স্বরূপ গোস্বামী
যে কোনও একটা ইস্যু পেলেই হল। সংসদ পণ্ড করে দেওয়াটা অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেছে। সংসদও অনেকটা সেই টিভি সিরিয়ালের মতো। টিভি সিরিয়ালে যেমন টানা দু মিনিট আপনি ঝগড়া বিহীন দৃশ্য দেখতে পাবেন না, সংসদেও তেমনি। কেউ কারও কথা শুনবেন না। সবাই চিৎকার করতেই ব্যস্ত।
বুধবারের অধিবেশনেও নিশ্চয় নির্ধারিত কিছু কর্মসূচি ছিল। সব পণ্ড। কে কোথাকার যোগেশ ভার্সিন। সত্যি করে বলুন তো, এর আগে কজন তার নাম শুনেছিলেন? সেই লোকটা বলে বসল, মমতা ব্যানার্জির মাথা এনে দিলে ১১ লাখ টাকা দেব। নিজেকে সস্তায় হিরো বানানোর জন্য দুম করে একটা মন্তব্য করে বসল। তা নিয়ে কিনা জাতীয় রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠল। রাজ্যসভা তোলপাড়, লোকসভা তোলপাড়। গোটা দেশ তার নাম জেনে গেল। কেউ ধিক্কার দিলেন। কেউ হয়ত মনে মনে বাহবাও দিলেন। হ্যাঁ, এমন বিকৃত মন্তব্য করার পরেও আমাদের দেশে বাহবা দেওয়ার লোকের অভাব নেই। যেমন টিপু সুলতান মসজিতের ইমাম বরকতি যেদিন মোদির মাথা চেয়ে হুঙ্কার ঝেড়েছিলেন, সেদিনও সবাই একবাক্যে তার নিন্দে করেননি। কেউ কেউ নীরব থেকেছিলেন।
কোনও সন্দেহ নেই, আলিগড়ের এই যুব মোর্চার নেতা যে মন্তব্য করেছেন, কোনও ধিক্কারই যথেষ্ট নয়। কিন্তু সেই অর্বাচীনকে নিয়ে সংসদ তোলপাড় হবে কেন? তাকে এত বিখ্যাত করে তোলা কোনও দরকার ছিল? ভেবে দেখুন, তাঁর মন্তব্য নিয়ে চিৎকার করছেন জয়া বচ্চন, মল্লিকার্জুন খাড়গে, সৌগত রায়রা। ডোমকলের জনসভায় পাল্টা বার্তা দিচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে ধিক্কার দেওয়ার বদলে বেসুরো গেয়ে গেলেন রূপা গাঙ্গুলি, দিলীপ ঘোষরা।
সংসদ তোলপাড় হল। সারাদিন টিভিতে তাকে নিয়ে চর্চা। সন্ধেতে নিশ্চয় সেটা নিয়েই সরগরম থাকবে স্টুডিওগুলো। নিশ্চিত থাকুন, বৃহস্পতিবার বাংলার সব কাগজের প্রথম পাতা জুড়ে থাকবে সেই বিকৃত হুমকির কথায়। মাত্র একটা বিবৃতি। সেই অখ্যাতকে নিয়ে এল পাদপ্রদীপের আলোয়। এত সহজে যদি দেশজোড়া পাবলিসিটি পাওয়া যায়, রোদে পুড়ে–জলে ভিজে–মার খেয়ে আন্দোলন করার কী দরকার? অন্যরাও যদি বিখ্যাত হওয়ার জন্য এই রাস্তা বেছে নেন!
শুধু কি যোগেশ ভার্সিন নামের লোকটাই বিকৃত? যাঁরা সেই বিকৃত লোকটিকে নিয়ে সারাদিন মেতে রইলেন, তাঁরাও কি কম বিকৃত?