বেনোজল! কারা ঢোকালো!

রাজ্য সভাপতির নির্দেশে নেমে পড়ল লেঠেলবাহিনী! মাথা ফাটাল বিক্ষোভকারীদের! কোনও রাজনৈতিক দলের রাজ্য দপ্তরে এমন ছবি দেখা গেছে ? কোন পথে নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাকে ? লিখেছেন সরল বিশ্বাস।।

 

কিছু হলেই সিপিএম-কে দায়ী করা এক সময় রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল মমতা ব্যানার্জির। যখন বিরোধী নেত্রী ছিলেন, তখন তো মেঘ ডাকলেও দায়ী করে বসতেন সিপিএমকে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেও সেই অভ্যেসটা যায়নি। কখনও সিপিএম, কখনও মাওবাদি, কখনও বিজেপি-র ছায়া দেখেন।

এবার রাহুল সিনহা। তিনি ইদানীং কথায় কথায় তৃণমূলের ভূত দেখছেন। নিজেদের ব্যর্থতা আর বিশৃঙ্খলাকেও তৃণমূলের ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন।

তবু ভাল, গতকাল তিনি স্বীকার করেছেন, দলে কিছু বেনোজল ঢুকেছে। সবিনয়ে জানতে ইচ্ছে করছে, বেনোজল ঢুকিয়েছে কারা ? আপনি নিজেও কি এই দায় অস্বীকার করতে পারেন ? যে যখন এসেছেন, দলের সদর দপ্তর থেকে পতাকা নেড়ে তাঁকে দলে নিয়ে নিয়েছেন। বিপ্লবী ভাষণ দিয়েছেন।

কাদের নিচ্ছেন, দেখারও প্রযোজন মনে করেননি। যিনি ব্লক পর্যায়ের নেতাও নন, তাঁর হাতেও পতাকা তুলে দেওয়া হয়েছে রাজ্য দপ্তর থেকে। তৃণমূলের মতো দলে এটা বিচিত্র কিছু নয়। কিছু বিজেপি-র মতো ক্যাডার ভিত্তিক দলে এমনটা হয় ?

rahul sinha

রূপা গাঙ্গুলিকে দলে আনা নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য। কোনও সন্দেহ নেই, টলিউড থেকে এই পর্যন্ত যাঁরা রাজনীতিতে এসেছেন, তাঁদের সবার থেকে যোগ্য রূপা। কিন্তু লকেটকে নিয়ে এমন উচ্ছ্বাস দেখালেন, যেন তৃণমূলের মেরুদন্ডই ভেঙে দিলেন। জেলায় জেলায় একই প্রবনতা চলেছে। তৃণমূলের বিক্ষুব্ধরা ভিড় জমিয়েছেন। সিপিএম বা ফ্রন্টের বাতিল কিছু লোককে জামাই আদরে বরণ করেছেন।

তৃণমূলের যে সমস্যা, আপনাদেরও তাই। পুরনো কর্মীদের থেকে সদ্য জার্সিবদল করে আসা নেতারা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন। পুরানো লোকেদের ক্ষোভ হওয়াই স্বাভাবিক। নতুন যাঁরা আসছেন, কোনও মহান আদর্শ থেকে আসছেন না। যে প্রত্যাশা নিয়ে আসছেন, তা পূরণ না হলেই নগ্নরূপটা বেরিয়ে পড়বে।

আর এসবকে সামাল দেওয়ার দেওয়ার জন্য যে পরিণত নেতৃত্ব লাগে, তা রাজ্য বিজেপিতে নেই। একের পর এক ঘটনায় নিজেকে ক্রমশ হাস্যকর করে তুলছেন রাহুল সিনহা। রূপা গাঙ্গুলি দাঁড়াতে পারলেন না। এর পেছনেও তৃণমূলকে দায়ী করতে হবে ? ধরেই নিলাম, তৃণমূল তাঁর নাম কেটে দিয়েছে। তাহলে সোনারপুরে নাম তুলল কে ? রূপা আবেদন করেননি, শুধু শুধুই নাম উঠে গেল ? রূপা গাঙ্গুলি লোকসভা ভোটে সোনারপুর এলাকা থেকে ভোট পর্যন্ত দিয়েছেন। এরপর তৃণমূলকে দায়ী করে লোক হাসানো কি খুব দরকার ছিল ?

রূপা নিজেও প্রথমে চক্রান্তের একটা তত্ব খাড়া করতে চেয়েছিলেন। পরে অকপটে নিজের ভুল স্বীকার করে নেন। রূপা পরিণত, তিনি নিজের ভুলটা স্বীকার করতে জানেন, শুধরে নিতেও জানেন। কিন্তু রাহুলবাবুরা সেটাও জানেন না।

এই বিক্ষোভের কথাই ধরুন। তৃণমূল লোক পাঠিয়ে বিক্ষোব করাল, এটা বিশ্বাসযোগ্য ? তারা নিজেদের বিক্ষোভই সামলাতে পারছে না। তৃণমূলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু এই অভিযোগ খাটে না। এই বিক্ষোভকারীরা আপনাদেরই কৃতী সন্তান। এবং এই দায় আপনাদেরই নিতে হবে।

বিক্ষোভকারীদের থেকেও বেশি দায়ী বোধ হয় রাজ্য নেতারা। তাঁরা স্লোগান দিচ্ছেন, বিক্ষোভ করছেন, কেউ কেউ অতি সক্রিয় হয়ে হয়ত কুশপুতুল পোড়াচ্ছেন। তাই বলে লেঠেল বাহিনী রাখতে হবে ? তাই বলে দূর থেকে আসা কর্মীদের এমন নির্মমভাবে লাঠি পেটা করতে হবে ? প্রকাশ্যে টিভিতে দেখা যাচ্ছে সেই ছবি। হায় রে! বিক্ষোভ সামাল দিতে রাজ্য দপ্তরে শয়ে শয়ে লাঠি রাখতে হচ্ছে! লেঠেল রাখতে হচ্ছে !

অনেকের ধারণা, আপনারাই রাজ্যের প্রধান বিরোধী শক্তি। হ্যাঁ, আপনাদের ভোট দ্রুত বাড়ছে, এই পরিসংখ্যানটাও অস্বীকার করছি না। কিন্তু তার পেছনে আপনাদের অবদান কতটুকু ? লোকসভায় ভোট এসেছে মোদি হাওয়ায়। পরের দিকে অনেকের মনে হয়েছে, তৃণমূলকে আটকাতে গেলে আপনারাই বোধ হয় বিকল্প। কিন্তু এই কদিন বিকল্পের যে নমুন দেখা গেল! বাংলার ইতিহাসে কখনও রাজ্য দপ্তরে এমন বিক্ষোভ হয়েছে ? হলেও রাজ্য সভাপতির প্রত্যক্ষ নির্দেশে লাঠি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের মাথা ফাটানো হয়েছে ? কোন পথে নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাকে ?

রূপা দ্রুত নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছেন। রাহুলবাবু, আপনি কবে বুঝবেন ?

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.