(এক বছর আগে, ঠিক এমন দিনেই দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সেদিন সকালে বেঙ্গল টাইমসে এই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল। শপথের বর্ষপূর্তিতে সেই লেখাটিই আবার প্রকাশিত হল। যাঁরা পড়েননি, পড়ে দেখতে পারেন। )
স্বরূপ গোস্বামী
শপথ নেওয়ার নির্দিষ্ট রীতি আছে। সেই রীতি মেনেই শপথবাক্য পাঠ করতে হয়। কিন্তু ধরা যাক, এখানে রীতিটা একটু অন্যরকম। নিজের ভুল অকপটে স্বীকার করা, শুধরে নেওয়ার অঙ্গিকার করা। আজকের দিনে যদি এমন শপথ তিনি নিতেন।
অনেক বড় মার্জিনে এবার জিতেছি। আগের থেকেও বেশি মানুষের সমর্থন নিয়ে সরকারে এসেছি। প্রথম কাজ শান্তি বজায় রাখা। হ্যাঁ, আমি সবার মুখ্যমন্ত্রী। যাঁরা ভোট দিয়েছেন, তাঁদেরও। যাঁরা দেননি, তাঁদেরও। আগে নতুন ছিলাম। না জানার কারণে, কখনওবা জেদের বশে অনেক ভুল করেছি। কাছে ঘুরঘুর করা ভুলভাল লোকের পরামর্শে ভুল কাজ করেছি। এই পাঁচটা বছর আমাকে অনেককিছু শিখিয়েছে। স্তাবকদের নয়, যারা গঠনমূলক সমালোচনা করে ভুলটা ধরিয়ে দেবেন, তাদের বেশি গুরুত্ব দেব। প্রথম কাজ, রাজ্যে শান্তি বজায় রাখা। কিন্তু ভোটের পর যা হচ্ছে, আমি সত্যিই খুব উদ্বিগ্ন। এই হামলা বন্ধ হওয়া দরকার। মুখে বলেছি, হিংসা চাই না। কিন্তু কর্মীরা শুনছে না। ভাবছে, মুখে বলতে হয়, বলছি। আসলে আমি শান্তি চাই না, প্রতিহিংসা চাই। যেভাবেই হোক, এই ভাবমূর্তি বদলাতে হবে। আপনারা আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন।
১) পুলিশের মেরুদন্ড সত্যিই ভেঙে পড়েছে। আগেও পুলিশ শাসক দলের নির্দেশ মেনে কাজ করত। অনেক সময় গ্রামের মানুষ সুবিচার পায়নি। ভেবেছিলাম, মানুষকে সুবিচার দেব। কিন্তু হল উল্টোটা। গত পাঁচ বছরে, আমি পুলিশমন্ত্রী থাকাকালীন পুলিশের নৈতিকতা, মেরুদন্ড বলে কিছুই নেই। আমার দলের ব্লক নেতারা, পাড়ার নেতারা যা চেয়েছে, পুলিশ তাই করেছে। বিরোধীরা আক্রান্ত হয়েছে, ঘরছাড়া হয়েছে। পুলিশ কিছুই করেনি। পুলিশ জানত, কিছু করতে গেলে আমি রেগে যেতে পারি। তাই হাত গুটিয়ে বসেছিল। কেউ কেউ ‘অতি সক্রিয়’। যারা আক্রান্ত, তাদেরকেই মিথ্যে মামলা দিয়ে জেলে ভরে দিয়েছে। যে অফিসার যখন কাজ করতে চেয়েছে, আমি কাজ করতে দিইনি। বুঝিয়ে দিয়েছি, আমি আইনের শাসন চাই না। আমি যা চাই, সেটাই আইন।
শুধু তাই নয়, একের পর এক কেলেঙ্কারি সামনে এসেছে। পুলিশ সেই প্রমাণ লোপাট করেছে। পঞ্চায়েত, লোকসভা, পুরসভা নির্বাচনে পুলিশের সামনেই গুন্ডামি ও বুথদখল হয়েছে। পুলিশ নির্বিকার থেকেছে, কারণ আমরা তাই চেয়েছিলাম।
