সিবিআইকে একমাসের বেশি সময় নয়

স্বনাম গুপ্ত

কেউ কেউ সময় পেলে ভাল কাজ করে। কেউ কেউ সময় পেলে ঘুমিয়ে পড়ে। আমাদের সিবিআই হল দ্বিতীয় প্রজাতির। তাদের বেশি সময় দেওয়া মানেই ধামাচাপা দেওয়ার আয়োজন করা। অন্তত গত কয়েকবছর সিবিআইয়ের যা ট্র‌্যাকরেকর্ড, তাতে এটাই বলা যায়।
হাইকোর্টের কাছে নারদ মামলার অগ্রগতি রিপোর্ট দেওয়ার কথা সিবিআইয়ের। একমাস পর প্রাথমিক রিপোর্ট দেওয়ার কথা। সিবিআই নিশ্চয় প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়ে তদন্তের জন্য আরও সময় চাইবে। ধরে নেওয়াই যায়, আদালত সেই সময় দিয়েও দেবে। কিন্তু তারপর?‌ সেই তদন্ত আর ঠিকঠাক পথে এগোবে তো?‌ বিরাট এক সংশয় থেকেই যায়।

high court kolkataসিবিআই একমাস সময় পেল?‌ কী করল?‌ নিশ্চয় অনেককিছু করেছে। কিন্তু সিবিআইয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে হয়ত একটু বেশিই প্রত্যাশা করা যায়। যেটুকু সংবাদমাধ্যমে এসেছে, সেখান থেকে বলা যায়, ম্যাথু স্যামুয়েলের দেওয়া ভিডিও ফুটেজ চেক করা হয়েছে। ম্যাথু স্যামুয়েলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর বেশি কিছু জানা নেই। এটুকু জানি, যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁদের কাউকেই ডাকা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।
গত তিন বছরের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে, সিবিআই কোন পথে চলবে, সেটা নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক কখন কেমন, তার ওপর ভিত্তি করে। হয়ত অতি সরলীকরণ। কিন্তু সারদার ক্ষেত্রে তো আমাদের অভিজ্ঞতা সেরকমই। হঠাৎ একবার নড়েচড়ে বসে। আবার ঘুমিয়ে যায়। যেমন এখন আবার ঘুমিয়ে গেছে। একান্ত বৈঠকের পর সেই ঘুম আরও দীর্ঘায়িত হওয়ারই কথা। যাঁরা হনুমান মিছিল নিয়ে এত ব্যস্ত, তাঁরা সারদার বিলম্ব নিয়ে কেন যে একটা মিছিল করেন না!‌ সিবিআই যখন কাউকে ধরে, তখন কৃতিত্ব নিতে এই মহাশয়রা এগিয়ে আসেন। যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন এঁরা মুখ লুকিয়ে থাকেন।
সত্যি করে বলুন তো, সারদায় তদন্ত করতে এত সময় লাগে?‌ কোনও থানার হাবিলদার বা সিভিক পুলিশকে দায়িত্ব দিলে সেও সাতদিনে অন্তত সত্তরভাগ সমাধান করে ফেলত। অন্তত কার পকেটে কত গেছে, কে কে আসল পান্ডা, তার অনেকটাই ধরে ফেলত। সত্যিই বলুন তো, নারদা নিয়ে বিরাট কিছু রহস্য আছে?‌ কারা নিয়েছে, সবাই দেখছে। ভিডিওটা জাল নয়, সেটাও বোঝা গিয়েছে। কেন পার্লামেন্টের এথিক্স কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি, সেটাও বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তাহলে একমাসে এই অগ্রগতি কি পর্বতের মুষিক প্রসব নয়?‌ আদালতের কাছে আবেদন, যদি সিবিআই সময় চায়, সময় দিন। কিন্তু সেটা অনন্তকাল নয়। একমাসে যদি অগ্রগতি ঠিকঠাক মনে না হয়, একটু তিরস্কারও প্রাপ্য। আবার ওই একমাসের সময়ই দেওয়া হোক, এবং লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হোক। নইলে, আবার ধামাচাপা পড়ে যাবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.