত করবেন। বাংলার ঐতিহ্যশালী ক্লাব, সে নাকি নথিভুক্ত হবে বিহার থেকে। এসব পাগলের প্রলাপ দেখে ক্লাবের অন্য কর্তারা কেউ কিছু বলেও না! তাতে কী লাভটা হবে? কলকাতা লিগের যদি গুরুত্ব নেই, সেখানে জুনিয়র দল খেলালেই হয়। এমনকি সেখানে না খেললেও হয়। কলকাতা লিগে জুনিয়র দল খেলালেও আই লিগ বা ফেড কাপে খেলতে তো বাধা নেই। সেগুলোই না হয় খেলুন। তার জন্য বিহার–ঝাড়খণ্ড বা ওড়িশা যেতে হবে কেন?
ভেবে দেখুন, বিহারে নাম নথিভুক্ত হবে, তারা প্র্যাকটিস করবে কলকাতা ময়দানে। তারা আই লিগ খেলতে চাইবে যুবভারতীতে। এ কেমন আবদার। বিহারেই যদি নাম নথিভুক্ত হয়, তাহলে পাটনায় আই লিগ খেলুন। আইএফএ–র ওপর রাগ না হয় বোঝা গেল। কিন্তু এই কর্তাটি তো মাঝে মাঝে ফেডারেশনের বিরুদ্ধেও সমালোচনা করেন। যদি এআইএফএফ–কে খুব খারাপ মনে হয়, তখন কী করবেন? অন্য দেশে গিয়ে, মানে নেপাল বা বাংলাদেশে নাম রেজিস্টার্ড করাবেন?
এখানেই শেষ নয়। আগে মোহন কর্তারা কথায় কথায় এ এফসি বা ফিফাকে চিঠি লিখতেন। বিশেষ পাত্তা পেতেন না। মেলগুলো নির্ঘাত ইনবক্স থেকে ডিলিট হয়ে যেত। রিসাইকেল বিন নামক ডাস্টবিনে চলে যেত। ফিফার এই উপেক্ষার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে কী করা যায়? এই পৃথিবীতেই আর থাকব না। মঙ্গল গ্রহে গিয়ে রেডিস্টার্ড করব। সেখানে মঙ্গল–লিগে একা একাই খেলব, চ্যাম্পিয়ন হব।
আসলে, বাংলার ঋতুচক্রটাই বদলে গেছে। শরৎ, হেমন্ত, বসন্ত এসব কিছুই আর নেই। বছরে এক মাসের মতো হালকা ঠান্ডা। বাকি এগারো মাস কার্যত গরম কাল। গরমে সবারই মাথা খারাপ হয়। নাদুস নুদুস মোহন কর্তাটির সেটাই হয়েছে। পাগল ভালো করো মা। বিশ্ব উষ্ণায়নের কুপ্রভাব কী কী হতে পারে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা নানা উদাহরণ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কোত্থাও যাওয়ার দরকার নেই। একবার মোহনবাগান ক্লাবে আসুন, এই কর্তাটির ছবি তুলে নিয়ে যান।