এবার নির্বাচন কমিশন আমার প্রিয় পুলিশদের সরিয়ে দিল। কেউ কেউ ভাল কাজ করতে চাইল। আমি জিতেই পুরানো অফিসারদের আবার ফিরিয়ে আনলাম। যারা নির্ভীকভাবে কাজ করেছিল, তাদের কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠিয়ে দিলাম।
এবার আমরা জেতার পর আবার সেই তান্ডব শুরু হয়েছে। বিরোধীদের পার্টি অফিস কোথাও ভাঙচুর হয়েছে, কোথাও দখল হয়েছে। বাড়ি থেকে বের করে এনে পেটানো হয়েছে। পুলিশ কিছুই করেনি। এমনকি যে বয়ান আমি শুনতে চাই, সেই বয়ানেই রিপোর্ট দিয়েছে।
কথা দিচ্ছি, এসব আর হবে না। পুলিশ দলদাস নয়, পুলিশের যা করা উচিত, তাই করবে। আমি থানায় আসামী ছাড়াতে গেলেও ছাড়বে না। যাঁরা প্রমাণ লোপাট করবে, তারা নয়। যে এস পিরা হাফ প্যান্ট পরে দলের হয়ে টাকা তুলবে, তারাও নয়। যারা কয়লা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করবে, তারাও নয়। যে পুলিশ মাথা উঁচু রেখে কাজ করবে, তারাই আমার প্রিয় পাত্র হবে।
২) বিধানসভাকে আমি কখনই গুরুত্ব দিইনি। একসময় আমারই উপস্থিতিতে বিধানসভায় ভাঙচুর চালিয়েছিল আমার দলের বিধায়করা। আজ বুঝতে পারি, চরম অন্যায় করেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী হয়েও বিরোধী বিধায়কদের প্রশ্নের উত্তর দিইনি। মাত্র একদিন উত্তর দিয়ে ধন্য করে দিয়েছিলাম। শুরুতেই বলেছিলাম, বিরোধীরা দশ বছর মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে চুপ করে থাকুক। আমি বললে যা হয়! আমার দলের লোকেরা ওদের কথা বলতেই দেয়নি। কেউ বলতে উঠলেই হল্লা করেছে। এমন সভার জন্য যেমন ব্যক্তিত্বহীন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার দরকার, ঠিক তেমনই নিয়োগ করেছিলাম। আমার হাতে থাকা দপ্তরগুলো নিয়ে প্রায় আলোচনাই হয়নি। পাঁচ বছরে আমার দপ্তরের বাজেট গিলোটিনে পাঠানো হয়েছে। এবার আর তা হবে না। বিধানসভায় বিরোধীদের অধিকার থাকবে। স্পিকার স্পিকারের মতোই কাজ করবেন। আমি সব প্রশ্নের উত্তর দেব। বিরোধী কোনও তরুণ সদস্য যুক্তিনিষ্ঠ সমালোচনা করলে তাঁকে ‘দেখে নেব’ বলে হুমকি দেব না। কাছে ডেকে পিঠ চাপড়ে দেব।
৩) অন্য দল থেকে ভাঙিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা রেকর্ড করেছি। আমি নিজে ভাঙাতে যাইনি। এর জন্য এক্সপার্ট লোক আছে। যেখানে একজনও সদস্য নেই, সেখানেও অনায়াসে জেলা পরিষদ দখল করেছি। সিপিএম, আর এস পি, ফরওয়ার্ড ব্লক, কংগ্রেস – যেখান থেকে যে এসেছে, পতাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। সবাইকে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে সামিল করা হয়েছে। এবার আর তেমনটা হবে না। অন্য দল ভাঙাতে যাব না। যা আসন পেয়েছি, তাতেই সন্তুষ্ট থাকব। বিরোধীদের মর্যাদা দেব। নিজেরা অনেক আসন পেয়েছি। বিরোধীদের ভাঙন ধরাতে যাব কেন?
