বোঝা গেল তোদের ব্রেকিং নিউজের দৌড় কতদূর

নন্দ ঘোষের কড়চা

অধিকাংশ সর্বভারতীয় চ্যানেল এমন ভান করে, যেন তারা সরকারের কতই ঘনিষ্ঠ। সারাক্ষণ ব্রেকিং নিউজ, ব্রেকিং নিউজ করে চিৎকার। কিন্তু রাষ্ট্রপতি কে হবেন?‌ এই প্রশ্নে সবাই কুপোকাত। বোঝা গেল এদের ব্রেকিং নিউজের দৌড় কতদূর। নন্দ ঘোষের কড়চায় ফের স্বমহিমায় নন্দ ঘোষ।।

nanda ghosh logo

কথায় বলে, মেয়েদের নাকি পেটে কথা থাকে না। তাদের কিছু বললেই পাঁচ কান হয়ে যেতে সময় লাগে না। পুকুরঘাট বা কলতলা থেকে ফিসফিস শুরু হয়ে তা যে কোথায় পৌঁছবে, কেউ বলতে পারে না।

এখন সেই পুকুরঘাটও নেই। নেই কলতলাও। থাকলেও রয়ে গেছে অতীতের স্মৃতি হয়ে। এখন ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপই কলতলা বা পুকুরঘাট। সেখান থেকেই দিব্যি ছড়িয়ে যাবে। আর মিডিয়া তো আছেই। তারা ঘটনা ঘটার আগেই সব আগাম বকতে শুরু করে।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও সেই কলতলা বা পুকুরঘাট গোত্রেই পড়েন। এঁদেরও পেট গুড়গুড় করে। এটা আর কেউ না বুঝুন, মোদিবাবু বুঝেছেন। তাই কাউকে বুঝতে দেননি। কারণ, আলোচনা করলেই ফাঁস হয়ে যাবে। এঁরা যতক্ষণ না উগরে দিচ্ছেন, পেট গুড়গুড় করবে। অতএব, নো আলোচনা। ধোঁয়াশা তৈরি করে যাও। তারপর কোনও একসময় দুম করে ঘোষণা করে দাও। সবার পিলে চমকে দাও।

প্রায় দু–‌তিন মাস ধরে আলোচনা চলছে, কে হতে পারেন রাষ্ট্রপতি। কেউ এগিয়ে রাখছেন আদবানিকে, তো কেউ ভাসিয়ে দিচ্ছেন মোহন ভাগবতের নাম। কারও তাস দ্রৌপদী মুর্মু, তো কেউ বাজি ধরছেন সুষমা স্বরাজের হয়ে। কেউ কেউ বলতে শুরু করলেন, প্রণব মুখার্জির নামে সর্বসম্মতি হয়ে যেতে পারে। প্রণববাবুকে বিজেপি আরও একটা টার্ম রেখে দিতেও পারে।

ramnath kobind2

এমন কত জল্পনা। শুধু স্থানীয় মিডিয়ায় নয়। দেশের তাবড় তাবড় চ্যানেল ও কাগজে। চ্যানেলের বাবুরা তো একটু বেশিই সবজান্তা। তারা যেন সব জানে!‌ তারা যেন বিরাট হনু। আমি বাপু খুব খুশি। এইসব সবজান্তা মিডিয়ার মুখে ঝামা ঘসে দিয়েছেন মোদি। সবাই বাতেলা দিয়ে চলেছে, আর একের পর এক নাম ভাসিয়ে দিচ্ছে। নে, আর নাম ভাসাবি?‌ মোদি এমন তাস ফেললেন, কারও চোদ্দ পুরুষও ভাবতে পারেনি। ভাবা তো দূরের কথা, ওই পণ্ডিতরা ভাবী রাষ্ট্রপতির নামটাই আগে কখনও শুনেছে কিনা সন্দেহ। যেই না নাম ঘোষণা হল, গুগলে সার্চ করার কী ধুম!‌ কিন্তু সেখানেও বেশি কিছু নেই। গুগলবাবুই কি জানত এই লোকটা দেশের রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন!‌

ঘণ্টা দুই তিন লাগল, সবাই এখান ওখান থেকে কপি পেস্ট করে ছাড়তে লাগল। বোঝানো হল, রামনাথ কোবিন্দ সম্পর্কে তারা কতকিছু জানে!‌ পরে যতই কপি পেস্ট করো বাপু। মেনে নাও, আগে চিনতে না। ফেবুর বিপ্লবীদের কথা থাক। করুণা হচ্ছে সর্বভারতীয় চ্যানেলগুলোর কথা ভেবে। সকাল থেকে রাত সারাক্ষণ ‘‌ব্রেকিং নিউজ’, ‘‌ব্রেকিং নিউজ’ বলে চেঁচিয়ে যায়। আসল ব্রেকিং নিউজের বেলায় সবাই লবডঙ্কা। অমিত শাহ ঘোষণা করলেন, তারপর এদের হইচই শুরু। তার আগে কেউ বলতে পেরেছিলে?‌ সারা বছর ধরে এত তাঁবেদারি। তার পরেও খবরটা আগাম পাওয়া গেল না। এনডিটিভি যখন দেখাচ্ছে, আমাদের ওঙ্কার বাংলা/‌সিটিভিএন–‌ও তখনই দেখাচ্ছে। ‌‌

সবার নাক কাটা গেল। এত দালালি করার এই ফল!‌ এখন বলতে হচ্ছে মাস্টার স্ট্রোক। হায় রে, ওই মাস্ট্রার স্ট্রোকে তোরা নিজেরাই কুপোকাত।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.