সুমিত মিত্র
সিঙ্গুরে শাঁখ বাজছে। আবির উড়ছে। আরও কত কী হবে? যেন বিরাট বড় কোনও খুশির খবর এল। যেন রাজ্যের জন্য বিরাট এক সুখবর এল দিল্লি থেকে।
সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ নাকি আইন অনুযায়ী হয়নি। জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এটাই তো বলে আসছিল তৃণমূল। এটাই তো বলে আসছিলেন তৃণমূল আশ্রিত বুদ্ধিজীবীরা। এই রায়ে তাঁরা নিশ্চয় খুশি। রাজনৈতিকভাবে দেখতে গেলে এটা নিঃসন্দেহে তৃণমূলের বিরাট একটা জয়। কিন্তু এই জয়ে কার কী লাভ হল?
যে টাটা বিরাট অঙ্কের বিনিয়োগ নিয়ে এসেছিল, শিল্পের উজ্জ্বল একটা স্বপ্ন দেখিয়েছিল, তাদের রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে হল। টাটার মতো সংস্থাকে যদি চলে যেতে হয়, শিল্প মানচিত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। ফল যা হওয়ার, তাই হল। ২০১১ তে তৃণমূলের সরকার এল। একের পর এক শিল্প সম্মেলন হল। কিন্তু বড় মাপের বিনিয়োগদ এল না।
দ্বিতীয় ইনিংসে প্রশাসন কিছুটা যেন সতর্ক হয়েছিল। তোলাবাজির অভিযোগ এলে পুলিশ বেশ কয়েকটা জায়গায় দ্রুত ব্যবস্থা নিল। অনেকেই কিছুটা ভয় পেলেন। শিল্পমহলের কাছে কিছুটা হলেও ইতিবাচক বার্তা গেল। এটাকে ঘুরে দাঁড়ানোর একটা প্রক্রিয়া হিসেবে দেখা যেতেই পারত।
কি্ন্তু সিঙ্গুরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর উল্লাসের যে চেহারা দেখা গেল, তাতে মনে হল, বিনিয়োগ এবারও দূরে দূরেই থাকবে। অধিগ্রহণ অবৈধ ছিল, কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল, এক এত উল্লাসের কী আছে ? এত বিজয়োৎসবের কী আছে ? সিপিএম বেকায়দায় পড়ল, সন্দেহ নেই। কিন্তু তাতে রাজ্যের কি বিরাট কিছু উপকার হল? কোর্ট যতই জমি ফেরত দেওয়ার কথা বলুক, ওই জমি আর কোনও কাজে লাগবে ? ওই জমিতে আগের মতো তিন বার বা চারবার ফসল ফলবে ?
কারখানা হলে জায়গাটার চেহারা পাল্টে যেত। এত এত কর্ম সংস্থআন হত। নতুন একটা উপনগরী তৈরি হয়ে যেত। তার বদলে দু টাকা কেজি চাল পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে সিঙ্গুরবাসীকে। আগামীদিনেও উজ্জ্বল কোনও ভবিষ্যৎ নেই। কে বিনিয়োগ করতে আসবেন ? তখন সবাই জমি দেবেন তো ? আলো নয়, সিঙ্গুর বোধ হয় অন্ধকারেই থাকতে চাইছে।
সিঙ্গুরবাসী আজ যত খুশি আবির খেলুন, টিভিতে বাইট দিন। কিন্তু একদিন বুঝবেন, কতবড় সুযোগ আপনারা হারিয়েছেন।
কোর্টের এই রায়ে তৃণমূল যতই উল্লসিত হোক, বাংলার জন্য থেকে গেল অশনি সংকেত। আত্মঘাতী এই রাজনীতি থেকে বাংলার বোধ হয় মুক্তি নেই।