আসল পেলের সামনে নকল পেলে

অয়ন দাস
আজ থেকে আটত্রিশ বছর আগে যখন পেলে ভারতে আসেন তখন পেলে ভারতের মানুষের কাছে ছিলেন অপার বিস্ময়।অনেক মানুষই বিশ্বাস করতে পারেননি স্বয়ং ‘ফুটবল সম্রাট’ ইডেনে খেলছেন।তাঁরা ভেবেছিলেন সে সময়ের বিখ্যাত অভিনেতা শান্তিগোপাল পাল ‘পেলে’ সেজেছেন।অনেকে বলেন পেলে মোহনবাগানের সাথে ম্যাচ খেলায় তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরা ‘নকল পেলে’ রব তুলেছিলেন।
আটত্রিশ বছর পর পেলে ফের ভারতে আসার আগে ‘আসল’ আর ‘নকল’ পেলের একান্ত কথোপকথনঃ
শান্তিগোপাল পালঃ কী! পেলেবাবু শুনলাম নাকি ভারতে আসছেন। এবার সত্যিই আসছেন তো?
পেলেঃ রসিকতা করছেন দাদা!আগেরবারও তো সত্যিই এসেছিলাম।পরে শুনি যে কিছু লোক বলছে ‘নকল’ পেলে এসেছে!
শান্তিগোপালঃ ম্যাচের দিন সকালেই শুনছিলুম ব্যাপারটা।তা খেলার আগেই ব্যাপারটা জানতেন নাকি!

pele6
পেলেঃ না।না।খেলার সময়েও তো বুঝতে পারিনি।বাংলা ভাষাই তো বুঝতাম না।সবাই-ই খেলা দেখে প্রশংসা করছে ভাবলাম।তারপর শুনি যে লোকে বলছে ‘আসল’পেলে আসেনি,একজন বাঙালী অভিনেতা আমার অভিনয় করছেন।
শান্তিগোপালঃ নামটা জানতেন আমার?
পেলেঃ শুনেছিলাম আপনার নাম।কিন্তু বাঙালি নাম তো, প্রথমবার শুনেছিলাম তাই মনে রাখতে পারিনি। তবে যাবার আগে আপনার সাথে দেখা করার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু সময় বাধ সাধলো।
শান্তিগোপালঃ ব্যাপারটা শুনে বেশ মজাই পেয়েছিলুম।বাঙালি তো, ছেলেবেলায় ফুটবলটাও একটু-আধটু খেলেছি। কিন্তু স্বয়ং ‘ফুটবল সম্রাট’-এর মতো গোল করতে পারি, ফ্রি-কিক মারতে পারি, জানতুম না।

পেলেঃ তা মশাই আপনার অভিনয় দেখিনি কিন্তু আপনি চাবুক অভিনেতা ছিলেন সেটা শুনেছি । যা সাজতেন, সেটাই নাকি মানিয়ে যেত। লোক বিশ্বাস করতো আপনি আমারও অবিকল নকল করতে পারেন।আপনি সত্যিই ‘যাত্রা সম্রাট’।
শান্তিগোপালঃ অভিনয় না করেও আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ চরিত্র কিন্তু ‘পেলে’ই।
পেলেঃ আপনার ‘শ্রেষ্ঠ চরিত্র’এর জন্য অনেক লোক বিশ্বাসই করলো না যে পেলে খেলে গেলো।বিশ্বের অনেক দেশে খেলছি,এরকম অভিজ্ঞতা কোথাও হয়নি।

shantigopal
শান্তিগোপাল পালঃ তাহলে এতদিন ভারতে আসেননি কেন?দীর্ঘ আটত্রিশ বছর পর আসছেন!
পেলেঃসে তো আপনার ভয়ে।লোকে আবার বলবে ‘নকল’ পেলে এসেছে আর আপনি ‘নকল’ পেলে হয়েছেন।
শান্তিগোপালঃ আপনি খেলে যাবার পরে যদি ‘পেলে’ ভূমিকাতেই সত্যিই অভিনয় করতাম তা হলে বেশ হতো।
পেলেঃ সে নয় অভিনয় করতেন আমার।কিন্তু ‘ফুটবল স্কিল’ কী করে দেখাতেন?
শান্তিগোপালঃ বলতাম বয়স হয়ে গেছে, এখন আর খেলবো না।শুধু বলে দু-তিনটে শট মেরে দিতাম।আপনি যখন বললেন ফিফা প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিযোগিতা করবেন তখন আমিই যেতাম।‘পেলে’ বলে স্যান্টোস ক্লাবে ঘুরে আসতাম।শুধু পর্তুগিজ ভাষা শিখতে হতো।
পেলেঃ ভাগ্যিস এরকম করেননি।নাহলে আপনাদের ওই একটা সিরিয়ালে ‘আসল মা’ কে জানার জন্য যেমন ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হয়েছিলো তেমনই কে ‘আসল’ পেলে জানতে ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হতো।
শান্তিগোপালঃ ওই সিরিয়ালের মতো ডিএনএ পরীক্ষা হলে ‘আসল’ পেলে কে কোনোদিনই জানা যেতো না।

pele6

পেলেঃ তা হলে আপনাকে আমায় অভিনয় করা শেখাতে হতো। নাহলে দুজনের মধ্যে একটা ফুটবল ম্যাচ খেলতে হতো।
শান্তিগোপালঃ তাহলে এবার কী হয়ে যাবে ‘আসল’ আর ‘নকল’ পেলের মধ্যে একটা ফুটবল ম্যাচ?
পেলেঃ কিন্তু যখন কলকাতায় যাবো তখন তো দুর্গাপূজা। মাঠে লোক হবে তো?
শান্তিগোপালঃ ‘ফুটবল সম্রাট’কে দেখতে লোক তো মাঠ উপচেই পড়বে।কিন্তু ব্যাপারটা কি জানেন আপনি আসতে একটু দেরী করে ফেললেন।বছর তিন আগে আসতে পারতেন।‘নকল’ পেলে তো আর নেই…
২০১২ সালে শান্তিগোপাল পাল ৮৬ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.