নন্দ ঘোষের কড়চা
নন্দ ঘোষ অনেকদিন খেলা নিয়ে কলম ধরেননি। তিনি বললেন, মোহনবাগান কর্তারা একটা চিঠি লিখতেও পারে না! নীতা আম্বানিকে পাল্টা শর্ত দিতে পারে না? এক, দুই, তিন করে দশ দফা শর্ত। মোহন কর্তাদের হয়ে তিনিই লিখে ফেললেন। মোহন কর্তারা পড়ে দেখতে পারেন। এই চিঠিটাই পাঠিয়ে দিতে পারেন।
দীপ্তেন্দ্র কুমার সান্যাল (নীলকণ্ঠ) একটা প্রশ্ন করেছিলেন। ‘বেশি টাকা থাকলে কী হয়?’ তারপর নিজেই উত্তর দিয়েছিলেন— সিনেমার পোস্টারে সত্যজিৎ রায়ের উপরে আর ডি বনশলের নাম থাকে।
এখন যদি প্রশ্নটা করা হয়? তাহলে বলতে হবে, টাকা থাকলে মুকেশ আম্বানির বউও দেশের ফুটবলকে শাসন করেন। আর বাকি সবাই তাঁদের সামনে নতজানু হয়ে পড়েন। ‘ইয়েস ম্যাডাম’, ‘হেঁ হেঁ’ করে ফুটবল কর্তারা দাঁত কেলিয়ে হাঁসতে থাকেন।
বউদিমণির কী আবদার! মোহনবাগানের জার্সি বদলাতে হবে। রঙ বদলাবে। লোগো বদলাবে। পালতোলা নৌকোটাও হয়ত বদলে দেবে। রিলায়েন্সবাবুরা (বা গিন্নি) এখানেই থেমে থাকবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। আরও কতকিছু বদল চাইবে। বলবে হেড অফিস ময়দান চত্বরে রাখা চলবে না। রিলায়েন্স হাউসের কোনও একটা ঘরে হয়ত কর্পোরেট অফিস হবে। সরকারি ঠিকানা মুম্বই হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
মোহনবাগান কর্তারাও তেমনি। অঞ্জন মিত্র এমনিতে এত দিস্তা দিস্তা চিঠি লেখেন। আর যখন চিঠি লেখার দরকার, তখন কলমকে শীতঘুমে পাঠিয়ে দেন। রিলায়েন্স চুক্তি চাইছে। রিলায়েন্স বন্ধুত্ব করতে চাইছে। বেশ ভাল কথা। কিন্তু বন্ধুত্ব তো একতরফা হয় না। সমানে সমানেই হয়। রিলায়েন্স যদি শর্ত চাপায়, মোহনবাগানও পাল্টা শর্ত দিতেই পারে। অঞ্জন মিত্রদের মাথায় বুদ্ধি–সুদ্ধি সব ভোঁতা হয়ে গেছে। তাই, আমি নন্দ ঘোষ, মোহনবাগানের হয়ে পাল্টা কিছু শর্ত পাঠিয়ে রাখলাম। রিলায়েন্স কর্তারা ভেবে দেখতে পারেন। মোহনবাগান কর্তারাও ভেবে দেখতে পারেন।
১) আপনাদের জন্ম ১৯৬৫ তে। আর আমাদের জন্ম ১৮৮৯ এ। আপনাদের বয়স ৫১ বছর। আর আমাদের ক্লাবের বয়স ১২৮ বছর। তাহলে কে পুরনো? কে বড় দাদা হতে পারে?
২) আপনারা আতর্জাতিক হয়েছেন অনেক পরে। আর আমরা আন্তর্জাতিক হয়েছি সেই ১৯১১ তে। যখন খালি পায়ে গোরা সাহেবদের হারিয়েছিলাম। স্বাধীনতা সংগ্রামকে একধাপ এগিয়ে দিয়েছিলাম।
৩) আপনাদের মতো এমন শিল্পগোষ্ঠী দেশে অনেক আছে। কিন্তু জাতীয় ক্লাব দেশে একটাই আছে। জাতীয় ক্লাব, ব্যাপারটা বোঝেন?
৪) আপনারা কটা দেশে ছড়িয়ে আছেন? তার থেকে বেশি দেশে আমাদের সমর্থক ছড়িয়ে আছে। আমাদের সমর্থকদের কাছে আপনাদের কর্মীদের সংখ্যাটা নেহাতই নগন্য।
৫) আমাদের জার্সির রঙ বদলাতে হবে। বেশ, ভাল কথা। আপনাদেরও লোগোটা বদলে নিন। ওটা হোক পাল তোলা নৌকো। গ্রাহকরা আশ্বস্ত হবে, এই নৌকো ডুববে না।
৬) রিলায়েন্সের প্রতিটি অফিসের ছাদে মোহনবাগানের পতাকা উড়ুক। মুকেশ আম্বানির বাড়ির ছাদেও উড়ুক। বেশ বড় করে ১৯১১–র ‘অমর একাদশ’ এর ছবি টাঙানো হোক।
৭) প্রতিটি জিও–র হোর্ডিং ও বিজ্ঞাপনে মোহনবাগানের নাম ও লোগো থাকুক। বিজ্ঞাপনের মডেল হোক মোহনবাগানের ফুটবলাররা।
৮) আইএসএল মানেই ফিল্মস্টারের ছড়াছড়ি। তাহলে আর নীতা আম্বানি কেন? আপনাদের বাড়িতেই আরেক বউ তো সিনেমা করতেন। নীতার বদলে টিনা আম্বানিকে (মুনিম) আই এস এলের মুখ করা হোক।
৯) মোহনবাগানের সব ম্যাচে রিলায়েন্সের কর্তাদের মাঠে আসতে হবে। বিদেশ থেকে সেরা কোচ আনতে হবে। বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০) দুই শীর্ষ কর্তার যেমন মিল থাকবে। পরিবারেরও মিল থাকবে। টুটু বাবুর ছেলের পাশে মুকেশ আম্বানির ছেলেকে বসাতে হবে। আগে সে বেশ মোটাসোটা ছিল। না খাইয়ে তাকে পাতলা বানিয়ে দিয়েছেন। ওকে আবার খাওয়ান, খুব খাওয়ান। আবার আগের চেহারায় সে ফিরে আসুক। তারপর আমাদের টুম্পাই দাদার পাশে বসুক। তবে তো মানাবে।
আপাতত দশ দফা পাঠিয়ে রাখলাম। আরও কিছু যোগ করা যায় কিনা, মোহন কর্তারা ভেবে দেখুন। নইলে অঞ্জন মিত্ররা একটা কাজ করতে পারেন। নন্দ ঘোষের কড়চার এই লেখাটাকেই কপি পেস্ট করে রিলায়েন্স বাবুদের কাছে পাঠিয়ে দিন।