৪) স্বাস্থ্য। এটাও আমার হাতেই ছিল। রায়গঞ্জে এইমস হওয়ার কথা ছিল। উত্তরবঙ্গের মানুষের সুবিধাই হত। কিন্তু তাতে অন্য কারও নাম হয়ে যেত। তার রাজনৈতিক সুবিধে হয়ে যেত। তাই আমিও জেদ ধরলাম, ওখানে এইমস হতে দেব না। কেন্দ্র আমার সঙ্গে সংঘাতে যাবে না, জানতাম। আমি যেখানে চেয়েছি, সেই কলকাতার উপকণ্ঠেই হচ্ছে এইমস। কলকাতায় এতগুলো মেডিকেল কলেজ। এখানে এইমস না হলেও চলত। এটা উত্তরবঙ্গে হলেই ভাল হত। বুঝি। কিন্তু স্বীকার করতে পারিনি। এবার আর জেদাজেদি করব না। যেখানে করলে মানুষের ভাল, সেখানেই করা হবে। হাসপাতালগুলোতে বেড বেড়েছে, নায্যমূল্যের ওষুধ চালু হয়েছে, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হচ্ছে, সব ঠিক আছে। কিন্তু যতটা বাড়িয়ে বলি, বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। মেডিকেল কলেজে ডাক্তার নেই। আমার দলেরই এক মাতব্বর ছড়ি ঘোরা্চ্ছে। ডাক্তাররা ভয়ে ভয়ে আছে। এসব বন্ধ হওয়া দরকার। মানুষ যেন স্বাভাবিক পরিষেবা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫) শিল্প। যতই শিল্প সম্মেলন করি, ভাষণে যাই বলি, স্বীকার করে নেওয়া ভাল, গত পাঁচ বছরে শিল্পে তেমন অগ্রগতি হয়নি। বড় কারখানা হয়নি। কর্ম সংস্থান হয়নি। তেলেভাজা, চপ, বড়ি দেওয়া- এসবকেই শিল্প বলে চালিয়েছি। লোক হাসিয়েছি। শিল্পপতিরা এসেছেন। ভাল ভাল কথা বলেছেন। কোনও ব্যাটাই বড় অঙ্কের লগ্নি করেনি। আমি ল্যান্ড ব্যাঙ্ক করেছি। কেউ ভরসা করেনি। আসল সমস্যা জমি। বুঝেও বুঝিনি। সিঙ্গুরে টাটাকে তাড়িয়ে ভুল করেছিলাম। তার খেসারত দিয়েছি। ভুল স্বীকার করে নতুন করে শুরু করতে পারতাম। কিন্তু ভুল আবার কী স্বীকার করব ? পুরানো ভুলকেই জেদের বশে আঁকড়ে থেকেছি। যে বিনিয়োগ করতে এসেছে, আমার দলের স্থানীয় লোকজন এমন তোলাবাজি করেছে, পাততাড়ি গুটিয়ে সব পালিয়েছে। শিল্পপতিরা সমস্যার কথা বলেছেন। গুরুত্ব দিইনি। এবার শিল্পের ব্যাপারে সত্যিই উদ্যোগী হতে হবে। নইলে বেকার ছেলেরা যাবে কোথায় ? অনেক ভুল হয়েছে, আর নয়। সিঙ্গুরে টাটাকেই ডেকে আনব। বলব, খুলুন গাড়ি কারখানা, দেখি কে বাধা দেয়। আর যেন কেউ মমতা ব্যানার্জি হয়ে হাইওয়ে অবরোধ না করতে পারে। আর যেন কোনও টাটাকে রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে হয়।
