অয়ন দাস
আমির খানের ওই সিনেমাটায় কি একটা গান ছিলো না-‘পাপা ক্যাহতে হ্যা বড়া নাম করেগা , মেরা বেটা অ্যায়সা কাম করেগা।’ ওই গানটা এখন খুব মনে পড়ছে।আমির খানের জায়গায় আমিই যেন গানটা গাইছি। কারণ আমিও তো এখন ‘বড়া নাম’ করেছি।
তোরাই বল বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি বা পশ্চিমবঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আমায় কটা লোক চিনতো!শুধু ভারতেরই কিছু লোক চিনতো।পশ্চিমবঙ্গে তো কেউ-ই চিনতো না আমায়, সবাই শুধু সারাক্ষণ ‘দিদি’ আর ‘দিদি’ করতো।তাও ‘কৈলাস’ বললে দেবীদূর্গার শ্বশুরবাড়ি বুঝতো লোকে। আমার মতো ‘যুগপুরুষ’-এর পরিচয় কি এই পোড়া দেশেই সীমিত থাকা উচিত!আমার মতো ‘মহামানব’-এর পরিচয় সকল দেশের গণ্ডী ছাড়িয়ে ‘মহাকাশেও’ ছড়িয়ে পড়া দরকার,তবেই না দেশ-দশের ‘মঙ্গল’ হবে(তবে পাকিস্তানে যাবো না, ‘বজরঙ্গি ভাইজান’-এ দেখেছি সলমন খানকে মাংসের গুঁতোয় শুধু চা-পরোটা খেতে হয়েছিল)।তাই তো ভাবলাম নিজের ‘নাম’ নিজেই করি।তাই দিলাম শাহরুখ খানকে ‘পাকিস্তানি’ বলে।যাই হোক লোকটার তো সারা বিশ্বে অনেক ‘ফ্যান’ তাই আমার ‘খ্যাতি’ টাও সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়বে।‘আইডিয়া’টা যে মোক্ষম ছিল সেটা তো এতদিনে বুঝেই গেছিস।সারা বিশ্বে একটাই নাম এখন ‘কৈ..কৈ..কৈ..কৈ..কৈলাস’।
কিন্তু তোদের এই ‘চপকানো’ টা বন্ধ হলো না এখনও।এত যে বাঁদরের মতো লাফাচ্ছিস, তোদের কটা লোক চেনে, মেরেকেটে গোটা ৫০ লোক আর আমায় দেখ।বিশ্বাস না হলে ট্যুইটারটা খুলে দেখ। দেখ শুধু কোন কোন দেশ থেকে আমায় ‘গাল’ দিচ্ছে-পেরু,টিউনেশিয়া,বুলগেরিয়া,আমেরিকা আর কতো দেশের নাম বলবো! তোরা জন্মে সেসব দেশের নামটুকুও শুনিসনি। তোদের ‘জেনারেল নলেজ’ বাড়াচ্ছি আমি।‘বিবিসি’ আমায় নিয়ে খবর করছে।‘বিশ্বজনীন’ হয়ে উঠেছি আমি।যদিও ‘বিবিসি’র পুরো নামটাই তো তোরা জানিস না, এসবের মর্যাদা বুঝবি কী করে। শুনে রাখ ‘বিবিসি’র পুরো নাম হলো ‘বিশ্ব ব্রডকাস্টিং সমাজ’,ঘরে গিয়ে ‘গুগল’-এ পড়ে নিবি বাকিটা।
কী ভাবছিস তোরা আমি ‘ইন্টারভিউ’টা দেখেছি! ওসব ‘ফালতু’ কাজ করলে তোদের মতো ‘খড়ের গাদায়’ পড়ে থাকতে হবে সারাজীবন, এসব না দেখে আমার মতো এরকম ‘ট্যুইট’ কর, দেখবি কি ‘নাম’টাই না হয় তোদেরও।
