প্রভাত দাশগুপ্ত
বিভিন্ন কলেজে নাকি এবার থেকে ওয়াই ফাই পরিষেবা দেওয়া হবে। ছাত্ররা নাকি ফ্রি-তে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এই নিয়ে বেঙ্গল টাইমসে আগেও লেখালেখি হয়েছে। সেই বিষয়ের সঙ্গে আমি একমত। অন্য মিডিয়ায় বিষয়টি সেভাবে উঠে আসছে না। এই পরিষেবা সব জায়গায় চালু হলে তা যে কী মারাত্মক ক্ষতি করবে, সে সম্পর্কে বোধ হয় অনেকে বুঝতেও পারছেন না। কিন্তু একজন শিক্ষক হিসেবে আমি শিউরে উঠছি।
রাস্তাঘাটে মোবাইল নিয়ে চলাফেরা করা ছেলেদের নিশ্চয় অনেকেই দেখেছেন। মুখ তুলে তারা তাকাতেও পারে না। সব সময় চোখ ওই স্মার্টফোনে।সবাই বিরাট ব্যস্ত। কীসের এত ব্যস্ততা, ওরাই জানে। নেট বা সোশাল সাইটের বিষয়টি আমি ভাল বুঝি না। যারা বোঝে, এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে কিছুটা ধারনা তৈরি হয়েছে। এটুকু বুঝতে পারি, খুব শিক্ষামূলক কাজে ওরা যুক্ত নেই। কিছু একটা নিষিদ্ধ বিষয় থেকেই গেছে।
আমি নিজে একজন শিক্ষক। হাইস্কুলে পড়াই। সহকর্মীদের দেখি। কমনরুমে সারাক্ষণ সবাই মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত। কোনও বিষয়েই তাদের হুশ নেই। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অপমানিত মনে হয়। ক্লাসে যাওয়ার পথেও অনেকে মেসেজ চালাচালি করছে। কী এত জরুরি কথা, তারাই জানেন। কেউ কেউ তো শুনেছি ক্লাসের মধ্যেও মোবাইল চালু রাখেন। এতে ছাত্রদের মধ্যে কী প্রভাব পড়ে, আমরা ভেবেও দেখি না। নিজে ক্লাসে ঢোকার সময় দেখেছি, অনেক ছাত্র মোবাইল ঘাটছে। ক্লাসে ঢোকার সময় কেউ কেউ ব্যাগে ঢোকায়, অনেকে আরও কয়েকটা ম্যাসেজ চালাচালি করে তারপর ঢোকায়। অনেকে লুকিয়ে করে, তাও বুঝতে পারি।
কোন সংস্কৃতি আমরা ডেকে আনছি ? গার্জেনরাও দায়ী। এই বয়সী ছেলেদের হাতে কেউ আট-দশ হাজার টাকা দামের মোবাইল তুলে দেয় ? একজনের দামি মোবাইল দেখে অন্য ছাত্রও জেদ করছে। মাত্র তিন-চার বছরে পড়াশোনা থেকে ওদের মনটা অনেক দূরে সরে গেছে। স্কুলেই যখন এই অবস্থা, তখন কলেজে কী হতে পারে, বোঝাই যায়।এই অবস্থায় সরকার ফ্রি ওয়াই ফাইয়ের ঘোষণা করছেন। কারা এই বুদ্ধিগুলো দেয়? তারা শিক্ষার সঙ্গে আদৌ যুক্ত ? শিক্ষার সঙ্গে যার সামান্য সম্পর্কটুকুও আছে, তারা কখনই এটা সমর্থন করতে পারে না। যারা সমর্থন করছেন, তারা নিজেরা সম্ভবত আসক্ত। তাই নিজেদের আসক্তিকে সময়ের চাহিদা বলে চালাতে চাইছেন।
শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুন। স্কুলে, কলেজে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন। ওয়াই ফাই পরিষেবা নয়, বরং ছাত্র ও শিক্ষকদের মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করুন।
(এটি একটি সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর বিতর্ক। আপনিও এই বিতর্কে অংশ নিতে পারেন। আপনার মতামত নিসঙ্কোচে জানাতে পারেন। সব ধরনের মতামত এখানে স্বাগত। ঠিকানা: bengaltimes.in@gmail.com)