৬) কাগজ বা টিভিতেও গণতন্ত্র রাখিনি। যারা আমার বিরুদ্ধে কিছু লিখতে গেছে, সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছি। বলেছি, ওমুক কাগজ পড়বেন না। ওমুক চ্যানেল দেখবেন না। কেউ সমালোচনা করলে বলেছি, কুৎসা। তাকে ভেবেছি সিপিএম বা বিজেপি-র এজেন্ট। কোন চ্যানেলে কে সিইও হবে, কোথায় কার চাকরি থাকবে না, আমি ঠিক করে দিয়েছি। এবার আর তা হবে না। সবাই স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারবে। সেই সমালোচনা থেকেই আমাকে শিক্ষা নিতে হবে।
৭) আমার সভা বা মিছিল মানেই তারকার ছড়াছড়ি। অনেককে এম এল এ, এম পি বানিয়ে দিয়েছি। বাকিদের মধ্যেও লোভটা ঢুকিয়ে দিয়েছি। মিটিংয়ে আমাকে ডাকতে হয় না। লোক আছে। তারাই এস এম এস করে ডাকে। না এলে কী কী হতে পারে, সেটা শিল্পীরা জানে। তাই ভয়ে হোক, ভক্তিতে হোক, সবাই আসে। কে কোন সিনেমায় কাজ করবে, কে করবে না, কোন পরিচালক আউটডোরে কাকে নিয়ে যাবে, সিন্ডিকেট ঠিক করে দেয়। নাটক! সেখানে আমার বিরুদ্ধে কিছু থাকলে সে অ্যাকাডেমিতে শো পাবে না। না, এগুলো আমাকে করতে হয়নি। এগুলো যারা দেখভাল করে, তারা জানে, আমি কী চাই। অভিনেতা, পরিচালক, গায়ক, নাট্যকার- কেউই প্রাণ খুলে কথা বলতে পারে না। যা হয়েছে, হয়েছে। কথা দিলাম, এই অবস্থা বদলানোর চেষ্টা করব। আমার বা সরকারের বিরোধীতা করা নাটকও অ্যাকাডেমিতে চলতে পারবে। সরকারের সমালোচনা থাকবে, এমন সিনেমা সেন্সর বোর্ড আটকাবে না। নন্দনে সেইসব ছবি দিব্যি চলবে। আমি নিজেও দেখতে যাব। ভাল হলে পিঠ চাপড়ে দিয়ে আসব।
৮) খেলা। এখানেও মেরুদন্ডহীনদের ছড়াছড়ি। ওদের মধ্যেও লোভ ঢুকিয়ে দিয়েছি। এলেই খেলরত্ন, নানা সুযোগ সুবিধে। তাই আমার মিছিলে ওরাও চলে আসে। নাইট জিতলে ইডেনে সংবর্ধনা দিই, আই এস এলে অ্যাটলেটিকো জিতলেও তাই। কে সি এ বি-র সভাপতি হবে, আমিই ঠিক করে দিই। বলেছিলাম, সব জেলায় স্টেডিয়াম করে দেব। কাজের কাজ হয়নি। গ্রামের খেলাধূলার উন্নতি হয়নি। আমার দাদা আর ভাই প্রায় সব খেলাতেই ছড়ি ঘোরায়। আমি জানি। কিন্তু ওদের আটকাইনি। ক্লাবে ক্লাবে টাকা দিয়েছি। খেলার উন্নতি কিছুই হয়নি। কী হয়েছে, সবাই জানে। ওরাই তো ভোটে খেটেছে। এবার আর তা করব না। এবার খেলাকে তার মতো করেই বিকশিত হতে দিতে হবে। লোভ বা ভয় দেখানো নয়, খেলার মাঠেও প্রাণ ফিরে আসুক।
