প্রেস ক্লাব ভাড়া নিলেই যা খুশি হুমকি দেওয়া যায়!

জেমস অগাস্টাস হিকি

media-samachar2

‌দিন কয়েক আগেই প্রেস ক্লাবে বসে ফতোয়া জারি করেছিল এক অর্বাচীন। নামটা মনে নেই। মনে থাকলেও তার নাম উল্লেখ করে তাকে বাড়তি প্রচার দেওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই। সেই লোকটি প্রথমদিন বলল, যে সোনু নিগমকে ন্যাড়া মাথা করে জুতোর মালা পরিয়ে ঘোরাতে পারবে, তাকে দশ লাখ টাকা দেওয়া হবে।
প্রতিবাদে সোনু মাথা কামিয়ে নিলেন। পরের দিন আবার প্রেস কনফারেন্স ডাকল সেই অর্বাচীন। এবার দাবি, মাথা ন্যাড়া করেছে। বাকি কাজগুলো তো করেনি।

সেই লোকটিকে নিয়ে লেখার কোনও ইচ্ছেও নেই। আমার অভিযোগ কলকাতা প্রেস ক্লাবের বিরুদ্ধে। এত প্রাচীন একটি সংস্থা। গণতন্ত্রের পীঠস্থান হিসেবে ধরা হয় এই প্রতিষ্ঠানকে। কত ঐতিহাসিক প্রেস কনফারেন্স হয়েছে এই প্রেস ক্লাবে!‌ কত ইতিহাস তৈরি হয়েছে!‌ সেই প্রতিষ্ঠানে বসে যে যা খুশি বলতে পারে?‌ এভাবে ফতোয়া জারি করতে পারে?‌ টাকা দিয়ে হল ভাড়া নিয়ে যে যা খুশি বলতে পারে?‌

press clubপ্রেস ক্লাবের কর্তারা বলতেই পারেন, সেই লোকটি কী বলবেন, আগে থেকে জানার উপায় ছিল না। এর পেছনে যুক্তি আছে। কিন্তু ওই মারাত্মক ফতোয়া জারি করার পর প্রেস ক্লাবের ভূমিকা কী ছিল?‌ প্রেস ক্লাবের কর্তাদের কি একবারও মনে হল না, এইরকম লোককে হল দেওয়া উচিত নয়?‌ প্রথমদিন না হয় জানতেন না। পরের দিন আবার ওই লোকটিকে হল ভাড়া দেওয়া হল কেন?‌ মাত্র কটা টাকার জন্য প্রেস ক্লাব নিজের ঐতিহ্যকে এইভাবে বিকিয়ে দেবে?‌
নাকি যেহেতু সংখ্যালঘু একজন এইরকম ফতোয়া দিয়েছে, তাই নীরবে মেনে নিতে হবে?‌ প্রশ্ন তুললে সরকার পাছে রেগে যায়!‌ এই মেরুদণ্ড নিয়ে আপনারা প্রেস ক্লাব চালাচ্ছেন?‌
এমনিতেই প্রেস ক্লাব সম্পর্কে অনেকের ধারণা খুব খারাপ। প্রচলিত ধারণা, সেখানে সস্তায় মদ পাওয়া যায়। সেই কারণেই সেখানে সাংবাদিকরা আড্ডা মারে, লোকের টাকায় মদ খায়। সেই ধারণা হয়ত এত তাড়াতাড়ি মুছে ফেলা যাবে না। তাই বলে সেই দুর্নাম আরও বাড়ুক, সেটা তো কাম্য হতে পারে না। প্রেস ক্লাবে কি কোনও বিবেকবান সাংবাদিক নেই?‌ কেন এইরকম লোককে হল ভাড়া দেওয়া হবে, এই নিয়ে কেউ একজন গর্জে উঠতে পারলেন না?‌ এত ঘটা করে কর্মসমিতি হল। একজন সদস্যও তো প্রতিবাদে পদত্যাগ করলেন না। প্রেস ক্লাবের সভাপতি হয়েছেন স্নেহাশিস শূর। সেই ছোটবেলা থেকে দূরদর্শনে এই মুখটা দেখে আসছি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা পড়ান। ভবিষ্যতের সাংবাদিকদের তৈরি করেন। তিনি সভাপতি হওয়ার পরেও প্রেস ক্লাবে এমন নজির স্থাপন হবে?‌ এরপর সাংবাদিকদের বিশ্বাসযোগ্যতা বলে আর কিছু থাকবে?‌ এখনও সময় আছে, সেই ফতোয়ার কড়া নিন্দা করুক প্রেস ক্লাবের কর্মসমিতি। বলা হোক, এই জাতীয় লোককে আর কোনওদিন হল ভাড়া দেওয়া হবে না। লাখ টাকা দিলেও না। সরকার উদাসীন থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। প্রেস ক্লাব নিজেরা উদ্যোগী হয়ে এফআইআর করুক সেই লোকটির বিরুদ্ধে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এত সৎ সাহস কি প্রেস ক্লাবের আছে?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.