স্বরূপ গোস্বামী
সেই ৩৮ বছর আগের কথা। যেবার কসমসের হয়ে খেলতে এসেছিলেন পেলে। খেলায় কী হয়েছিল, পেলে ঠিক কী কী করেছিলেন, অনেকেরই জানা। কিন্তু একটা অজানা কথা তুলে ধরা যাক। তাহলে বোঝা যাবে, পেলেকে ঘিরে হঠাৎ করে কতটা সাবালক হয়ে উঠেছিল বাংলা সাংবাদিকতা।
তখন বাংলা কাগজ বলতে জোর টক্কর আনন্দবাজার আর যুগান্তরের। আনন্দবাজারের নিউজ এডিটর ছিলেন অমিতাভ চৌধুরি। কিছুদিন আগেই কোনও একটা কারণে তাঁকে আনন্দ বাজার ছাড়তে হল। যোগ দিলেন যুগান্তরের নিউজ এডিটর হিসেবে। খেলাধূলায় অমিতাভ চৌধুরির খুব যে আগ্রহ ছিল, এমন নয়। কিন্তু মনে হল, পেলে আসছে, এই ইভেন্টে আনন্দবাজারকে টেক্কা দিতে হবে।
পেলেকে ঘিরে যে কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনী থাকবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল, কাছে ঘেষাই যাবে না। কিন্তু পেলেকে ধরতে হবে। একেবারে আলাদা করে ধরতে হবে। খবর নিলেন, কোন পথে, কোন ফ্লাইট ধরে পেলে আসছেন। শুনলেন, পেলে আসছেন সিঙ্গাপুর হয়ে।
দুদিন আগে সিঙ্গাপুরে পাঠিয়ে দিলেন যুগান্তরের প্রতিনিধিকে (সম্ভবত জ্যোতির্ময় দত্ত)। পেলে যে বিমানে সিঙ্গাপুর থেকে উঠবেন, তিনিও সেই বিমানেই টিকিট কাটলেন। একই বিমানে ফিরলেন। বিমানে পেলেকে একান্তভাবে পাওয়া গেল। কিছুটা কথা বলার সুযোগ যেমন হল, তেমনি পেলের নানা মুহূর্ত ধরা রইল।
এবার হোটেল। তখন কলকাতার কুলীন হোটেল বলতে গ্র্যান্ড হোটেল। সেখানে পুলিশ রিপোর্টারদের কাছে ঘেষতেও দেবে না। অতএব, আগাম গ্র্যান্ড হোটেলে এক রিপোর্টারের নামে ঘর বুক হয়ে গেল। যে ফ্লোরে পেলে থাকবেন, সেই ফ্লোরেই। কেউ টেরই পেল না। রিপোর্টারকে আটকানো যায়, কিন্তু হোটেলের বোর্ডারকে তো আটকানো যায় না। তিনি দিব্যি যখন খুশি ওঠা-নামা করলেন। কে কখন ঢুকছেন, কে বেরোচ্ছেন, সারাক্ষণ নজরদারি চালিয়ে গেলেন।
আজকের দিনে মিডিয়ার প্রতিযোগিতাটা বোঝা যায়। মারাদোনা যখন আসেন, তখন আগাম এক আলোকচিত্রীকে দুবাই পাঠিয়ে দিয়েছিল সংবাদপ্রতিদিন। মারাদোনার হাতে সেই বাংলা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে চমৎকার একটা ছবিও তুলেছিলেন সুমন চট্টোপাধ্যায়। ২০০৮ সালে সেটা তেমন অবাক করার মতো ঘটনা ছিল না। বা, মেসি আসার সময় বেশ কয়েকটি চ্যানেল রুম বুক করে রেখেছিল হায়াত রিজেন্সিতে। সেটাও তেমন অবাক করার মতো ঘটনা নয়।
কিন্তু ১৯৭৭ সালে এমন ভাবনা ভেবেছিলেন অমিতাভ চৌধুরি। কয়েক মাস আগেই তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। ৩৮ বছর পর আবার পেলে এলেন। তিনি নিজেও জানেন না, ৩৮ বছর আগে বাংলা ক্রীড়া সাংবাদিকতা তাঁর জন্য হঠাৎ করে কতটা এগিয়ে গিয়েছিল।