রম্যরচনা: স্বাধীনতা কানে কানে

সন্দীপ লায়েক
আজ ভারতের একাত্তরতম স্বাধীনতা দিবস। আমরা আজ পশ্চিমবাংলার অলিতে গলিতে পথচারীদের সঙ্গে। জেনে নিলাম আজকের এই স্পেশাল দিনে কে কী প্ল্যান-প্রোগ্রাম করেছেন। উত্তরের শর্ত ছিল কানে কানে, ফিসফিসিয়ে। সেগুলো থেকে বাছা বাছা কুড়িটি বক্তব্য নিজের ভাষায় প্রকাশ করলেন নিজস্ব সংবাদদাতা। ব্যক্তিদের পরিচয় গোপন রাখা হল।

প্রথম ব্যক্তি:—আজ প্ল্যান বলতে.. দুপুরে কষা মাংস আর ভাত। তারপর দুপুরে টেনে একটা ঘুম, রাত্রে লুচি-আলুরদম।

দ্বিতীয় ব্যক্তি:—আজ কিচেন পুরোপুরি বন্ধ। লাঞ্চ বাইরে। সিনেমা দেখে, ডিনার সেরে এক্কেবারে রাত্রে ফিরব।

তৃতীয় ব্যক্তি:— শুধু শুয়ে শুয়ে ল্যাদ খাব। কালকের হ্যাংওভার এখনও কাটেনি কিনা..

চতুর্থ ব্যক্তি:—আজ কী যে করব জানি না! নিষেধ যখন আছে ক্যাম্পাসে পতাকা তোলাটা এক্কেবারেই উচিত্ হবে না। হাজার হোক স্ত্রী-বাচ্চা নিয়ে একটা পরিবার আছে..

পঞ্চম ব্যক্তি:—কোন পার্কে যে যাই! ঝোপ পর্যন্ত সব বুকড। এদিকে কথা দেয়া আছে..

ষষ্ঠ ব্যক্তি:—কীসের স্বাধীনতা! এর চেয়ে ইংরেজই ভাল ছিল। কমপক্ষে একটা প্রশাসন তো ছিল। আজ এটাই গায়ে পড়ে আলচনা করব সবার সাথে..

সপ্তম ব্যক্তি:—স্বাধীনতা? আজ? সেটা তো পালন কালকেই হয়ে গেছে- ব্যন্ড বাজিয়ে সবুজ পতাকা তুলে।

অষ্টম ব্যক্তি:—উফফ! সাদা পাঞ্জাবিটা যে কোথায় রেখেছি? যত্তসব লাফড়া, ঢপের একটা লম্বা ভাষণ ঝাড়তে হবে আজ..

নবম ব্যক্তি:—কি আর করব? চাট-মাল সব রেডি। জলদি জলদি স্নান সেরেই বসব এবার..

দশম ব্যক্তি:—কি করব আবার? উঠকো বাড়তি ঝামেলা। মিনসেটা আবার খাসিমাংস আনবে বলেছে। ফুর্তি করবেন ওনারা আর খেটে মরি আমি..

indipendence day

একাদশ ব্যক্তি:—উপরমহলের খুব চাপ। অবাঞ্ছিত কিছু ঘটলে চাকরি থাকবে না। উপরি ইনকামও বন্ধ..জাস্ট বোগাস!

দ্বাদশ ব্যক্তি:—টিভির ভাষণগুলো হজম করতে হবে। বিকেলের মজলিসে ওটাই টপিক। না হলে সম্মান ধরে রাখা মুশকিল।

ত্রয়োদশ ব্যক্তি:—আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, ওসব সাধীনতা বুঝি না। আগে নাকি ইংরেজ ছিল। তা বাপ, আমাদের ইংরেজই কি আর বাংলাই কি!

চতুর্দশ ব্যক্তি:—জমকালো কিছু একটা লিখতেই হবে। কি যে লিখি সাজেস্ট করুণ না, কিসসু মাথায় আসছে না। জানেন তো শিল্প জোর করে হয়না..

পঞ্চদশ ব্যক্তি:—জলদি দুটি মুখে দিয়েই বৌ-বাচ্চা নিয়ে বেরোব চিড়িয়াখানায়। স্বাধীনতা জিনিসটা বুঝতে গেলে চিড়িয়াখানাই আসল জায়গা।

ষড়দশ ব্যক্তি:—আজ শুধু ফেসবুক। ডিপিটা ফ্ল্যাগ লাগিয়ে চেঞ্জ করতে হবে। জমকালো একটা স্টাটাস ঝাড়তে হবে। মিনিমাম একশ লাইক আর পঞ্চাশটা কমেন্ট টার্গেট।

সপ্তদশ ব্যক্তি:—বড্ড ন্যাকামি। কী এসব? কতদিন আগে দেশ স্বাধীন হয়েছে অথচ আদিখ্যেতা এখনো চলছে। কোন মানে হয়? ন্যাকা ন্যাকা বিরক্তিকর একটা দিন। এই ইয়ারফোন কানে গুঁজলুম, আগামীকাল খুলব।

অষ্টদশ ব্যক্তি:—মহল্লাগুলোতে টহল দিতে হবে। দেখতে হবে কোথায় কোথায় পাকিস্তানের ফ্ল্যাগ উড়ছে।

উনিশতম ব্যক্তি:—পতাকা কোথাও পাওয়া যচ্ছে না। অথচ বাচ্চাটার জন্য চাইই-চাই। কি বিপদেই না পড়া গেল! সেটা মিললে বাচ্চার হাতে দিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরব একবার।

বিংশতম ব্যক্তি:—এত কষ্টের স্বাধীনতা এনেছেন দেশপ্রেমীরা। অথচ আমরা তাদের কি নূন্যতম সম্মানটুকুও দেখাতে পারছি? গানগুলো শুনে মন উথালপাথাল করে ওঠে। মনে মনে একটাই কথা বলছি বারবার- বন্দেমাতরম!!

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.