রাজীব মিশ্র
দুপুরে পেলাম সেই মর্মান্তিক খবরটা। মনে মনে কিছুটা তৈরিই ছিলাম। যেভাবে কষ্ট পাচ্ছিলেন, স্বপ্নের নায়ককে এমন অসহায় অবস্থায় দেখতে ভালও লাগে না। কত পুরনো স্মৃতি এসে ভিড় করছে।
কয়েকদিন আগেই একটা ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। চেনাই যাচ্ছিল না বিনোদ খান্নাকে। এ কী চেহারা হয়েছে! আসলে, বিনোদ খান্না বলতেই পুরনো সেই হাসিমুখটাই বারবার ভেসে ওঠে। আমাদের বেড়ে ওঠা আশির দশকে। তখন একের পর এক হিট ছবিতে মিঠুন চক্রবর্তী। সাংসদ হয়ে যাওয়ায় অমিতাভ ইন্ডাস্ট্রি থেকে কিছুটা দূরে। মফসসলের ভিডিও হলে আসত পুরনো ছবি। দেখতাম মুকাদ্দর কা সিকান্দার, অমর আকবর অ্যান্টনি, পরবরিশ। বলাই বাহুল্য, দেখতাম অমিতাভের আকর্ষণে। বনোদ খান্নাকে তখন মনে হত নিছকই অমিতাভের সহ অভিনেতা।
বয়স বাড়ল, দেখার চোখটা একটু প্রসারিত হল। একটু অন্যভাবে ভাবতেও শিখলাম। ঠিক তখনই একদিন টিভিতে দেখলাম মেরে আপনে। ১৯৭১ সালের ছবি। গুলজারের পরিচালনা। একেবারেই অন্য চেহারায় পেলাম বিনোদ খান্নাকে। আমার কাছে বিনোদ খান্নার সেরা ছবি ‘মেরে আপনে’। বিভিন্ন চ্যানেলে বিনোদ খান্নার টুকরো টুকরো মুহূর্ত, প্রিয় ছবি নিয়ে এত কথা। কিন্তু এই ছবিটার কথা উঠেই এল না। কিছুটা অবাকই লাগল। এমন একটা ছবির কথা সবাই কী বেমালুম ভুলে গেলেন!
তার আগে বাংলায় হয়েছিল আপনজন (১৯৬৮)। পরিচালনা করেছিলেন তপন সিনহা। সেই ছবিটাও দেখেছি। যতদূর মনে পড়ে, সেই ছবিতে ছিলেন স্বরূপ দত্ত, শমিত ভঞ্জ। আর তিন বছর পর তৈরি হওয়া হিন্দিতে বিনোদ খান্না–শত্রুঘ্ন সিনহা। ষাটের দশকের সেই উত্তাল সময়। কলকাতা ক্রমশ অশান্ত হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, পাড়ায় পাড়ায় ভয়ের আবহ। মেধাবী ছেলেরা গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন সেই উত্তাল সময়ের স্রোতে। সময়ের ছবিটাকে দারুণ বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরেছেন গুলজার। রাজনীতি মনষ্কতার ছবি, বাস্তবের বিশ্বাসযোগ্য এক দলিল।
এই ছবিতেই ব্যবহার করা হয়েছিল কিশোর কুমারের সেই মন ছুঁয়ে যাওয়া গানটা — কোই হোত জিসকা আপনা। সলিল চৌধুরির–র কী অসাধারণ কম্পোজিশান। গানটা যতবার শুনি, বুকের ভেতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে।বাঙালি হিসেবে গর্বটাও যেন বেড়ে যায়।
বিনোদ খান্না বলতেই আমার মনে বারবার ভেসে ওঠে এই গানের দৃশ্যটা। ৪৬ বছর পেরিয়ে গেল। এখনও কী জীবন্ত!

এই ছবিতে ক্লিক করুন। শুনে নিন সেই অসাধারণ গানটা। বিনোদ খান্নার প্রতি বেঙ্গল টাইমসের শ্রদ্ধার্ঘ্য।
(আপনার দেখা বিনোদ খান্নার সেরা ছবি কোনটি? আপনিও তার স্মৃতিচারণ করতে পারেন। দ্রুত পাঠিয়ে দিন বেঙ্গল টাইমসের ঠিকানায়। ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)