ভরসা থাকুক বেলাশেষের আজানে আর শাঁখের সুরে

নজরুল ইসলাম

আপনার কোনও আত্মীয় ধূলাগড়ে থাকেন। আত্মীয় না হোক বন্ধু বা পরিচিত কেউ ?‌ একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন তো, সেখান কার অবস্থা কেমন । সাঁকরাইল, আন্দুল বা আশপাশের এলাকাতেও খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। তাহলেই জানতে পারবেন, গত সাতদিন কেমন থমথমে পরিবেশ ও ভয়েব আবহ সেখানে কাজ করছে।

বাংলা কী অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে, সে কথা কি নবান্নের কর্তারা বুঝতে পারছেন না ?‌ এসব খবর চেপে যাওয়া হয়। তাই কাগজ বা চ্যানেলে এসব খবর পাওয়া যায় না। অন্য জায়গায় যেন এই অশান্তি ছড়িয়ে না পড়ে, সেই কারণেই এই চেপে যাওয়া। কিন্তু ভেতরে যখন দগদগে ঘা হয়ে যায়, তখন বাইরের স্নো–‌পাউডার দিয়ে কত আর চাপবেন ?‌

কত বাড়ি লুটপাট হল, কত বাড়িতে আগুন লাগানো হল, একটু খোঁজ নিয়ে দেখুন। পরপর দুদিন প্রায় তিন হাজার বোমা পড়ল। বাইরে থেকে আসা প্রায় সাত আট হাজার লোক দাপিয়ে বেড়ালেন এলাকাজুড়ে। ভয়ে সবাই দরজা–‌জানালা বন্ধ করে বসে রইলেন। অনেকে বাড়িছাড়া, ভয়ে ফিরতেই পারলেন না।

sampriti2

এতটুকুও অতিরঞ্জিত নয়। নিজোর সোর্স কাজে লাগিয়ে একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন। এই কথা নবান্ন জানত না, কালিঘাট জানত না ?‌ সব জানত। কিন্তু মৌলবাদিদের মাথায় তুলতে তুলতে পরিস্থিতি আয়ত্বের বাইরে চলে গেছে। স্থানীয় পুলিশ একেবারেই নিষ্ক্রিয় হয়ে বসেছিল। পরের দিন র‌্যাফ নামিয়ে মাশুল দিতে হল। সাতদিন পরেও এলাকায় কার্যত কারফিউ। এখনও শুনশান।

কারা এল, কোথা থেকে এল, সবাই জানে। কিন্তু কিছু করার নেই। কাদের উস্কানি ছিল, সেটাও অজানা নয়। এর জন্য ফেলুদা বা ব্যোমকেশ কোনওটাই হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু তাঁদের কেশাগ্র স্পর্শ করা যাবে না। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী যদি প্রকাশ্য সভায় তিন তালাকের ওকালতি করেন, তাহলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। হ্যাঁ, পরে প্রশাসন তৎপর হয়েছে। এখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে। এর কৃতিত্ব সরকারকে দিতেই হবে। কিন্তু নিঃশব্দে এমন কত ধূলাগড় ঘটে যাচ্ছে, আমরা কজন তার খবর রাখি?‌

কিন্তু প্রশ্ন হল, বামেরা কী করছেন ?‌ এই স্ববিরোধীতা আর কতদিন ?‌ গত সাতদিন ওইসব এলাকার পরিস্থিতি কী, আপনারা জানে না ?‌ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্বে আনার মতো সাংগঠনিক শক্তি হয়ত নেই। কিন্তু একবার ধিক্কার দেওয়া যেত না ?‌ যেটা খারাপ, সেটা খারাপ, তা যেই করে থাকুক। প্রতিরোধ হয়ত করা যায় না, কিন্তু নিন্দনীয় তো বলা যায়। সেই বিবৃতিটুকু দিতেও এত কুণ্ঠা কীসের ?‌ যদি ভোট হাতছাড়া হয় ?‌ যাঁরা ভাঙচুর করছে, যাঁরা লুঠ করছে, তাঁদের ভোট পাওয়াটা খুব জরুরি ?‌

sampriti

না, এঁরাই মুসলিম নন। অধিকাংশ মুসলিমই ভারতকে ভালবাসে, শান্তিপূর্ণভাবেই থাকতে চায়। এই কাজকর্মে তাদের সায় নেই। আমি একজন মুসলিম হয়ে ধূলাগড়ির ঘটনায় ধিক্কার জানাই। প্রগতিশীল মুসলিম সমাজও এগিয়ে আসুক। এই ধিক্কারটা মুসলিম সমাজের ভেতর থেকেই উঠে আসুক।

সুমনের সেই গানটা গাইতে ইচ্ছে করে, ভরসা থাকুক আদাবে আর ভরসা থাকুক নমস্কারে/‌ অর্চনাদের পাশেই যেন আয়েশারাও থাকতে পারে। ভরসা থাকুক হাতের কাছে, ভরসা থাকুক দূরে দূরে/‌ ভরসা থাকুক বেলা শেষের আজানে আর শাঁখের সুরে।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.