মিডিয়া সমাচার
জেমস অগাস্টাস হিকি
বর্তমান খবরের কাগজটি হাতে নিয়ে একেবারে শেষের পাতায় চলে যান। একেবারে নিচের লাইনটি পড়ুন। কী লেখা আছে? সম্পাদক শুভা দত্ত। বর্তমান প্রা লিমিটেডের পক্ষে জীবানন্দ বসু কর্তৃক প্রকাশিত। যে কোনও দিনের বর্তমানে শেষ পাতার শেষ লাইনে এই লেখাটি দেখতে পাবেন। জীবানন্দ বসু হলে বর্তমানে প্রকাশক। প্রকাশক মানে বোঝেন? বর্তমানে প্রকাশিত সমস্ত খবরের দায়িত্ব তাঁর। বর্তমানে প্রকাশিত কোনও খবর নিয়ে মামলা হলে প্রকাশককে আইনি লড়াই করতে হবে। পদমর্যাদায় এতটাই গুরুত্বপূর্ণ জীবানন্দ বসু।
এবার গত ২৩ মে, মানে বামফ্রন্টের নবান্ন অভিযানের পরের দিনের এই সময় সংবাদপত্রের প্রথম পাতা দেখুন। নবান্ন অভিযানের মোকাবিলা করতে গিয়ে পুলিশ যে সাংবাদিকদের পিটিয়েছে, তাঁদের নাম দেওয়া আছে এই সময়ে। মার খাওয়া সাংবাদিকদের মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য নাম জীবানন্দ বসু। দীর্ঘদিনের পোড়খাওয়া সাংবাদিক জীবানন্দ বসু, বর্তমানের সঙ্গে প্রথমদিন থেকে জড়িত জীবানন্দ বসু, বর্তমানের প্রকাশিক জীবানন্দ বসু।
কী আশ্চর্য জীবানন্দবাবুর নিজের কাগজেই তাঁর মার খাওয়ার কথা লেখা হয়নি। ঘটনার পরে কয়েকদিন কেটে গেলেও বর্তমানের প্রথম পাতায় সাংবাদিক নিগ্রহের প্রতিবাদ হিসেবে কোনও প্রতিবেদন ছাপা হয়নি। যেটুকু ছাপা হয়েছে, তা অত্যন্ত জোলো ভাষায় এবং ভেতরের পাতায়। ঘটনার প্রতিবাদে কোনও সম্পাদকীয় বা বিশেষ নিবন্ধ লেখা হয়নি।
গত কয়েকদিনের বর্তমান দেখুন। প্রথম পাতায় বীরভূমে অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ, কুলভূষণের ফাঁসি, মনুয়া, সিয়াচেন, সাপের বিষ উদ্ধার, ম্যাঞ্চেস্টারে নাশকতা— সব আছে। জীবানন্দ বসুর আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাটাই নেই। সম্পাদকীয় নিবন্ধগুলি দেখুন। ভেজাল ধরার অভিযান, কার কী লাভ হল, ভারতের নিখুঁত জবাব। বিশে, নিবন্ধের বিষয় মমতা–মোদির লড়াই এবং নকশালবাড়ি। কোথাও সাংবাদিক নিগ্রহের চিহ্নমাত্র নেই।
নন্দীগ্রাম পর্বে বুদ্ধদেববাবু নাম না করে বর্তমানকে বলেছিলেন, ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করব না। পরের দিন বর্তমানের প্রথম পাতার অর্ধেকটা জুড়ে গর্জে উঠেছিল বরুণ সেনগুপ্তর কলম। শিরোনাম ছিল, ‘বাংলা খুদে বুশকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, বর্তমানের গায়ে হাত দিয়ে দেখুন।’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারেননি। মারার কথাও বলেননি। শুধু বলেছিলেন, মেরে হাত গন্ধ করব না। তাতেই তাঁর সঙ্গে বুশের তুলনা করেছিলেন বরুণ সেনগুপ্ত। যদি তাঁর আমলে, তাঁর কাগজের প্রকাশকের গায়ে পুলিশের হাত পড়ত, তাহলে না জানি তিনি কী করতেন। হয়ত পুলিশমন্ত্রীকে সুলতান মামুদ বা নাদির শা বলে বসতেন।
বরুণ সেনগুপ্ত মারা যাওয়ার পরেও বর্তমানের প্রতিবাদী দারা কিছুদিন বজায় ছিল। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পরেই ২৪ ঘণ্টার সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল বর্তমান।কিন্তু এখন আপস করতে করতে বর্তমান একেবারেই পাপস হয়ে গিয়েছে। অন্য সাংবাদিক দূরে থাকুক, নিজের প্রকাশক আক্রান্ত হলেও প্রতিবাদ জানাতে ভয় পাচ্ছে। এই আপসের মূল্যে বর্তমান ঢালাও সরকারি বিজ্ঞাপন পাচ্ছে। কাগজের মুনাফা বাড়ছে। এডিটর মুখ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফরের সঙ্গী হচ্ছেন। সাংবাদিকরা মন্ত্রীদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। এরপর প্রকাশক মার খেল কী খেল না, তাতে কার কী যায় আসে!
পুনশ্চ: প্রতি রবিবার শুভা দত্তর নামে একটি কলম প্রকাশিত হয়। সেই লেখায় প্রতিবাদ হয় কিনা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।