ভুলেও সন্ধ্যা বেলায় আত্মীয় বা বন্ধুর বাড়িতে যাবেন না

 

সব ঘরেই চলছে সিরিয়াল। শাশুড়ি-বউয়ের ঝগড়া নতুন মাত্রা পাচ্ছে এই সিরিয়াল থেকে। ভেঙে পড়ছে পারিবারিক কাঠামো। তাই নিয়েই লিখলেন সংহিতা বারুই।।

সন্ধ্যাবেলায় যে কোনও বাড়িতে গিয়ে কলিং বেল বাজালেন , বাড়ির গিন্নি  একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুললেন । ভিতরেও গেলেন। কর্তা বা বাকি সদস্যরা  আছেন কিন্তু সবাই নির্বাক । মাঝে মধ্যে কথা বলছেন, কিন্তু সেটা অপ্রাসঙ্গিক । চা দেওয়া তো দূরের কথা ,এক সময় নিজেকে খুব অপমানিত মনে হতে লাগবে।

serial3

উঠবেন উঠবেন করছেন, ঠিক সেইসময় গিন্নি বলে উঠেবেন, বিশেষ কোনও দরকার আছে ?  না হতবাক হবার কিছু নেই , বিকাল পাঁচটা থেকে শুরু হয়ে যায় প্রিয় সিরিয়াল , রান্না- বান্না , অনেক অনেক টাকা জেতার গেম শো । রোজকার সাংসারিক কুট-কাচালি যুক্ত জনপ্রিয় সব সিরিয়াল ।একটা পর্ব  মিস মানে জীবনের অনেক কিছু হারিয়া যাওয়া। তাই গিন্নি মা এই কথা বললেন । আপনি ভাবতেই পারেন ঘণ্টা খানেক বসে থাকলাম সেটা দোষের না  । সন্ধ্যায় কেনও এসেছি এটা দোষের । প্রায় সব ঘরেই ছবিটা একই রকম । বিকাল থেকে সিরিয়ালের দাপটে  টেকাই মুশকিল । অবসরপ্রাপ্তকর্তা প্রথম প্রথম রাগ করতেন, বিরক্ত হতেন।  ইচ্ছে করত একটু খবর দেখার । কিন্তু রিমোট  গিন্নির দখলে । ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। অগত্যা তিনিও  হয়ে গেলেন সিরিয়ালের দর্শক। এমনই অবস্থা তিনি এখন গিন্নিকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন কখন কোন সিরিয়াল হবে।

পারিবারিক মেগা সিরিয়াল । আধ ঘণ্টায় মাথা গরম হতে বাধ্য । বেনারসি ,জারদসি পরে রান্না করছে,  সঙ্গে গা ভর্তি গয়না । কোনও দিন মুকেশ আম্বানীর স্ত্রীও  বোধ হয় এত গয়না বা বেনারসী ও জারদসি পরে রান্না ঘরে যায় না । কে শোনে এসব যুক্তি? চিত্রনাট্য দেখলে কান্না পেয়ে যাবে। সস্তা, চটুল, চিৎপুর মার্কা সংলাপ। কিন্তু তাতেই বেশ মজে আছে বাঙালির ড্রয়িংরুম। শাশুড়ি শিখছেন কী করে বউমাকে টাইট দেওয়া যায়। বউমা খুব পিছিয়ে আছেন, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই । পাশের ঘরের টি ভি তাঁর দখলে । তিনিও অন্য একটি সিরিয়ালে মগ্ন । তিনি শিখছেন , কীভাবে বাইরের লোকজনের মাঝে শাশুড়িকে অপদস্থ করা যায় । তাই এখন পারিবারিক ঝগড়া গুলোও কেমন যেন বদলে গেছে। কোমর বেঁধে ঝগড়া নয়। শাশুড়ি বা বউমার সংলাপে যা পাবেন , তার বেশির ভাগটাই সিরিয়ালের ধার করা ।একটু মনে মনে ভেবে দেখুন। । যেসব ঘরে এই সিরিয়াল দেখার চল বেশি , সেইসব সংসারে অশান্তিও সবথেকে  বেশি। অলস মস্তিষ্কে যতরকম ফন্দিফিকির ঢুকিয়ে দিচ্ছে এই সিরিয়াল নির্মাতারা।

চিত্রনাট্যের নানা বাঁকে অবৈধ সম্পর্ক  আর পরকীয়ার ছড়াছড়ি । প্রত্যকের দুটো করে বউ । বাড়ির কাজের লোকেদের দের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের  পরিণতি বিয়ে। সিরিয়াল মেগা হলে তো কথাই  নেই। কবে শেষ হবে,  কারও জানা নেই , সে হিন্দি হোক বা বাংলা । অন্য দিকে হিন্দি  সিরিয়ালের ভক্ত কম বয়সী ছেলে মেয়েরা  । তবে তারা টি ভির উপরে খুব বেশি নির্ভর করে না।  কারণ, তাঁদের হাতে থাকা মোবাইলটা সব সমস্যার সমাধান  করে দেয় বিভিন্ন অ্যাপসের মাধমে । একবার ডাউন লোড করে নিলেই হল । বন্ধুদের সঙ্গে চ্যাটও  করা যায়,  আবার সিরিয়াল ও দেখা যায়। এক সঙ্গে দুই কাজ । এখানে থেকে ত্রিকোণ প্রেমের পাঠ নিয়ে নিজের জীবনে প্রয়োগ করে  জটিলতা বাড়িয়ে তুলছে । পরিণাম হতাশা , আত্মহত্যা । পোশাক হাঁটা চলা খাওয়া -দাওয়া , কথায় কথায় ইংরাজি বলা ,হিন্দি বলা, সবই রপ্ত করছে এই সিরিয়াল থেকে ।

serial5

এতো গেল একটা দিক ,অন্য দিকে সিরিয়াল যখন আর টানা  যাচ্ছে না তখনই  গল্পের মোড়  ঘুরে যায়। অবাস্তব  পৌরাণিক কাহিনীর প্রবেশ ঘটে,  যার মাথা মুন্ডু কিছুই নেই ,সাপের দুধ খাওয়া ,নাগিন কন্যা , মন্ত্র- তন্ত্র ,হোম-যোগ্য কি  থাকেনা ? আট থেকে আশি সবার চোখ যেখানে আটকায় সেটা  হল  শিশু চরিত্র, অমানুষিক অত্যাচার , যা শিশু মনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে । বা অতি পাকামো অভিনয় ।  স্কুল গিয়ে সে সব নিয়ে আলোচনা খুব বেশি হয়, ফলে দেখা যাচ্ছে মধ্য বিত্ত পরিবার থেকে উচ্চ বিত্ত পরিবার  সবাই সিরিয়ালের ধাঁচে চলছে । সিরিয়ালের নামানুসারে শাড়ি , চুড়িদার সবই বেরিয়েছে, বিক্রিও হচ্ছেও খুব।

এ ভাবেই পারিবারিক মেলোড্রামা আসলে পারিবারিক কাঠামোকেই ভেঙে দিচ্ছে। বাঙালি একদিন হয়ত বুঝবে। সেদিন হয়ত অনেক দেরি হয়ে যাবে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.