অহিংসা মানে কাপুরুষতা নয়

ধৃতিমান ভট্টাচার্য

গান্ধীজীর জন্মদিনেই তাঁকে নিয়ে একটি লেখার কথা ভেবেছিলাম। আজ নয় কাল, এসব করতে গিয়ে একটু দেরি হয়ে গেল। তবু, ছোট্ট একটি ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
গান্ধীজী হিংসার মধ্যেও পার্থক্য বিচার করতেন। সব সহিংস- আন্দোলনকেই তিনি এক চোখে দেখতেন না। আত্মরক্ষার জন্য সহিংস প্রতিরোধকে তিনি ন্যায্য অধিকার বলেই মনে করতেন। উদাহরণ স্বরূপ, মৌলানা সৌকত আলি ও তিনি ১৯২১ সালে বেটিয়াতে যান। বেটিয়ার নিকট এক গ্রামে লোকেরা তাঁকে জানায় যে যখন পুলিশেরা তাদের ঘরদোর লুট করতে লাগলো ও মেয়েদের উপর অত্যাচার করতে লাগলো, তখন পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। যখন তারা বলল যে, তারা গান্ধীজীর শিক্ষানুসারে অর্থাৎ অহিংস থাকার জন্যই পালিয়ে গেছিল ,তখন গান্ধীজীর মাথা লজ্জায় নুয়ে পড়লো। তিনি তখন তাদের বোঝান যে অহিংসার অর্থ তা নয়। আমি তাদের কাছ থেকে এই আশা করি যে, যে তারা জগতের সবচেয়ে শক্তিমান শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস পায়- যখন তারা দেখবে সে শক্তি অন্যায় করতে উদ্যত, এবং প্রতিশোধ না নিয়ে নিজেদের মাথার উপর সেই উদ্যত শক্তির সমস্ত আঘাত স্বেচ্ছায় গ্রহণ করবার শক্তি অর্জন করবে- কিন্তু কোন অবস্থাতেই রণক্ষেত্র থেকে পালাবে না। নিজেদের সম্পত্তি, মান সম্মান ও ধর্মকে তরবারির সাহায্যে রক্ষা করাতে কোন লজ্জা বা অধর্ম নেই। তা সম্পূর্ণ মানবোচিত ও বীরোচিত ব্যাপার। কিন্তু তারও চেয়ে উন্নততর ও গৌরবময় হবে সেই প্রতিরোধ, যাতে প্রতি-হিংসা নেই, অথবা শত্রুর প্রতি কোন অশুভ কামনা নেই। কিন্তু কর্তব্যের স্থান থেকে পালিয়ে আসা, নিজের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে সম্পত্তি, মান-ইজ্জত ও ধর্ম অনিষ্টকারীর হাতে সপে দেওয়া অমানবিক, অস্বাভাবিক ও কলঙ্কময়। যারা মরতে পারে তাদেরকেই গান্ধীজীর অহিংস বোঝানো সহজ- যারা মরতে ভয় পায়, তাদের অহিংস শেখানো কঠিন।

gandhi
তিনি আরও বলেছেন, ” ভয়ে পালিয়ে আসার নাম কাপুরুষতা। কাপুরুষতার সাহায্যে কোন মীমাংসা বা অহিংসা আনা সম্ভব নয়।
কাপুরুষতাও একরকমের হিংসা, যা দূর করা শক্ত। একজন হিংসাপ্রবণ লোককে বরং অহিংস করে তোলা সম্ভব- কিন্তু ভীরুতা যেহেতু সকল শক্তির নেতি, সেইহেতু মূষিককে বিড়াল সম্পর্কে অহিংসা কোন কালেই শেখানো সম্ভব নয়। মূষিক অহিংসা কি তা কখনও বুঝতেই পারবে না, যেহেতু বিড়ালের বিরুদ্ধে সহিংস হবার মতো ক্ষমতা ও তার কোন কালেই ছিল না। একজন অন্ধকে যদি বলা হয় যে কুৎসিত জিনিষ দেখো না, তবে কি তা ঠাট্টার মতো শোনায় না? (গান্ধী গবেষণা- পান্নালাল দাশগুপ্ত)
উদাহরণ স্বরূপ ঘটনা সংক্রান্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে, আমরা গান্ধীজীর যা মতামত জানলাম, তার মর্মার্থ একবার বুঝে দেখবার চেষ্টা করুন। গান্ধীজী, চিরজীবনই কাপুরুষতাকে ঘৃণা করে গেছেন। এখন বিষয় হল, আমরা, এই মানুষটির দেখানো পথের (শুধুমাত্র কাপুরুষতার কথাই যদি ধরা হয়!) মর্মার্থ উপলব্ধি করার চেষ্টা করব, নাকি, বাজারে বিকৃত সস্তা চটকদার লেখকদের চাটনি লেখা প্রাত্যহিক জীবনের মেরুদণ্ডহীন জীবনের বে-স্বাদ কাটাতে চাটব? বিবেচনা করার দায়িত্ব স্ব-স্ব।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.