স্বরূপ গোস্বামী
তাঁর শতরানের সংখ্যা ৩৪। এর মধ্যে ১৩ টি আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। দ্বিশতরান তিনটি। সেরা ইনিংস কোনটি? তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির মধ্যে কোনও একটাকে বাছতেই পারতেন। অথবা, ৩৪টি সেঞ্চুরির মধ্যে তো বাছাই যায়। কিন্তু কী আশ্চর্য, সুনীল গাভাসকারের সামনে যতবারই এই প্রশ্ন এসেছে, তিনি বেছে নিয়েছেন বেঙ্গালুরুর ৯৬ রানের সেই ইনিংসটিকে। সেঞ্চুরি থেকে ঠিক চার রান আগেই ইকবাল কাশিমের বলে থেমে গিয়েছিল তাঁর ইনিংস। অল্প রানের জন্য হারতে হয়েছিল ভারতকে। তারিখটা ছিল ১৭ মার্চ। বছরটা ১৯৮৭। তার মানে, ঠিক তিরিশ বছর হয়ে গেল সেই ইনিংসটার।
আরও একটা তথ্য এই সুযোগে জানিয়ে রাখা যাক। সেটাই ছিল টেস্ট ক্রিকেটে গাভাসকারের শেষ ইনিংস। চিন্নাস্বামীতে শেষ দিনে যেন লাট্টুর মতো বল ঘুরছিল। ইকবাল কাশিম বা তৌসিফ আমেদ স্পিনার হিসেবে তেমন আহামরি কিছু নন। বিশ্বমান তো বাদ দিন, পাকিস্তানের সেরা স্পিনারদের তালিকাতেও তাঁদের নাম কখনও আসবে না। সেই ম্যাচে ছিলেন না আব্দুল কাদিরও। তবু ইকবাল কাশিম আর তৌসিফ আমেদকেই যেন ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছিল। গাভাসকারের ৯৬ ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল শ্রীমান অতিরিক্তর (এক্সট্রা, ২৭ রান)। ব্যাট হাতে দ্বিতীয় আজহারউদ্দিনের ২৬। ৬ জন ফিরে গিয়েছিলেন এক অঙ্কের রানে। এমন ভাঙা উইকেটে আর কখনও তিনি ব্যাট করেছেন বলে মনে হয় না। ভেবে দেখুন, যিনি হোল্ডিং, গার্নার, রবার্টস আর মার্শালকে বিনা হেলমেটে অনায়াসে সামলেছেন, তিনি কিনা বলছেন, বেঙ্গালুরুর সেই ৯৬ রানটাই ছিল সেরা।
তখনও পর্যন্ত কেউ জানতেন না, সেটাই তাঁর শেষ টেস্ট হতে চলেছে। নিজেও হয়ত এমন সিদ্ধান্তে আসেননি। কয়েকমাস পরেই দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ। বয়স ৩৭ হলেও, ১২৫ টেস্ট খেলা হয়ে গেলেও, ফর্মের বিচারে দেশের সবথেকে অপরিহার্য ব্যাটসম্যানের নাম তখনও সুনীল মনোহর গাভাসকার। তার আগে অবসর নিয়ে দু একবার জল্পনা ছড়িয়েছে। কিন্তু গাভাসকারের ফর্মের কাছে দ্রুত সেই জল্পনা হারিয়েও গিয়েছে। অবসরের কথা ঘোষণা করেছিলেন তার কয়েক মাস পরে, লর্ডসের বাই সেন্টিনারি ম্যাচের পর। বিশ্ব একাদশের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচেও করেছিলেন দুরন্ত ১৮৮। তারপরই আজকাল পত্রিকার দেবাশিস দত্তকে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, টেস্ট ক্রিকেট আর নয়। আশির দশকের সেরা ক্রিকেট এক্সক্লুসিভ সম্ভবত এই খবরটাই। জানতেন না বাবা মনোহর গাভাসকার, এমনকী স্ত্রী মার্সেনিলও।
কোনও বিদায়ী ম্যাচ বা ফেয়ারওয়েল চাননি। নিঃশব্দেই জানিয়ে দিয়েছেন, শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছি। যা আজও দৃষ্টান্ত। কীভাবে, কখন সরে দাঁড়াতে হয়, যখনই সেই প্রসঙ্গ আসে, আজও উঠে আসে সুনীল গাভাসকারের নাম। সেই বিদায়ী ম্যাচের তিরিশ বছর। সেই সেরা ইনিংসের তিরিশ বছর। কেমন নিঃশব্দে পেরিয়ে গেল। কেউ জানতেও পারল না!