‌সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে

সুগত রায়মজুমদার

 

vote6
৭০–‌এর দশক থেকেই বাংলায় শুরু হয়েছে জোরজুলুমের নির্বাচন। সেই নির্বাচন পরম্পরাভাবে ২০১৭–‌এও চলছে। ৭০–‌এ যুক্তফ্রন্ট আমল থেকে চলে আসছে। ১৯৭২–‌এ কংগ্রেস দল নির্লজ্জভাবে বন্দুক ও বোমা ব্যবহার করে নির্বাচনে একচেটিয়া আসন ছিনিয়ে নেয় বামফ্রন্টের হাত থেকে। আসে কংগ্রেস শাসন। সিদ্ধার্থ রায়ের নেতৃত্বে। এরপর ১৯৭৭–‌এও হয় ছাপ্পা ও বুথ দখলের ভোট। তার পর ১৯৭৭–‌এ শাসনে আসে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। ‌কংগ্রেসকে হারিয়ে। তার পর থেকে সিপিএমের ইতিহাস সকলেই জানেন। বহু মানুষ আছেন, যাঁরা বহুদিন যাবত ভোট দিতে পারেননি। দীর্ঘ ৩৪ বছর রাজত্ব করার পর ২০০১–‌এ বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, সিপিএম ইভিএমে কারচুপি করেছিল। তখন বেশিরভাগ মানুষ আশা করেছিল তৃণমূল আসতে পারে। ২০০৬–‌এও সেই অবস্থা হয়েছিল। কিন্তু সিপিএম ২৩৫ আসন নিয়ে এসেছিল। তখনই সিপিএমের পতন শুরু হল। মানুষ হতাশ হয়ে পড়ছিল। এই আত্মসন্তুষ্টিই সিপিএমের পতন ডেকে আনল। ঘটতে থাকল সিঙ্গুরের ঘটনা। কৃষকের জমি কেড়ে নিয়ে শিল্পপতিদের হাতে দিতে লাগল। নন্দীগ্রামে জমি কাড়ার জন্য সাধারণ মানুষের ওপর সরকারের পুলিস গুলি চালিয়ে জনপ্রিয়তা শেষ প্রান্তে এনে দিল। ঘটল নেতাইয়ে গুলিচালনা। এরপর মানুষ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ঘুরে দাঁড়াল। ফলে সিপিএমের পতন হল ২০১১ সালে। সিপিএম যে ভোটে কারচুপি করে টিকে থাকছিল, সেই পথই ধরল তৃণমূলও। সল্টলেক পুরসভা নির্বাচনে মানুষের আস্থা ভেঙে দেয় তৃণমূল। এর পর এই ভোটই পরম্পরা হতে লাগল। মানুষের গণতন্ত্রকে কেড়ে বেশিদিন টেকা যাবে না। তৃণমূলও এখন সেই পথই ধরে নিতে লাগল। তারা নিজেদের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। সারদা, নারদা দেখে ভয় পেয়েছে। ফলে সেই কুপথই ধরে নিয়েছে। এই পথ যদি এখনও তৃণমূল ত্যাগ না করে, তা হলে ভবিষ্যতে তৃণমূলকেও এর খেসারত দিতে হবে। সাধারণ মানুষ কিন্তু ক্ষমা করবে না। সাধারণ মানুষ দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএমকে রেয়াত করেনি। তৃণমূলকেও করবে না। সামনের নির্বাচনগুলিতে যদি এই পথই অনুসরণ করে, তা হলে তৃণমূলেরও সেই গতিই হবে। অন্য কোনও দল দখল করবে সেই জায়গা। এটা অস্বাভাবিক নয়। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা মানুষ বরদাস্ত করবে না। এর থেকে কি বাংলার মানুষের নিস্তার নেই? অন্য কোনও রাজ্যে তো এই অভিযোগ শোনা যায় না। এই প্রথাই কি তাহলে আমাদের পরম্পরা হযে দাঁড়িয়েছে?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.