কী বললি, বদনাম হবে এতে!আরে শাহরুখ খানের ‘চক দে ইন্ডিয়া’তেই তো বলেছে-‘বদনামি মে ভি নাম হোতি হ্যা।’তাহলে! তোরা বদনাম বা ছদ্মনাম যাই বল না কেন মোদ্দা কথা হল তো ‘নাম’ই হবে।
তোদের যদিও এসব বেকার বলা, নিতিন গড়কড়ীর ‘ভুড়ি’র থেকেও ‘মোটা’ তোদের মাথা, তাতে এসব জীবনে ঢুকবে না।আমার দুই ‘চ্যালা’ সাধ্বী প্রাচী আর আদিত্যনাথকেই দেখ।আমায় তবুও দু-চারজন চিনতো, কিন্তু ওদের তো আরও দুর্দশা ছিল। আমার মতো শাহরুখ খানকে ‘পাকিস্তানি’, ‘দেশদ্রোহী’ বলে ওরাও সারা বিশ্বে নিজের পরিচিতিকে ছড়িয়ে দিয়েছে।এ তো সবে শুরু, দেখবি এরপর দলে-দলে লোক এই ‘পথ’ বেছে নিচ্ছে।তোরা কি সব ছাইপাশ পাবলিক রিলেশন অফিসার বলিস,আমার মতো ‘পাবলিক’ থাকলে ‘পাবলিক’-এর সাথে ‘রিলেশন’ এমনিতেই হবে। ওসবের দরকার যে নেই তার প্রমাণ তো পেয়েই গেলি।
বিজেপির কে একটা নাকি বলেছে আমার মন্তব্য নাকি বিজেপির সরকারী মন্তব্য নয়।কে বলেছে করতে!তাতে আমার কিচ্ছু যায়-আসে না।সব জায়গায় আমার মন্তব্য ‘জ্বলজ্বল’ করছে আর বিজেপির এই মন্তব্য টিমটিম করেও জ্বলছে না।
তবে তোরা আবার ভেবে বসিস না যে আমি শুধু নিজের ‘নাম’ করার জন্যই এসব করেছি।আমি হলাম ‘সংস্কৃতির প্রকৃত বাহক’।ভ্রূ কুঁচকোচ্ছিস কেন! ও বুঝেছি ‘মোটা মাথা’ তো তোদের,তাই বুঝিস নি। আরে আমি হিন্দিতে ‘ট্যুইট’ করে বিশ্বের কতো লোকের মধ্যে হিন্দি ভাষাকে ছড়িয়ে দিয়েছি তার হিসেব রেখেছিস!ভাবছি এবার ভারতে যতো বিদেশি হিন্দি শিখতে আসবে ভারত সরকারের থেকে ততো ‘কমিশন’ নেবো। সবই তো আমার ‘কামাল’।তারপর এই যে আমার ‘চ্যালা’ আদিত্যনাথ আমার সাথে শলা-পরামর্শ করে শাহরুখ খানকে হাফিজ সঈদের সাথে তুলনা করলো, এর গুরুত্ব তোদের মতো ‘অজ্ঞ’রা কোনোদিন বুঝবে নাকি! হাফিজ সঈদ আমার ফাঁদে পা দিয়ে যে ‘ট্যুইট’ করলো,সেটা দিয়ে তো দেশের গোয়েন্দারা হাফিজ সঈদের অবস্থান বের করে তাকে গ্রেফতার করতে পারবে।এটাই হলো ‘আসল দেশপ্রেম’।আর তোরা বলছিস আমরা নাকি পাকিস্তানকে ফায়দা লুটতে দিয়েছি।‘গবেট’ তোরা সব।তোরা আবার ভেবে বসিস না আমি ‘ট্যুইট’ ‘ডিলিট’ করেছি নিজের ‘ভুল’ বুঝে, ‘ডিলিট’ করেছি যাতে ব্যাপারটা আরো বেশি করে ‘খবর’ খায়।
তোরা এসব ভাবতেও যাস না,জীবনে মুন্ডুতে ঢুকবে না।তার থেকে বরং ‘কথাঞ্জলি’ পড়ে ‘কুল’ থাকার চেষ্টা কর।তবে একটাই দুঃখ,ভারতে এমন কোনো আইন নেই যে এসব মন্তব্যের জন্য আমার ‘জেল’ হবে তাহলে আমিও প্রকাশ সিংহ বাদলের মতো ‘ম্যান্ডেলা’ হতে পারতাম।