সরল বিশ্বাস
সিউড়ির সঙ্গে বোধ হয় জলের একটা যোগ আছে। সিউড়ির সঙ্গে যোগ আছে অভিনব প্রতিবাদেরও। বিধানসভায় স্বপনকান্তি ঘোষের অভিনব প্রতিবাদ মনে করিয়ে দিল সিউড়ির আরেক প্রাক্তন বিধায়কের কথা।
এই প্রজন্মের অনেকেই হয়ত সুনীতি চট্টরাজকে চেনেন না। না চেনারই কথা। কারণ, কাগজে বা টিভিতে তাঁর কথা সেভাবে পাওয়া যায় না। গুগল ঘেঁটে কোথাও তাঁর ছবিও পাওয়া গেল না। অথচ, একসময় বিধানসভায় তিনি ছিলেন বর্ণময় এক চরিত্র।
জিতেছেন সাতাত্তরে। জিতেছেন বিরাশিতে। মাঝে দু’বার হারলেও আবার স্বমহিমায় ফিরে এলেন ছিয়ানব্বইয়ে। সেবার তিনি এক অভিনব কান্য করে বসলেন। সময়টা ছিল বর্ষাকাল। রাস্তায় জল, কাদা। এক অভিনব প্রতিবাদের রাস্তা বেছে নিলেন বিতর্কিত ‘সোনাদা’ (এই নামেই তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন)।
সেবার দিব্যি শুট-প্যান্ট পরে এলেন। এসেই চলে গেলেন টয়লেটে। ব্যাগ থেকে রের করলেন একটা তোয়ালে। সাফারি, শুট সব খুলে ফেললেন। পরনে শুধু তোয়ালে আর স্যান্ডো গেঞ্জি। ওই পোশাকেই সোজা বিধানসভার ভেতর ঢুকে পড়লেন। তখন এত টিভি চ্যানেল ছিল না। লাইভ টেলিকাস্ট ছিল না। দূরদর্শন থাকলেও বিধানসভায় আসতেন শুধু রিপোর্টার, কোনও ক্যামেরাম্যানও থাকতেন না। নইলে হয়ত হইচই পড়ে যেত।
সেদিন সুনীতিবাবু কী বলেছিলেন? সুনীতিবাবুর দাবি ছিল, আমার এলাকার মানুষ এই জল-কাদার মধ্যে চলাফেরা করছে। তারা জামা প্যান্ট পরে রাস্তায় হাঁটতে পারছে না। তাদের গেঞ্জি আর গামছা পরেই হাঁটতে হচ্ছে। আমি তাদের প্রতিনিধি। তাই আমি এই পোশাকেই এসেছি।
সেদিন সুনীতিবাবু ছিলেন বিরোধী দলের বিধায়ক। এদিন স্বপনবাবু শাসক দলের বিধায়ক। স্বপনবাবুর প্রতিবাদ মোটেই গেঞ্জি বা গামছা পরে প্রতিবাদ করেননি। প্রতিবাদের দাবিগুলো আলাদা। প্রতিবাদের ধরণ আলাদা।
তবু সেই জল, সেই সিউড়ি, আর সেই অভিনব প্রতিবাদ। অন্তরালে চলে যাওয়া সেই সিউড়ির সেই ‘সোনাদা’ আবার যেন ফিরে এলেন।