৯) অর্থ। মন্ত্রী বেশ যোগ্য। কিন্তু এখানেও তাঁর স্বাধীনতা নেই। আমি যা চাই, তাই তাঁকে করতে হয়। দু টাকার চাল থেকে কন্যাশ্রী, ক্লাবের অনুদান থেকে ইমাম ভাতা- সবকিছুই তাঁকে ব্যবস্থা করতে হয়। হয়ত তিনিও চান না। কিন্তু আমি যে চাই। তাই করতে হয়। বেশি রাজস্ব আসছে আবগারি থেকে। এমনি এমনি তো রাজস্ব বাড়েনি। এই রাজস্ব বাড়াতে গিয়ে ঘরে ঘরে মাতাল তৈরি করতে হয়েছে। পারিবারিক শান্তি বিঘ্নিত হয়েছে। মেয়েদের উপর অত্যাচার বেড়েছে। আমি আনন্দে মশগুল থেকেছি আমার রাজস্ব বেড়েছে বলে। আর সেই পথে হাঁটব না। রাজস্ব কমে, কমুক। মদে নিয়ন্ত্রণ আনতেই হবে, নইলে রাজ্যের সর্বনাশ। পাশের রাজ্যে নীতীশ কুমার পেরেছে, আমি পারব না? পারতেই হবে।
১০) শিক্ষা। এখানেও চূড়ান্ত দলতন্ত্র। আগেও ছিল। আমাদের সরকার আসার পর চক্ষুলজ্জাটুকুও নেই্। অধ্যক্ষ মার খাচ্ছেন। উপাচার্য ঘেরাও থাকছেন। আমাদের ছাত্র সংগঠনের ছেলেরা রীতিমতো অরাজকতা তৈরি করেছে। মাস্টারদের ডি এ দিতে পারিনি। ওদের সিপিএমের এজেন্ট মনে করেছি, তাই দিইনি। ভর্তি থেকে শুরু করে নিয়োগ, সব ব্যাপারেই চূড়ান্ত দুর্নীতি। এস এস সি, প্রাইমারি ঠিকঠাক নিতে পারিনি। জেলায় জেলায় আট লাখ, দশ লাখ দর উঠেছে। টাকা দিলেই চাকরি হবে, এমন নিশ্চয়তাও নেই। চাকরিও হচ্ছে না, টাকা আদায় করাও যাচ্ছে না। সৎভাবে, যোগ্যতার নিরিখে যে চাকরি হতে পারে, এটা কেউ বিশ্বাস করতেই চাইছে না। দলের অনুগত লোকদেরই বিভিন্ন কমিশনে বসানো আছে। কৃতী ছাত্রদের হাতে আমার লেখা কথাঞ্জলি তুলে দিয়েছি। সেখান থেকে প্রেরণা নিতে বলেছি। বুঝিনি, সেগুলো পড়ে ওই ছাত্ররা হাসতে পারে। এমন লোককে শিক্ষামন্ত্রী করেছি, যে দপ্তরটা বোঝেই না। আমার পি এইচ ডি হল না। আর নিজে শিক্ষামন্ত্রী হয়ে, ক্ষমতা দেখিয়ে পি এইচ ডি করে ফেলল। যে রিসার্চ গাইড, তাকে গুরুদক্ষিণা হিসেবে উপাচার্য করে দিল। এমন নজির সারা দেশে নেই। আমার রাজ্যে আছে। আর এসব চলতে দেওয়া যাবে না। যথার্থ গুণী মানুষকেই শিক্ষামন্ত্রী করতে হবে। তিনি যেন দপ্তরটাকে ঠিকঠাক চালাতে পারেন। তিনি যেন আমাকে খুশি করতে গিয়ে সিলেবাসে আমার জীবনী না ঢুকিয়ে ফেলেন। পাঠ্যবইয়ের শুরুতেই যেন আমার কথা না লিখতে হয়।
১১) মন্ত্রীসভা। বিভিন্ন দপ্তরের কথা লিখলাম। আরও কত দপ্তর আছে। কত ভুল আছে। কত অঙ্গিকার আছে। রবি ঠাকুর লিখেছিলেন চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শীর। আমার রাজ্যে ভয়শূন্য বলে কিছু নেই, উন্নত শীরও আমি পছন্দ করি না। দলের লোক দলের ভেতরে সুপরামর্শ দিলে তাঁকে উচিত শিক্ষা দিয়েছি। মন্ত্রীরা অবশ্যই আমার নির্দেশ মানবেন। কিন্তু কোথাও আমার ভুল হলে, বা তাঁর মাথায় নতুন কোনও পরিকল্পনা এলে যেন নির্ভয়ে বলতে পারেন। দলের মধ্যেও একা আমি বলব বাকি সবাই শুনবে, এমনটা যেন আর না হয়। সবাই বলুক, আমি বরং একদিন শুনব।