কেষ্ট মুখার্জি
কোথাও শান্তি নেই। সব ব্যাটাকে ছেড়ে মাতাল ব্যাটাকে ধর। আমি নিজের পয়সায় না হয় এক দু গেলাস খাচ্ছি। এতে কার পিতৃদেবের কী? সংবিধানে অনেকগুলো মৌলিক অধিকার আছে। আবার অনেক কিছু লেখা নেই। ঠিক ধরেছেন, এই মদ খাওয়াটাও আমার অধিকার, মৌলিক অধিকার।
আচ্ছা, আমরা কি বলতে যাই, বেলুড় মঠে কেন খিচুড়ি হচ্ছে? আমরা কি বলতে যাই, লোকে আরসালানে কেন বিরিয়ানি খায়? তাহলে আমরা কেন মদ খাই, তা নিয়ে এত চিন্তা কেন বাপু? আরে বাবা, গাড়ি চালাতে গেলে অ্যাক্সিডেন্ট হয়। সবার হয়। বেলুড় মঠের সন্ন্যাসীদের গাড়ি চালাতে বলুন। তারাও সপ্তাহে দু চারটে অ্যাক্সিডেন্ট ঠিক করবেন। এর জন্য মদকে দোষারোপ করার কোনও মানে হয়! আর যদি দু–একটা হলই বা, তাতেই বা কী? ভূমিকম্প হচ্ছে, বজ্রপাত হচ্ছে, তখন কে মদ খায়, শুনি!
যাক গে, ঘোরের মধ্যে আছি। তাই বেশি বকছি। কাল রাতে আবার কান্ড নতুন শুনলাম। পানশালা নাকি পরীক্ষা করবে আমি গাড়ি চালানোর মতো অবস্থায় আছি কিনা। ভেবে দেখুন কান্ডটা। আমার পয়সায় আমি মদ খাব, আমার গাড়িতে আমি চড়ব কিনা, এটা পানশালা ঠিক করার কে? ওরে বাবা, তোরা তাহলে খাওয়ালি কেন? তোরা তো নিয়ম করতে পারিস, দু পেগের বেশি দেওয়া হবে না। তাহলেই ল্যাঠা চুকে যায়। নিজেরা যতখুশি খাওয়াবি। আর বাড়ি ফেরার সময় খবরদারি করবি? ইয়ার্কি? সরকারও তেমনি। ঘটে যদি এতটুকু বুদ্ধি থাকে। জেনে রাখবেন, মাতালদরে বুদ্ধি সবসময় বেশি।
১) পানশালার লোকটি ব্রেথ অ্যানালাইজার দিয়ে চেক করতে চাইল। আমি বললাম, আমার গাড়ি নেই। আমি বাসে যাব। ট্যাক্সিতে যাব। ওরা কিছু করতে পারবে?
২) যদি নিজের গাড়ি থাকেও, আমি বলতে পারি, সঙ্গে ড্রাইভার আছে। বা অন্য কেউ চালাবে। তখন ওরা কী করবে?
৩) আমি বলব গ্যারি সোবার্স বা ভিভ রিচার্ডসের কথা। সারা রাত হইহুল্লোড় করেও ওরা দিব্যি সেঞ্চুরি করত। আমি বলব শেন ওয়ার্নের কথা। সারারাত নাইট ক্লাবে কাটিয়েও পরের দিন সাত উইকেট নিয়ে ম্যাচ জেতাতো। তাহলে, কে কখন আউট হবে, সেটা পানশালার মালিক বুঝবে?
৪) যদি সে ক্রিকেট না বোঝে, যদি সে বুদ্ধিজীবী হয়! তাহলে আমি বলব শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কথা। সারা রাত খালাসিটোলায় কাটিয়েও কী অনবদ্য সব কবিতা লিখেছিলেন। ফিরতে গিয়ে গাড়িতেও চাপা পড়েননি, রাস্তায় পড়েও থাকেননি। তাহলে, তিনি যদি এত ভাল কবিতা লিখতে পারেন, আমি কেন সামান্য গাড়ি চালিয়ে বাড়ি যেতে পারি না? আচ্ছা মশাই, ট্রামে চাপা পড়ে কোন কবি যেন মারা গিয়েছিলেন? তিনি নিশ্চয় এসব ‘ছাইপাঁস’ গেলেননি! তাহলে, কী দাঁড়াল, মাতালরা তালে ঠিক থাকে। অন্তত জীবননান্দের চেয়ে বেশি সচেতন থাকে।
৫) তবে একটা ব্যাপার দারুণ লাগছে। ফেরার সময় রাতে কিছুতেই ট্যাক্সি পাওয়া যেত না। ব্যাটারা তিন গুন–চার গুন রেট হাঁকত। এবার আর আমাকে ট্যাক্সি ডাকতে হবে না। ওই পানশালাই ডেকে দেবে। একটা দুশ্চিন্তা অন্তত কমল। কিন্তু তাও একটা মৌলিক প্রশ্ন থাকছে। ট্যাক্সিওয়ালা যদি তিনগুন চায়, তাহলে বাড়তি ভাড়াটা কে দেবে? আমি নাকি ওই পানশালা? আচ্ছা পুলিশমামু। ট্যাক্সিওয়ালারা তিন গুন, চার গুন চায় কেন? কারণ, তারা জানে, এশহরের পুলিশ তাদের কিস্যু করতে পারেওনি, পারবেও না। তাই মিটারের থেকে যেটা বাড়তি চাইবে, সেটা বরং কলকাতা পুলিশই দিক।
পুলিশ মামা, পানশালাকে তো ট্যাক্সি ডাকতে বলছ। ট্যাক্সি নায্য ভাড়ায় যাবে, আগে সেই ব্যবস্থাটা তৈরি করো। মাতালদের সচেতন করার আগে তোমরা নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে সচেতন হও।