ঋতব্রতর পকেটে ভাইরাসের সেই পেন, ভেবে গর্ব হচ্ছে না?‌

স্বরূপ গোস্বামী

থ্রি ইডিয়েটস এর শেষ দৃশ্যটা মনে করুন। আমির খান যে কোথায় হারিয়ে গিয়েছেন, কেউ জানে না। শেষবেলায় জানা গেল, লাদাখে আছেন। হাজির বাকি দুই বন্ধু, করিনা এবং অবশ্যই চতুর। আমির খান সই করবেন বলে পকেট থেকে পেনটা বের করলেন। চতুর বলে উঠলেন, আরে ইয়ে তো ভাইরাসকা পেন!‌ বলেই সেই পেনটা ছিনিয়ে নিলেন।

ভাইরাস। অর্থাৎ কলেজের প্রিন্সিপাল। তাঁর পকেটে সবসময় একটা পেন থাকত। বলেছিলেন, কলেজে যে ছাত্র সবথেকে বেশি নম্বর পাবে, তাকে এই পেনটা তিনি উপহার দেবেন। সারা সিনেমাজুড়ে র‌্যাঞ্চোর (‌আমির খান)‌ নানা দস্যিপনার গল্প। সেই ছাত্র যে সেরা ছাত্র হবেন, কেউই ভাবেননি। প্রিন্সিপালও ভাবেননি। কিন্তু পরে জানা গেল, র‌্যাঞ্চোই সবথেকে বেশি নম্বর পেয়েছে। নিজের পেন তাকেই তুলে দিয়েছিলেন ভাইরাস। আর সেই পেনটাই সারা জীবন বয়ে বেড়িয়েছেন র‌্যাঞ্চো। পৃথিবীখ্যাত বিজ্ঞানী, কিন্তু ওই পেনটাই তার সেরা স্বীকৃতি। তাই সবসময় পকেটে থাকে।

najma heptullah

ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কি আমির খানের মিল খুঁজে পাচ্ছেন?‌ ঋতব্রতর পকেটেও একটা দামী পেন ছিল। যে পেন নিয়ে কত কাণ্ডই না ঘটে গেল। কমিউনিস্ট নেতা, পকেটে এত দামী পেন কেন?‌ এই টাকা কোথা থেকে আসে?‌ ফেসবুকে কটাক্ষের বন্যা বয়ে গেল। সঙ্গে পাওয়া গেল হাতের দামী ঘড়ি। সেখান থেকে জল অনেকদূর গড়াল। সে কথা সবাই জানেন। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ডেকে পাঠাল। রাজ্য কমিটি ভর্ৎসনা করল। হয়ত সঙ্গত কারণও ছিল। কারণ, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি এই তরুণ তুর্কি। একটা ভুল কাজ করে ফেলেছিলেন। নিজেও যথেষ্ট অনুতপ্ত। ক্ষমাও চেয়েছেন।

কিন্তু জানেন কি সেই পেন তাঁকে কে দিয়েছেন?‌ এও অনেকটা ভাইরাসের সেই পেনের মতো। ভাইরাস তুলে দিয়েছিলেন তাঁর সেরা ছাত্রের হাতে। এখানেও ঋতব্রতর হাতে সেই পেন এমন একজন তুলে দিয়েছেন, যিনি দীর্ঘদিন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ার পার্সন ছিলেন। নাজমা হেফতুল্লাকে অনেকে হয়ত বিজেপি নেত্রী বলবেন। হ্যাঁ, মণিপুরের রাজ্যপাল হওয়ার আগে তিনি মোদি ক্যাবিনেটের মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু মৌলানা আবুল কালাম আজাদের এই সুযোগ্যা নাতনি টানা চারটি টার্ম (‌১৯৮০–‌২০০৪)‌ ছিলেন কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ। তার মধ্যে টানা ষোল বছর তিনিই ছিলেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ার পার্সন। অর্থাৎ, উপরাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে তিনিই সভা পরিচালনা করতেন। যাঁরা নব্বইয়ের দশকে রাজনীতির খোঁজখবর রাখতেন, তাঁরা জানেন কী দক্ষতার সঙ্গে তিনি রাজ্যসভা পরিচালনা করতেন। রাজ্যসভার ইতিহাসে তিনিই সম্ভবত সেরা ডেপুটি চেয়ার পার্সন।

najma-heptullah

সেই নাজমা হেপতুল্লা। কার্ডিয়াক অ্যানাটমির ডক্টরেট। যিনি সারা জীবনে অসংখ্য দিকপাল এম পি–‌কে কাছ থেকে দেখেছেন। আমাদের রাজ্যের তরুণ সাংসদ ঋতব্রতর বক্তৃতা শুনে তিনি এতটাই আপ্লুত হন, এই দামী পেনটি তিনি ঋতব্রতর হাতে তুলে দেন। এই বাংলা থেকে কজন এই স্বীকৃতি পেয়েছেন, জানা নেই। হ্যাঁ, সেই পেন ঋতব্রত নিজের পকেটে রাখতেন। দাম কত, সেটা নয়। কে দিয়েছেন, কেন দিয়েছেন, সেটাই বিবেচ্য। কিন্তু আলোচনাটা কোনদিক থেকে কোনদিকে চলে গেল!‌ যেটা হতে পারত গর্বের বিষয়, সেটাই হয়ে গেল নিন্দার বিষয়। ঋতব্রতকেও বলিহারি!‌ নিজের মুখে একবার বললেই তো পারতেন, এটা সাংসদ হিসেবে পাওয়া বিশেষ স্বীকৃতি। সেটা না করে তিনি চিঠি লিখে বসলেন বেঙ্গালুরুর কোন এক আই টি ফার্মে।

ঋতব্রত কেন আইটি ফার্মে চিঠি লিখতে গেলেন, তা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। অনেক ভর্ৎসনাও হয়েছে। কিন্তু কেন তাঁর পকেটে ওই পেনটি এল, সেটা জানার পর কী করবেন?‌ একটা অভিনন্দন জানাবেন না?‌ চতুর যতই পেন নিয়ে ছুটুক, ওই পেন আসলে র‌্যাঞ্চো, ওরফে ওয়াংড়ুর। ঠিক তেমনই সোশাল মিডিয়ায় যে যতই সোচ্চার হই, ওই পেন আসলে ঋতব্রতরই প্রাপ্য। বাংলার একজন বামপন্থী সাংসদের পকেটে ওই অমূল্য স্বীকৃতি। ভেবে গর্ব হচ্ছে না?‌

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.