অনেকদিন আড়ালে ছিলেন। ২১ জুলাই মুক্তি পাচ্ছে শঙ্কুদেব পন্ডার কমরেড। হ্যাঁ, এবার তিনি পরিচালক। এতদিনে প্রফেসর শঙ্কু তাহলে বুদ্ধিজীবী হলেন! লিখেছেন রাহুল বিশ্বাস।।
শহর ছেয়ে গিয়েছে একটা ছবির পোস্টারে। ছবির নাম কমরেড। পোস্টারের সংখ্যা দেখে মনে হতেই পারে, দারুণ একটা ছবি। সৃজিত মুখার্জি বা কৌশিক গাঙ্গুলিদের থেকেও বড় পরিচালক বোধ হয় এসে গেলেন। মুখ্যমন্ত্রী যদি ছবিটা দেখতে চলে যান, অবাক হওয়ার কিছু নেই। নন্দনে যদি সিনেমাটা চলতে থাকে, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
ছবির নাম কমরেড। ছবির পরিচালক শঙ্কুদেব পন্ডা। হ্যাঁ, যে শঙ্কুদেবকে আপনি চেনেন, সেই শঙ্কুদেব। একসময় সাংবাদিকতা করতেন। উল্লেখযোগ্য কাজ বলতে, কোনও এক নেতার নির্দেশে স্টিং অপারেশন করে একজনকে ফাঁসানো। কেউ কেউ তাঁকে বাংলার প্রথম ম্যাথু স্যামুয়েল বলতেও পারেন। পরে এলেন ছাত্র রাজনীতিতে। সেখান থেকে উপাচার্যকে হুঙ্কার, কলেজ গেটের বাইরে নানা কাণ্ড করে স্বনামধন্য। কোন মিডিয়ার কী অবস্থান হওয়া উচিত, কোন খবরের কী হেডলাইন হওয়া উচিত, এসব নিয়ে প্রচুর জ্ঞান বিতরণও করতেন। সারদা–নারদা–সিবিআই এসব কারণে খ্যাতি আরও কিছুটা বাড়ল। বিড়ম্বনাও বাড়ল। আড়ালেই চলে গেলেন। আবার ফিরে এলেন, পরিচালকের জার্সি গায়ে দিয়ে। এবার তিনি তাহলে পরিচালক। তার মানে, বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ।
ছবিটা না দেখেই বলা যায়, এর বিষয়বস্তু কী হবে। সিপিএম কতটা খারাপ ছিল, কীভাবে কৃষকদের জমি কেড়ে নিত, কীভাবে গুলি চালিয়েছে, তৃণমূল কত দায়িত্বশীল বিরোধী ছিল, ইত্যাদি ইত্যাদি। ইতিহাসের কত বিকৃতি যে হবে, তা আগাম অনুমান করাই যায়। যদি দেখেন এই ছবি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হচ্ছে, অবাক হবেন না। অমর্ত্য সেনের মন্তব্য সেন্সর বোর্ড যতই আটকাক, এক্ষেত্রে কোনও শব্দই বঙ্গীয় সেন্সর বোর্ডের আপত্তিকর মনে হবে না, একথাও হলফ করেই বলা যায়।
সবচেয়ে অবাক লাগল প্রোডিউসারের মন্তব্য শুনে। তাঁর স্বীকারোক্তি, ‘শঙ্কু যদি সাহসী হতে পারে, আমি সাহসী হতে পারব না কেন? মনে হল, সাহস দেখানো দরকার।’ কীসের সাহস, বোঝা গেল না। শাসক দলের তাঁবেদারি করতেও বুঝি সাহস লাগে! সহজ কথা, একজন ব্যবসায়ী শাসক দলের তাঁবেদারি করা এক ছবিতে টাকা ঢালছেন। কেন ঢালছেন, বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে হ্যাঁ, এমন একজন পরিচালক ছবি বানাচ্ছেন, ছবির বাণিজ্যিক ভবিষ্যত নেই, এটা জেনেও টাকা ঢেলেছেন। সাহস লাগে বইকী!