অমল ও চাওআলা

(রবি ঠাকুরের কাছে ক্ষমা চেয়ে …)

চাওআলা = চা― চা― লিকার চা, দুধ চা!

অমল = চাওআলা, চাওআলা, ও চাওআলা!

চাওআলা = ডাকছ কেন? চা খাবে?

অমল = কেমন করে খাবো! আমার তো খুচরো পয়সা নেই! একটাই ২০০০এর নোট। তুমি খুচরো দেবে?

চাওআলা = কেমন ছেলে তুমি। খুচরো নেই তো আমার বেলা বইয়ে দাও কেন?

অমল = আমি যদি সবার মতন এটিএম আর ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দিতে পারতুম!

চাওআলা = আচ্ছা তোমার কাছে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড আছে? তোমার পেটিএম নেই! তাহলে একটা দুধ চায়ের সাথে এক ভাঁড় লিকার ফ্রী পেতে!

amal2

অমল = একটা পুরনো ৫০০টাকার নোট আছে, ওটা নেবে?

চাওআলা = না বাবু ওটা কালোধন। ওটা নিতে পারবো না।

অমল = তুমি যে কত দূর থেকে হাঁকতে হাঁকতে চলে যাচ্ছ শুনে আমার মন কেমন করছে। ঠিক যেন তুমি আমার ‘মন কি বাত’
বলে যাচ্ছো।

চাওআলা = (চায়ের চুলা সহ কেটলি নামাইয়া) , মিত্রোঁ.., তুমি এখানে বসে কী করছ?

অমল = কবিরাজ আমাকে বেরোতে বারণ করেছে, বলেছে সুদিন এলে তবেই বের হবি। তাই আমি সারাদিন এইখেনেই বসে থাকি।

চাওআলা = আহা মিত্রোঁ, তোমার কী হয়েছে? কোন ডাক্তারি পরীক্ষা করাওনি?

অমল = আমি জানি নে। আমি তো ফোটোশপ শিখি নি, তাই আমি এক্স-রে রিপোর্ট দেখে বুঝতে পারি নে আমার কী হয়েছে।
চাওআলা, তুমি কোথা থেকে আসছ?

চাওআলা = আমাদের গ্রাম থেকে আসছি।

অমল = তোমাদের গ্রাম? অনে―ক দূরে তোমাদের গ্রাম?

চাওআলা = দিল্লিতে আমার একটা ঘর আছে বটে, তবে সেখানে এখন যাইনা। আমাদের আদি গ্রাম সেই গুজরাটে। সবরমতি নদীর
ধারে।

অমল = গুজরাটের গ্রাম ― সবরমতি নদী― কী জানি,হয়তো তোমাদের গ্রাম দেখেছি― কবে সে আমার মনে পড়ে না।

চাওআলা = তুমি দেখেছ? গুজরাটে গিয়েছিলে নাকি?

অমল = না, কোনোদিন যাই নি। টিভিতে আমি দেখেছি। তোমাদের গ্রামে গডসের মন্দির আছে না?

amal-o-doiwala2

চাওআলা = ঠিক বলেছ বাবা।

অমল = তোমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে ট্রেন লাইন গেছে না? একবার ট্রেনে কারা আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল।

চাওআলা = কী আশ্চর্য! ঠিক বলছ।

অমল = তোমাদের গ্রামের লোকেদের মধ্যে একবার দাঙ্গা লেগেছিল না?

চাওআলা = বা! বা! ঠিক কথা। তুমি নিশ্চয় কোনোদিন সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলে!

অমল = সত্যি বলছি চাওআলা, আমি একদিনও যাই নি। কবিরাজ যেদিন আমাকে বাইরে যেতে বলবে সেদিন তুমি নিয়ে যাবে
তোমাদের গ্রামে?

চাওআলা = যাব বই কি বাবা, খুব নিয়ে যাব! তবে আমি তো বেশিরভাগ সময় বিদেশে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করি, তাই গ্রামের
বাড়িতে যাওয়ার সময় হয়ে ওঠে না!

অমল = আমাকে তোমার মতো ঐরকম চা বেচতে শিখিয়ে দিয়ো। আমিও দেশে দেশে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করবো।

চাওআলা = মরে যাই! চা বেচতে যাবে কেন বাবা। এত এত পুঁথি পড়ে তুমি পণ্ডিত হয়ে উঠবে।

অমল = না, না, আমি কক্‌খনো পণ্ডিত হব না। আমি তোমার মতন দূর দূর দেশে গিয়ে চা বিক্রি করে বেড়াবো! কী রকম করে
তুমি বল, মিত্রোঁ….চা চা গরম চা। আমাকে সুরটা শিখিয়ে দাও।

চাওআলা = ওরে পাগল! এ সুরও শেখা অতো সহজ নয়! এর জন্য ৫৬ ইঞ্চি ছাতি দরকার।

অমল = না, না, ও আমার শুনতে খুব ভালো লাগে। ঐ রাস্তার মোড় থেকে ঐ গাছের সারির মধ্যে দিয়ে যখন তোমার ডাক
আসছিল, আমার মন তোলপাড় হচ্ছিল― যেন মনের মধ্যে সার্জিক্যাল স্টাইক হচ্ছিল!

চাওআলা = বাবা, এক ভাঁড় লিকার চা তুমি খাও।

অমল = আমার তো পয়সা নেই।

চাওআলা = না না না না― পয়সার কথা বোলো না। তুমি তো আমার মিত্রোঁ! আর আমি মিত্রোঁদের কাছে থেকে পয়সা নিই না।
আমার কতো মিত্রোঁকে তো আমি হাজার হাজার কোটি টাকার চা বিনে পয়সায় খাওয়াই।

অমল = তোমার কি অনেক দেরি হয়ে গেল?

চাওআলা = কিচ্ছু দেরি হননি মিত্রোঁ, আমার কোনো লোকসান হয় নি। আমি এর দাম ঠিক অন্যদের ঘাড় থেকে তুলে নেব। এখন
একটু জানালার কাছে এসো তো!

অমল = জানালার কাছে কেন?

চাওয়ালা = চায়ের কাপ হাতে তোমার সাথে একটা নিজস্বী তুলবো। আর ছবিতে যেহেতু জানালা থাকবে তাই এটাকে ‘জানলা-শপিং’
বলে দিব্যি বাজারে চালাতে পারবো।

(আন্তর্জাল সংগ্রহ)

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.