পেলেদা, জন্মদিনে বিজয়ার পেন্নাম নেবেন

সরল বিশ্বাস

পেলেদা,
আমার বাবার বয়স ৭৩। আমার জ্যাঠামশাই তাঁর থেকে দু বছরের বড়। অর্থাৎ ৭৫। আপনিও আজ পঁচাত্তরে পড়লেন। সেই হিসেবে আপনাকে জেঠু বলাই উচিত। কিন্তু আপনি হলেন গিয়ে স্পোর্টসম্যান। স্পোর্টসম্যানদের আবার জেঠু বলা যায় নাকি ? তাছাড়া, বাঙালিরা ‘দাদা’তেই বেশি স্বচ্ছন্দ। তাই দাদা বলাই ভাল, তাই না ?
আজকের দিনটা বাঙালির কাছে বড় দুঃখের দিন। আপনি যখন এই শহরে এসেছিলেন, তখন আকাশে শরতের মেঘ, বাতাসে শিউলির গন্ধ। পেলেদা, আপনি কাশফুল জানেন? শিউলি ফুল ? না জানুন, ক্ষতি নেই। আজ আমাদের বিজয়া দশমী। মা দুর্গার বিদায় নেওয়ার দিন। বাঙালির মুখ ভার। আর আজকেই কিনা আপনার জন্মদিন।
বিজয়ার পেন্নামটা গ্রহণ করুন পেলেদা।
জন্মদিনে বিজয়া প্রণাম। কী কাকতালীয় ব্যাপার, তাই না ?

bijaya
মহামতী গোখলে বলে একজন দেশপ্রেমিক ছিলেন। তিনি নাকি বলেছিলেন, বাংলা আজ যা ভাবে, ভারত তা ভাবে আগামীকাল। তিনি কী খাঁটি কথাটাই না বলেছিলেন! আজ আপনার জন্মদিন। বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকুন, নিশ্চয় কেক কাটবেন। কিন্তু আমরা আপনাকে দিয়ে দশদিন আগেই কেক কাটিয়ে দিয়েছি। দশদিন আগেই হ্যাপি বার্থ ডে বলে দিয়েছি।
আপনি চমকে যেতেই পারেন। কিন্তু আমাদের রাজ্যে এটা ট্র্যাডিশন। আমরা আগে আগেই করে ফেলি। এখানে বিবেকানন্দর জন্মদিন একদিন আগেই পালন হয়। নেতাজির জন্মদিন দুদিন আগেই পালন হয়। সোজা কথা, ছুটি থাকলে জন্মদিন এগিয়ো আনো। আমাদের রাজ্যে এক মহামানবী এই ব্যাপারে পথ দেখিয়েছেন (আপনি ধন্য, তাঁর সঙ্গে আপনার আলাপ হয়েছে)। বিবেকানন্দ বা নেতাজি যতই বিশ্বমানব হোন, হাজার হোক, তাঁরা তো বাঙালি। তাঁদের নিয়ে আমাদের যে মাতামাতি, অন্যদের তা না থাকতেই পারে। আমরা ভাবছি, পনেরোই আগস্টটাও একদিন বা দুদিন এগিয়ে আনব। সারা ভারত আমাদের দুদিন পরে পালন করবে।

pele3
কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে আমরা দেখিয়ে দিলাম, আমরা একদিন-দুদিন নয়, দশদিন আগেও কেক কেটে দিতে পারি। আজ যখন কেক কাটবেন, নিশ্চয় মনে পড়বে কলকাতার কথা। নিশ্চয় মনে পড়বে, দশদিন আগেই আমরা জন্মদিনের কেক কেটে ফেলেছিলাম। পেলেদা, এমন জন্মদিন আপনার জীবনে নিশ্চয় আসেনি।
আরও অনেক কিছুই লিখতে ইচ্ছে করছে পেলেদা। কিন্তু জন্মদিনে অনেকেই অনেক শুভেচ্ছা জানাবে। এমনদিনে বেশি ভাঁট বকা উচিত নয়। যারা পড়বে, তারাও আজ প্রণাম করতে করতে শিরদাঁড়া বেঁকিয়ে ফেলবে। তারাই বা এসব ভাঁট বকা শুনবে কেন ?
পরে আরও একবার আসবেন। আপনাকে আমরা বঙ্গভূষণ দেব। শুধু বলবেন, এই পুরস্কার তিন বার বিশ্বকাপ জয়ের থেকেও আনন্দের।
কিন্তু আজকের দিনে আপনাকে কী উপহার দেওয়া যায়, বলুন তো ? কিছু মাথায় আসছে না। দেখি, একজনকে বলতে হবে। তিনি ভ্যান গঘের মতো ছবি আঁকেন। তাঁর ছবি দু কোটিতে বিক্রি হয়। না, আপনাকে অবশ্য দাম দিতে হবে না। আপনাকে উনি এমনিই পাঠিয়ে দেবেন। আপনি কবিতা পড়েন ? তাহলে একখানি কথাঞ্জলি পাঠি্য়ে দেব। যে কোনও প্রিয়জনের জন্মদিনে আমি এখন এটাই উপহার দিই। আপনাকেও দেব।
পড়বেন, ‘কুল’ থাকবেন। জীবনে অনেক ‘প্রেরণা’ পাবেন। কী জানি, হয়ত আবার ব্রাজিলের জার্সি গায়ে মাঠেই নেমে পড়বেন।
ভাল থাবেন পেলেদা। আবার প্রণাম জানিয়ে শেষ করছি।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.