নন্দ ঘোষের কড়চা
দেশের সবথেকে বড় শত্রু কে? আপনি ভাবছেন কোনও জঙ্গির কথা। হয়ত ভাবছেন কোনও রাজনীতিকের কথা। ধুর, এরা কেউ নয়। এরা তো নিতান্তই চুনোপুঁটি। এরা কেউ একটা–দুটো বোম ফাটায়। কেউ ছোটখাটো ষড়যন্ত্র করে। তাদের এসব কর্মকাণ্ড আপনার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছয় না। কিন্তু একটা লোক নিঃশব্দে সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। এখন খুব পুলকে তাঁর ফাঁদে পা দিয়েছেন। আপনি নিজেও বুঝছেন না কতখানি কাদায় আপনার পা পড়েছে।
সেই লোকটি কে বলুন তো? যে সবসময় বলছে জিও। আজ বলছে জিও। কাল বলবে পিও। যতখুশি ডেটা দিয়ে যাচ্ছে। ডেটা তো নয়, যেন সজনে ডাটা। আর ডেটা বিলিয়েই কেউকেটা হয়ে উঠতে চাইছে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন। ধীরুভাই ধীরে চলত। কিন্তু এ তো ফোর জি স্পিডে ছুটছে। তার নামেই আরেক মুকেশ ছিলেন। তিনি গাইতেন, কাঁহি দূর জব দিন ঢল যায়ে। আর এই মুকেশ! এ দিন ঢলার অপেক্ষা করে না। ভোর থেকে রাত, সবাইকে মাতিয়ে রেখেছে। ছেলেও জিওতে মগ্ন, ছেলের বাবাও। মেয়ে মগ্ন, মাও তাই। সবাই শুধু নতুন নতুন অফারে মজে আছে। বুঝছে না, ফ্রি ডেটা পেতে গিয়ে নিজের কত সময় জলাঞ্জলি দিচ্ছে। বল বীর, চির অবনত মম শির অবস্থা। পাড়ায় পাড়ায় বিদ্যাসাগর গজিয়ে উঠেছে। রাস্তার ধারে, ল্যাম্প পোস্টের নিচে বাবুরা কতই না ব্যস্ত। কলেজে ক্লাস ফাঁকা। সবাই মগ্ন জিওতে, বা ফ্রি ওয়াই ফাইয়ে। কলেজ থেকে স্কুলেও হানা দিয়েছে এই জিওবাবু।
পড়াশোনা লাঠে উঠেছে। কাজকর্ম লাটে উঠেছে। আপনার জীবন থেকে রোজ ছয়–সাত ঘণ্টা ছিনিয়ে নিয়েছে এই আম্বানিবাবু। সরকার ডি এ দিচ্ছে না বলে এত আক্ষেপ, মুকেশবাবু যে রোজ পাঁচ–ছয় ঘণ্টা সময় খেয়ে নিচ্ছে, কই তার বেলায় তো কোনও সমালোচনা নেই। ভেবেছিলাম, এবার হয়ত লোকসান খেয়ে থেমে যাবে। কিন্তু মুকেশবাবুর থামার কোনও লক্ষ্মণ নেই। গোটা দেশকেই রসাতলে পাঠানোর জন্য যা যা করা দরকার, ঠিক তাই তাই করছেন। গোটা দেশ যতই ধন্য ধন্য করুক, একদিন সব ব্যাটাই বুঝবে, নন্দ ঘোষের কড়চাই ঠিক।