(টুনির মাকে সবাই চেনেন। তাঁরও অনেক না বলা কথা থেকে যায়। তিনিও চান বেঙ্গল টাইমসে নিয়মিত কলাম লিখতে। এবার থেকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর কলাম লিখবেন টুনির মা। কলামের নাম ‘টুনির মায়ের পাঁচালি’। তিনি দেখে ফেললেন শাশ্বতর নতুন ছবি ব্ল্যাক কফি। তাই নিয়েই এবারের পাঁচালি।)
অবাক বটে ব! বলিহারি তুমাকে শাশ্বত কাকা। একটা কাজে কলকাতা আইছিলাম। তা পোস্টারে দেখল’ম, তুমার সিনেমা চলছে। নাম ব্ল্যাক কফি। আমাদের উখ্যানে তো ইসব সিনেমা চলে নাই। টিভিতে কবে দিব্যাক, তারও ঠিক নাই। তাই মনে হল, আইছি যখন, তখন দেখেই যাই। ভাবল’ম, শাশ্বত কাকা আছে যখন, তখন ভালই হব্যাক।
আমরা হ’লম গিয়া পাড়া গাঁয়ের মুখ্যুসুখ্যু মানুষ। তুমাদের মতো অত বুঝব নাই। তাও কতকগুলা জিনিস তুমাকে না বললেই লয়। অত সুন্দর চাকচিক্যি একটা সিনেমা হলে গোটা পনের–কুড়ি লোক। ভাবলম, ভাল জিনিস তো মানুষ কমই দ্যাখে। ভুলটা পরে ভাঙল। মনে হল, যারা আসে নাই, তারা ভালই করেছে। ইয়ার আগে তুমার অনেকগুলা সিনেমা দেখেছি। বেশ ভালই তো হইছিল। এবার শবর, ঈগলের চোখ, চিড়িয়াখানা। দেখে তুমার পতি বিশ্বাস ছিল, যে তুমার সিনেমা খারাপ হব্যাক নাই। কিন্তু না। একেবারেই ভাল হল নাই। ক্যানে যে তুমি এমন বিদখুটা একটা সিনেমায় পাট করলে কে জানে!
সিনেমা শুরুতেই দেখলম মস্ত এক বানান ভুল। ক্ষতিকারক বানান লিখা আছে ‘ক্ষতীকারক’। সম্পূর্ণরূপে বানান লেখা হইছে ‘সম্পুর্নরুপে’। জানে শুনে ভুল নাকি নতুন কায়দা, কে জানে বাপু। এমন ভুল আমার মতো মুখ্যুসুখ্যু লোকের চোখেও ধরা পড়ল, তুমাদের চোখে পড়ল নাই? তুমাদের আবার এই একটা মস্ত সুবিধা। ভুল হলে সেটাকে বল, ইটা নাকি নতুন ইস্টাইল। গল্পটার মধ্যেও নতুন কিছু পা’লম নাই বাপু। সিরিয়ালে রোজ এমন গপ্প আর প্যানপ্যানানি দেখি। সারা সিনেমাটা জুড়ে তুমি শুধু মদ গিললে, আর সিগারেট ফুঁকলে। শুরুতেই কিনা বলে দিলে সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ‘ক্ষতীকর’। এতই যখন জানো, তখন ইসব খা’লে ক্যানে কাকা? তুমি যে দেখছি মহান বুদ্ধিজীবী হে! এমন সম্পর্কের ভাঙা–গড়ার খেলা আমাদের গাঁয়ে আখছার হচ্ছে। গোটা সিনেমায় মনে রাখার মতো একটা ডায়লগও নাই। প্রথম সিনে বিপ্লব কাকু এল। কীসের যে বিপ্লব ঘটাল, বুঝলম নাই। ওইটুকুর জন্য বুড়া মানুষটা কষ্ট করে আনলে ক্যানে বাপু? না বউ, না প্রেমিকা, কোথাও তুমি শান্তি পেলেও নাই। কাউকে শান্তি দিলেও নাই। হাফটাইমেই সিনেমাটা শেষ হইয়ে যেতে পারত। তাহলে দর্শকের সময় বাঁচত, প্রডিউসারের পয়সা বাঁচত। কিন্তু আনখাই ইলাস্টিকের মতো টা’নে বাড়াল আমাদের ডাইরেক্টর অতনু কাকু। সবাই দেখছি মহান মহান সব বুদ্ধিজীবী।
মানছি, তুমার বউয়ের রোলটা যে করছে, সে আনাড়ি। কিন্তু কোনও বউ তার বরের সঙ্গে কথা বলার সময় এমন দাঁত ক্যালাই হাসে নাই। পাওলি দাম তো একেবারেই অখাদ্য। না খায়ে খায়ে একদম শুকাই গ্যাছে। ভাবছে, শুকনো চেহারা হলে সবাই উয়াকে সুচিত্রা সেন বলবেক। বলি ও ক্ষেপি, সুচিত্রা হতে গ্যালে অভিনয়টা শিখতে হয়। সেটা আগে শিখ। সিনেমায় উদমাই বলল, ‘একটা শিশু চাই’। নিজেকে সামলাতে লারিস, শিশু লিয়ে কী করবি? এমন বুড়া ধাড়ি মিয়ার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না দেখে একশো টাকা জলে গেল।
তুমি তো শুনেছিলম নিজেও স্মার্টফোন ব্যবহার কর নাই। সেই তুমিই সিনেমাতে এত ফোন ঘাটছিলে ক্যানে? গোটা সিনেমাজুড়ে তুমার ডাইরেক্টর অতনু কাকু যে কী বলতে চাইল, কিছুই বুঝি নাই। উ নিজেও বুঝে নাই। শেষের দিকে বউয়ের জন্যে তুমার দরদ উতলে উঠছিল। ছবি টবি কিনে প্রমাণ করতে চাইলে, তুমি বউকে কতই না ভালবাস। উসব সস্তার আদিখ্যেতা, বিষ খাওয়া, কালিম্পঙের পাহাড়ে যাইয়ে পটল না তুলে বউটার কাছে ফিরে আলেই তো পারতে বাছা।
সত্যি কাকা, তুমি এমন ডুবাবে, জানতম নাই। একবার যদি অতনু কাকুকে সামনে পাতম নাই...। যাই হোক, ভবিষ্যতে আমাদেরকে এমন মুরগি আর কোরো না।