(রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তরুণ সাংসদ ঋতব্রত ব্যানার্জিকে নিয়ে। সেই সাক্ষাৎকারের পর অনেকেই তাঁর বিপক্ষে। তবে উল্টো সুরও আছে। তেমনই একটি বিষয় নিয়ে বেঙ্গল টাইমসের ওপেন ফোরামে লিখলেন কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়)।
আমি পুরো সাক্ষাৎকারটিই দেখেছি। পক্ষে অনেক কথা বলা যায়, বিপক্ষেও। ঋতব্রত সব ঠিক বলেছেন, এমনটাও মনে করি না। আবার সব ভুল বলেছেন, তাও মনে করি না। আমাদের মুশকিলটা হল, আমরা আগেই একটা পক্ষ নিয়ে ফেলি। তারপর হয় পাশে দাঁড়িয়ে যাই, নইলে খোলাখুলি আক্রমণে নেমে পড়ি। যুক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে বিচার করার শক্তিটা হারিয়ে ফেলি।
দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের সব বিষয়ে যাচ্ছি না। নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করতে চাইছি। প্রকাশ কারাত সম্পর্কে ঋতব্রত যে মন্তব্য করেছেন, আমি তাঁর সঙ্গে পুরোপুরি একমত। প্রকাশ্যে বলা যায় কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তার জন্য শাস্তিও হতেই পারে। কিন্তু যেটা বলেছেন, সেটা অনেকেরই মনের কথা। তফাত এটাই, ঋতব্রত বলতে পারছেন, বাকিরা বলতে পারছেন না।
সীতারাম ইয়েচুরিকে রাজ্যসভায় না পাঠানো বিরাট এক ভুল। এই ভুলের মাশুল সিপিএম–কে দিতেই হবে। এবং এর পেছনে অন্য কোনও আদর্শগত ব্যাপার নেই। যা রয়েছে, তা স্রেফ ব্যক্তিগত ঈর্ষা। হ্যাঁ, প্রকাশ কারাতের একটা লড়াকু অতীত আছে। অতীতে অনেক ব্যাপারেই আত্মত্যাগের নজির রেখেছেন। তাঁর পাণ্ডিত্য নিয়েও প্রশ্ন তুলছি না। কিন্তু দিন দিন তিনি যে অত্যন্ত ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে উঠছেন, এ নিয়ে সন্দেহ নেই। ইয়েচুরিকে আটকানোর জন্য যা যা করা দরকার, তাই তাই করা হয়েছে। এবং লিখে রাখুন, পরের বছর কেরল থেকেও ইয়েচুরিকে পাঠানো হবে না। যা গতিপ্রকৃতি বুঝছি, কারাত নিজেই হয়ত রাজ্যসভায় যাবেন। আর সেই কারণেই সীতারামকে সরানো খুব জরুরি ছিল।
কী কী যুক্তি দেওয়া হল? ১) দলের সাধারণ সম্পাদককে ব্যস্ত থাকতে হবে। তাঁকে রাজ্যসভায় থাকলে চলবে না। ২) দুবারের বেশি রাজ্যসভায় মনোনয়ন দেওয়ার নিয়ম নেই। ৩) সাধারণ সম্পাদক কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে কেন যাবেন? ৪) একবার বলা হল, পরের বছর কেরল থেকে তাঁকে পাঠানো যেতে পারে।
কোনটা যে আসল কারণ, সেটাই পরিষ্কার নয়। একেকবার একেকরকম যুক্তি দেওয়া হল। যদি দুবারের বেশি মনোনয়ন নাই দেওয়া হয়, তাহলে কেরল থেকে যাওয়ার প্রশ্ন উঠছে কেন? কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে যাওয়া চলবে না, এটাই বা বলা হচ্ছে কেন? এই প্রসঙ্গগুলোই তো অবান্তর। আসলে, এগুলো কোনওটাই কোনও কারণ নয়। সীতারামকে আটকাতে হবে, এটাই বড় কারণ।
বাংলার নেতৃত্ব তো সীতারামকেই চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই আবেদনে পাত্তাই দেয়নি পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটি। দলের বাইরে হয়ত মুখ খোলা যায় না। দলের ভেতরে সেভাবে সোচ্চার হয়েছিলেন? নিজেদের দাবি ঠিকঠাক তুলে দরতে পারলে এমন অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হত না। মনে রাখবেন, ঋতব্রত কিন্তু একসময় প্রকাশ কারাতের ঘনিষ্ঠই ছিলেন। একসময় তাঁর এমন একটা দুর্নাম ছিল। তিনি প্রকাশ কারাতকে আমার আপনার থেকে অনেক ভাল চেনেন। তিনি জানেন, এই সময় প্রকাশ কারাতকে আক্রমণ করা মানেই কেন্দ্রীয় কমিটির কোনও সহানুভূতিই তাঁর দিকে থাকবে না। এবং এই কথাগুলো তিনি শুধু টিভি ইন্টারভিউতে বললেন, তা নয়। দলীয় মিটিংয়েও বেশ কয়েকবার বলেছেন।
ঋতব্রতকে নিশ্চিতভাবেই বহিষ্কার করা হবে। সোশাল মিডিয়ায় তাঁর মুণ্ডপাত চলবে। কিন্তু তাঁর সব কথা কিন্তু উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। অন্তত এই বিষয়টিতে মনে মনে তাঁকে সমর্থন করুন। যেটা আজ ঋতব্রত বললেন, একদিন সেটা বাংলার সিপিএম নেতৃত্বকেও বলতে হবে। বেড়ালের গলায় কাউকে একটা ঘণ্টি বাঁধতে হত। ঋতব্রতে সেটাই বেঁধে গেলেন।
(লেখাটি ওপেন ফোরামের। মতামত লেখকের ব্যক্তিগত। নির্দিষ্ট কোনও বিষয়ে আপনিও আপনার মতামত তুলে ধরতে পারেন। সুস্থ ও যুক্তিনিষ্ঠ বিতর্ক চলতে থাকুক। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)