হরিশ মুখার্জি
৩৩ বছরে পা দিল বর্তমান সংবাদপত্র। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এটি একটি সরকার বিরোধী খবরের কাগজ হিসেবে চিহ্নিত ছিল। এই কাগজের লেখার মান নিয়ে অনেকেই অসন্তুষ্ট ছিলেন। এর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে অনেকে ক্ষুব্ধ ছিলেন। কিন্তু একটা ব্যাপারে সবাই একমত ছিল— বর্তমান শাসককে তেল দেয় না।
১৯৮৪ থেকে ২০১১, একটা কয়েক দশক ধরে বর্তমান দোর্দন্ডপ্রতাপ সিপিএমের পিছনে লেগেছে। সঙ্গত কারণে যেমন লেগেছে, তেমনি অসঙ্গত কারণেও লেগেছে। এই একরোখা বিরোধীতার জন্য সিপিএম বিরোধী মানুষদের কাছে বর্তমানের জনপ্রিয়তা হু হু করে বেড়েছে। বামপন্থীরাও গোপনে স্বীকার করত, বর্তমানের কিছু না থাক, সাহস আছে।

বরুণ সেনগুপ্ত মারা যান রাজ্যে পালা বদলের আগেই। শোনা যায়, তিনি নাকি বলে গিয়েছিলেন, নতুন সরকার এলেও বর্তমান তার ধারা বজায় রাখবে। অর্থাৎ, যে সরকারে থাকবে, তার বিরোধীতা করবে। রাজ্যে নতুন সরকার এল। বর্তমানেও নতুন মালিক এল। প্রথম প্রথম নতুন বর্তমান হুঙ্কার ছাড়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মা মাটি মানুষের সরকার তাদের ব্ল্যাকলিস্টেড করে দিল। মুখ্যমন্ত্রীর ছবিওয়ালা গাদা গাদা সরকারি বিজ্ঞাপন সব কাগজই পাচ্ছে , শুধু বর্তমান পাচ্ছে না। ব্যাস, বর্তমানের বিদ্রোহ ফুস। বরুণবাবু বেঁচে থাকলে সম্ভবত এভাবে বিজ্ঞাপন হারানোর ভয়ে দমে যেতেন না। বরং আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতেন। কিন্তু নতুন বর্তমানের কাছে বরুণ সেনগুপ্তর আদর্শের থেকেও মমতার আদর্শ বড় হয়ে উঠল। অমনি শুরু হল সরকারি বিজ্ঞাপনের স্রোত।
এরপর বর্তমান আর জাগো বাংলার মধ্যে বিশেষ তফাত রইল না। সম্পাদিকা নিজের বাইলাইনে সিপিএমকে বলছেন, ওদের পার্টি। মমতাকে অনুরোধ করছেন, মোদিকে সিংহাসন থেকে হটিয়ে দিন। এরপরেও বর্তমান বলবে তারা নিরপেক্ষ? এরপরেও বলবে তারা কারও তাঁবেদারি করে না ?
এতকাল জানা ছিল, বর্তমান ভগবান ছাড়া কাউকে ভয় করে না। এখন দেখা যাচ্ছে, ভগবানের থেকে মমতাকে বেশি ভয় করে। অথবা মমতাকেই ভগবান বলে ভাবে। তেত্রিশ বছর আগে বরুণ সেনগুপ্তর বর্তমান যে কথা দিয়েছিল, তা রাখতে পারল না শুভা দত্তর বর্তমান। বরুণবাবুর মৃত্যুর কিছুদিন পরেই তাঁর বর্তমান ‘অতীত’ হয়ে গেছে।
(লেখক হিন্দু পেট্রিয়টের সম্পাদক ছিলেন না। ধরে নিন, ইনি অন্য কোনও হরিশ মুখার্জি।)