কমরেড, এই জোট ব্যুমেরাং হয়ে যাবে না তো !

সরল বিশ্বাস

গত কয়েকদিন হাওয়ায় শুধু একটাই শব্দ- জোট। সব জায়গায় প্রায় একটাই প্রশ্ন- জোট হচ্ছে তো ? কেউ কেউ ভাবছেন, জোট হলেই বোধ হয় তৃণমূলকে সরানো যাবে। কেউ ভাবছেন, জোট না হলে বামেদের সমূহ ক্ষতি হয়ে যাবে। একমাত্র জোট হলেই জোর ধাক্কা দেওয়া যাবে।
আমিও একজন বাম মনষ্ক মানুষ। মিছিলে-জাঠায় থাকি না। লোকাল, জোনাল তো দূরের কথা, পার্টি মেম্বারশিপটুকুও নেই। তবু বামেদের সাফল্য দেখলে ভাল লাগে। ভুল বা বিচ্যুতি দেখলে কষ্ট পাই। কেন জানি না, এই জোট ঠিক মেনে নিতে পারছি না। বারবার মনে হচ্ছে, এই জোটে লাভের থেকে ক্ষতিই বেশি। স্নেহের স্বভাবই অকারণ অনিষ্টের আশঙ্কা করা। আমারও হয়ত তেমনটাই হয়েছে।
হ্যাঁ, জোট হলে উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের আসন কিছুটা কমবে। কিন্তু বামেদের লাভের থেকে ক্ষতি অনেক বেশি। উত্তরবঙ্গে মোট ৫৪ টি আসন। এর সঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার ২২ আসন ধরলে, গঙ্গার ওপারে দাঁড়াচ্ছে মোট ৭৬ আসন। এইসব জেলায় কংগ্রেস অনেকটাই শক্তিশালী। শেষ লোকসভা নির্বাচনেও এইসব এলাকায় কংগ্রেস বেশ ভাল ফল করেছে। কংগ্রেস খুব কম করে হলেও এই কটি জেলা থেকে চল্লিশ আসন চাইবে। দিতেও হবে। এই চল্লিশ আসনের মধ্যে হয়ত ২৫-৩০ খানা জিতেও যাবে। কিন্তু বামেদের অবস্থা খুব একটা ভাল হবে না। ৩০-৩৫ টি আসনে লড়ে হয়ত ১৫-২০ টি আসন আসতে পারে। অথচ, বাম প্রার্থীরা যদি শুধুমাত্র নিজেদের শক্তিতে লড়ত, তাহলে প্রায় ৪০ আসন পাওয়ার সম্ভাবনা। কংগ্রেসের ভোটে অনেকটা থাবা বসাবে তৃণমূল, যাতে বামেদের জয়ের রাস্তা পরিষ্কার হবে। সহজ কথা, বামেদের ভোট কংগ্রেসে পড়লেও, কংগ্রেসের কত শতাংশ ভোট বামেদের বক্সে পড়বে, বেশ সন্দেহ আছে। দক্ষিণবঙ্গেও কংগ্রেস অন্তত ৪০ আসন চাইবে। উত্তরে না হয় পায়ের তলায় তবু মাটি আছে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে বড়জোর দশটি আসনে কংগ্রেস জামানত রক্ষা করতে পারবে। অথচ, তাদের ছাড়তে হবে প্রায় ৪০ আসন।

rahul, adhir
এরপরেও কংগ্রেসের ভোট বামে পড়বে কিনা, আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কারণ, কংগ্রেস সমর্থকদের একটা বড় অংশ নেতাদের দিকেই তাকিয়ে থাকে। একেক এলাকার দু তিনজন কং নেতাকে প্রভাবিত করা তৃণমূলের পক্ষে মোটেই কঠিন নয়। অর্থ দিয়ে, নানারকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে কংগ্রেসের নিচুতলার ভোট অনেকটাই কেটে নেওয়ার চেষ্টা করবে। তাছাড়া, কংগ্রেস যদি ৪০-৪৫ আসনে জিতেও যায়, ধাপে ধাপে কয়েকজনকে ভাঙিয়ে নেওয়া কী এমন কঠিন ব্যাপার। বাম কর্মীরা খেটেখুটে জেতাবেন, আর সেই প্রার্থীর হাতে মুকুল রায় হয়ত তৃণমূলের পতাকা ধরিয়ে দেবেন। তাঁকে দিয়ে বলানো হবে, ‘মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে যে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে, তাতে সামিল হলাম।’

rahul, yechuri
তাছাড়া, আদর্শগত ফারাক তো আছেই। ভোটের তাগিদে আসন সমঝোতা হতে পারে। কিন্তু এই আঁতাত কদিন টিকবে ? ক্ষমতায় এলে, মন্ত্রী নিয়ে দরাদরি। যে কোনওদিন হাত ছেড়ে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাতেই পারে। নীতিহীন জোট হলে কী হয়, তা তো তৃণমূলকে দেখেই বুঝতে পারছেন। আগের নির্বাচনে সবার হাত ধরেছিল। এখন তদের পাশে কেউ নেই। সেখানে বামেদের দেখুন। এই দুর্দিনেও কেউ ছেড়ে যায়নি। জোট হলে বড়সড় আত্মত্যাগ করতে হবে শরিকদের। তবু তাঁরা মেনে নিয়েছেন। এই কঠিন সময়ে এটাও বড় এক ভরসা জোগায়। কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলে, সেই জোট কতটা আন্তরিক হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
২০০১ সালে ঠিক ভোটের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে তড়িঘড়ি জোট করেছিল তৃণমূল। ফল কী হয়েছিল, সবাই জানে। এবা্রও এই জোট শেষমেষ ব্যুমেরাং হয়ে যাবে না তো ?

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.