অভিষেক, নেতা হওয়া এত সহজ নয়

রক্তিম মিত্র

কাগজে একটি খবর পড়লাম। সাতগাছিয়া এলাকায় পুলিশ নাকি তিনজনকে আটক করেছিল। মুচলেকা দিয়ে তারা নাকি ছাড়া পায়।
তাদের অপরাধ, সোনালী গুহকে তাঁরা নাকি প্রার্থী হিসেবে চান না, এই মর্মে পোস্টার সাঁটিয়েছিলেন।
অনেকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, সাতগাছিয়া থেকে এবার সোনালী গুহ টিকিট পাচ্ছেন না। তাঁর বদলে টিকিট দেওয়া হবে অভিষেক ব্যানার্জির বাবা অমিত ব্যানার্জিকে। সোনালী নিজেও সম্ভবত বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁকে টিকিট দেওয়া হবে না। কিন্তু জেলা কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে মমতা ব্যানার্জি জানিয়ে দেন, জেলায় তৃণমূলের সব বিধায়ককেই টিকিট দেওয়া হবে। অর্থাৎ, এবারও বহাল থেকে গেলেন সোনালী।

abhishek banerjee
সোনালী টিকিট পাচ্ছেন না, এমন গুঞ্জন শুনে সোনালী-বিরোধী গোষ্ঠী খুশি হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে আবার টিকিট দেওয়ার ঘোষণায় তাঁদের অনেকেই হতাশ। তাদেরই কেউ কেউ হয়ত অতি উৎসাহে পোস্টার লাগিয়ে দেয়। কে এই পোস্টার লাগিয়েছে, তৃণমূল দলীয়ভাবে তার তদন্ত করতেই পারে। প্রয়োজনে শাস্তিও দিতে পারে। তাই বলে, এই কাজে থানাকে ব্যবহার করতে হবে ?
সেই পোস্টার তো মাওবাদিদের পোস্টার ছিল না। সেই পোস্টারে তো কোনও নাশকতার হুমকি ছিল না। কোনও সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বিষয়ও ছিল না। কোনও দেশদ্রোহীতার বার্তাও ছিল না। তাঁদের দাবি ঠিক হোক বা ভুল, প্রার্থী বদল হোক, এই দাবিটুকু করার অধিকার তাঁদের নেই ? এর তদন্ত পুলিশ করবে কেন ? পুলিশ কেন তাদের ধরে এনে শাসানি দেবে ? কেনই বা মুচলেকা নেবে ?
শোনা যায়, অভিষেক ব্যানার্জির নির্দেশেই নাকি পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিষেক এমন নির্দেশ দিতেই পারেন। পিসির কল্যাণে যতই তিনি সাংসদ হোন, রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক ব্যাপারে তিনি কতটা অজ্ঞ, বারেবারেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। কে কাকে প্রার্থী চাইছে, সেটা একান্তই তার নিজস্ব বিষয়। দল ব্যবস্থা নিলেও নিতে পারে। কিন্তু থানা ব্যবস্থা নেওয়ার কে ? অভিষেকের মতো নেতারা থাকলে তাঁর নির্দেশ এমন ভুলভালই হয়। আর পুলিশকেও চাপের মুখে আইন ভুলে যেতে হয়।

ঠিক এক বছর আগের কথা।পূর্ব মেদিনীপুরের একটি সভায় অভিষেককে মঞ্চে উঠে চড় মেরেছিলেন এক যুবক। নিসন্দেহে অন্যা্য়। কিন্তু সেই মঞ্চে, পুলিশের সামনেই প্রায় এক ঘণ্টা ধরে মঞ্চের উপরেই নির্মমভাবে মারধর করা হয় সেই যুবককে। টানা এক ঘণ্টা ধরে অভিষেকের সামনেই সেই যুবককে মারা হল। মারলেন জেলা পরিষদ কর্মাধ্যক্ষ, বিধায়ক, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছিলেই অভিষেক। থামাতে যাননি। সেই যুবককে দীর্ঘদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল। অভিষেকের সামনেই তাঁর দলের নেতারা মাথা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ডিএসপি-র। থানা আক্রমণও হয়েছিল। চড় মারা সেই যুবকের নামে খুনের চেষ্টা সহ নানা রকম ধারা। কিন্তু যারা অভিষেকের সামনে সেই ছেলেটিকে এক ঘন্টা ধরে মেরে মৃত্যুর মুথে ঠেলে দিলেন, যাঁরা ডিএসপির মাথা ফাটালেন, যাঁরা থানা আক্রমণ করলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হল না। সেদিনই বোঝা গিয়েছিল, অভিষেক নিছক একজন ভাইপো, কখনই নেতা নন। যাঁর সামনে এক ঘণ্টা ধরে এক যুবককে মারা হল, যিনি তা থামাতে পারেন না, নেতা হওয়ার কোনও যোগ্যতা তাঁর নেই।
সাতগাছিয়ার ঘটনাতে আবার বোঝা গেল, তিনি নিছক একজডন ভাইপো। নেতা হয়ে উঠতে অনেক দেরি।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.