দিব্যেন্দু দে
বেঙ্গল টাইমসে কমরেড ছবির রিভিউ পড়লাম। লেখাটির সঙ্গে অনেকাংশে একমত। আমিও সেই মুষ্টিমেয় কয়েকজনের দলে, যারা টিকিট কেটে, হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখেছেন। আমার অভিজ্ঞতা আরও করুণ। আমি যেদিন দেখেছিলাম, সেদিন হলে টিকিট কেটে এসেছিলেন মাত্র তিনজন (আমি সহ)। ব্যালকনিতে অবশ্য অনেকেই ছিলেন। হাততালি আর সিটির বহর দেখেই অনুমান করেছিলাম, তাঁরা মোটেই টিকিট কেটে আসেননি। অন্য ছবির ট্রেলার দেখানো হচ্ছে। সিটি উঠল, শঙ্কুদা সাবাস। বুঝলাম, এরা কার লোক। সিনেমা শুরু পর্যন্ত ধৈর্য নেই। পরে দু–একজনকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, পার্টি অফিস থেকে নাকি টিকিট দিয়ে পাঠানো হয়েছে।
বুঝলাম, লন্ডনের গল্পটা ঠিক কেমন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নাকি ছবিটি দেখার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে। ছবিটার ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে থাকা মিথ্যেগুলো দেখেই বুঝলাম, বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্পগুলো কতটা আষাড়ে। প্রোডিউসারের টাকা থাকলে লন্ডনে প্রিমিয়ার করাই যায়। সেই টাকায় লন্ডন ঘুরে আসাই যায়। তা দিয়ে কী প্রমাণ হয়? নিজের শহরের হলে এমন মাছি তাড়াতে হচ্ছে কেন? খোদ তৃণমূলের লোকেরাও ছবিটি দেখেছেন কিনা সন্দেহ। বিনে পয়সায় টিকিট দিলেও লোকের সময়ের তো মূল্য আছে।
না, আমি শ্রীমান শঙ্কুবাবুর শত্রু নই। একজন প্রথম ছবি করছেন। চেষ্টাটাকে সাধুবাদ দেওয়াই যেত। তিনি সিনেমা জগতের মানুষ নন, তার ওপর প্রথম ছবি। ততটা ভাল না হতেই পারে। তাই বলে এমন আষাঢ়ে গপ্প কেন ফাঁদতে হবে? তিনি কি দর্শককে এতই বোকা ভাবেন? বিদেশের গল্প শুনিয়ে যাবেন, আর দর্শক হলের সামনে ভিড় জমাবে? আসলে, সিনেমা দেখার অভ্যেসটাও শঙ্কুবাবুদের নেই। তাহলে বুঝতে পারতেন, এই ছবি নিয়ে আর যাই হোক, বড়াই করা চলে না।
সিনেমার ভেতরের বিষয়ে যাচ্ছি না। তা নিযে যত কম কথা বলা যায়, ততই ভাল। আমার জীবনে গত দশ বছরে এমন নিম্নমানের ছবি আমি অন্তত দেখিনি। অবাক লাগে, এই ছবি সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেল কীভাবে। আরও অবাক লাগে, নন্দনের মতো হলে এই ছবি দেখানোর ছাড়পত্রই বা পাওয়া গেল কীভাবে? সুদীপ্ত সেনের লিখিত স্বীকারোক্তি থেকে জানা গিয়েছিল, শঙ্কুবাবু কীভাবে তাকে চমকে টাকা আদায় করতেন। অন্যান্য কয়েকটি চিটফান্ড ও টিভি চ্যানেলে গিয়েও ক্ষেত্রেও তার চমকানির গল্প শোনা যায়।
এই ছবির যিনি প্রোডিউসার, তিনিও হয়ত একদিন ডায়েরি লিখবেন। সেই ডায়েরি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
(ওপেন ফোরাম। মতামত ব্যক্তিগত। আপনিও বিভিন্ন সিনেমা নিয়ে নিজের বক্তব্য জানাতে পারেন। সমালোচনা থাকতেই পারে, তবে তা শালীনতা বজায় রেখে। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)