আর কলকাতায় ফিরতেই চাননি!

রাহুল বিশ্বাস

বলিউড অভিযান মোটেই ভাল হয়নি মহানায়কের। কেন হয়নি, তা নিয়ে নানা ব্যাখ্যা চালু আছে। কেউ বলেন, রাজকাপুর বা কেউ কেউ চাননি উত্তর বম্বেতে সফল হোন। তাই নানারকম অসহযোগিতা করেছিলেন।
আবার কেউ কেউ বলেন, ভুল লোকেদের খপ্পরে পড়েছিলেন মহানায়ক। তারাই ভুল পথে চালিত করেছিলেন। তাছাড়া, অভিনয় করলেও নিজের টাকা ঢালা উচিত হয়নি। বলিউড সম্পর্কে কোনও ধারনাই নেই, ছবির প্রচার থেকে ডিস্ট্রিবিউশন, সবই অজানা লোকেদের উপর নির্ভর করতে হবে। এই অবস্থায় এত টাকা জলের মতো ঢালা ঠিক হয়নি।

uttam kumar7
কিন্তু সাতের দশকের মাঝামাঝি এসে সেই বম্বেতেই দিনের পর দিন পড়ে থেকেছেন। কলকাতায় ফিরে যেতে চাননি। এমনটা কেন হয়েছিল ? শোনা যায়, শুটিং চলাচালীন ফ্লোরে এসে একদল লোক উত্তম কুমারকে শাসিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে নাকি প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সব শুটিং বাতিল করে বম্বে চলে গিয়েছিলেন মহানায়ক।
অনেকে জানতেন, শরীর খারাপ। সরকারিভাবে সেটাই বলা হয়েছিল। কিন্তু আসলে, কলকাতায় ফিরতে ভরসা পাচ্ছিলেন না উত্তম কুমার। যদি সেই দল আবার হানা দেয়। যদি কোনও অঘটন ঘটিয়ে ফেলে।কিন্তু কারা উত্তম কুমারকে শাসিয়েছিলেন ? কেনই বা শাসিয়েছিলেন ? শোনা যায়, নকশালদের একটি গোষ্ঠী নাকি এর সঙ্গে যুক্ত।
এর সঙ্গে রাজনীতিও কিছুটা জড়িয়ে আছে। উত্তম কুমার খুব ভোরে উঠে ময়দানে হাঁটতে যেতেন। আলো ফোটার আগেই আবার ফিরেও আসতেন। কোনও একদিন তিনি নাকি একটি এনকাউন্টার দেখে ফেলেন। অনেকে বলেন, পুলিশ গুলি করে মেরেছিল বিশিষ্ট সাংবাদিক সরোজ দত্তকে। তারপর তাঁর দেহ আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিজের চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখলেও তিনি কাউকে কিছু বলতে পারেননি। পুলিশের পক্ষ থেকেও নাকি উত্তম কুমারকে বলা হয়েছিল, যা দেখলেন, তা কাউকে বলবেন না।

uttam kumar3
নকশালদের একটি গোষ্ঠী চেয়েছিল, উত্তম কুমার যেন প্রকাশ্যে তা বলেন। সরোজ দত্তর খুনের ঘটনা তিনি বললে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে। পুলিশ যে এভাবে খুন করে লাস গুম করছে, সেটা সামনে আসবে। হয়ত তাই তাঁর উপর চাপ তৈরি করা হয়েছিল।
সেই কারণেই কি বম্বে পালিয়ে গিয়েছিলেন মহানায়ক ? হতেও পারে। বন্ধু ও সহ অভিনেতা বিশ্বজিতের কথায়, উত্তমদা আর কলকাতায় ফিরতে ভরসা পাচ্ছিলেন না। তিনি ঠিক করেছিলেন, বম্বে থেকেই বাংলা ছবি করবেন। আমাকে বলেওছিলেন, চল বিশু, তুই আর আমি এখান থেকেই বাংলা ছবি করি। এখানেই শুটিং হবে। গোটা ইউনিট এখান থেকেই কাজ করবে।
কিন্তু এভাবে গোটা ইউনিটকে বম্বে থেকে কাজ করানো মুশকিল ছিল। একটা-দুটো ছবির ক্ষেত্রে হয়ত হতে পারত। কিন্তু দিনের পর দিন গোটা ইউনিট শুধু মাত্র তাঁর জন্য বম্বেতে পড়ে থাকবে, এটা ভাল দেখায় না, বুঝতে পেরেছিলেন স্বয়ং উত্তম কুমারও। তাই আবার কলকাতায় ফিরে আসেন।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.