Categories খেলা

‌স্পিনার লেলিয়েও তাহলে লাভ হল না!‌

মলয় সিনহা‌

মুদ্রার দুই পিঠ। যেটা খুশি দেখা যায়। একটা তথ্য, দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ হারল ভারত। আরেকটা তথ্য হল, বারো বছর পর দেশের মাটিতে সিরিজ হার। অর্থাৎ, গত বারো বছরে ভারত দেশের মাটিতে কোনও সিরিজ হারেনি। দ্বিতীয়টা দেখতে চাইলে, ভারতীয় দলের ধারাবাহিক সাফল্যের তারিফ করতেই হবে। যে যেভাবে দেখতে চাইবেন।

তবে এখন দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হজম করা কঠিন। ঘরের মাঠে তিনটির তিনটে টেস্টেই কোনও দল যদি হেরে যায়, তখন গত বারো বছরের ধারাবাহিকতার মলম দিয়ে সেই ব্যথা সারানো যায় না। তাই এই ০–‌৩ হারকে লজ্জাজনকই বলতে হবে। দলের ক্রিকেটার, কোচ বা বোর্ডকর্তারাও নিশ্চয় ‘‌লজ্জার হার’‌ এই বিশেষণ নিয়ে বিশেষ আপত্তি করবেন না।

কিন্তু এমন অসহায় আত্মসমর্পণ কেন?‌ প্রায় তিন দশক ধরে শুনে আসছি, দেশের মাটিতে ভারত বাঘ, আর বিদেশের মাটিতে ইঁদুর। অর্থাৎ, ঘরের মাটিতে স্পিন সহায়ক উইকেট বানাও, আর তিন স্পিনারকে লেলিয়ে দাও। বিপক্ষ চারদিনের মাথায় কুপোকাত হয়ে যাবে। ঘরের মাঠে সিরিজ জেতার এটাই ছিল চেনা ফর্মুলা। কিন্তু বিদেশের মাটিতে পছন্দের পিচ পাওয়া যেত না। সেখানে সবুজ উইকেটে বিপক্ষ পেসারদের সামলাতে ভারতের ‘‌ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা হত।

এখন ছবিটা কিছুটা বদলেছে। বিদেশের মাটিতে ভারত সিরিজ জিতছে। এমনকী, অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে দু’‌বার অস্ট্রেলিয়াকে সিরিজে হারিয়ে এসেছে। কিন্তু দেশের মাটিতে স্পিনের পিচ বানিয়েও এমন পর্যুদস্ত হতে হল কেন?‌ ভারতীয় স্পিনাররা যে খারাপ বল করেছেন, এমন নয়। কখনও অশ্বিন, কখনও জাদেজা। আবার কখনও ওয়াশিংটন, তো কখনও কুলদীপ। যে যখন সুযোগ পেয়েছেন, দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। বিপক্ষকে অল্প রানেই গুটিয়ে দিয়েছেন। তারপরেও হারতে হল কেন?‌ মূল দায় অবশ্যই ব্যাটসম্যানদের।

আমাদের ব্যাটসম্যানরা আইপিএল ঘরানার সঙ্গে এতটাই জড়িয়ে গেছেন, টেস্ট খেলার ধৈর্যটাই যেন হারিয়ে গেছে। তিন–‌চারটে বল খেলার পরই ছয় মারার চেষ্টা করছেন। শেষ টেস্টের শেষ ইনিংসে জিততে গেলে চাই মাত্র ১৭৪ রান। তখনও আড়াই দিন বাকি। তারপরেও কীসের যে এত তাড়া। কেউ ছয় মারতে যাচ্ছেন, তো কেউ রিভার্স সুইপ নিতে চাইছেন। অধিকাংশ ব্যাটসম্যানই কার্যত উইকেট উপহার দিয়ে এলেন।
আসলে, স্পিন খেলাটাও একটা আর্ট। ধুমধাড়াক্কা টি২০ আমাদের সেই ধৈর্য, সেই শিল্প কেড়ে নিয়েছে।
বিশেষ করে, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মার মতো সিনিয়ররা যদি এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন শট নিতে গিয়ে আউট হন, জুনিয়রদের কাজটা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ধরে খেলব নাকি পেটাব, এই ব্যাপারে তাঁরাও যেন বিভ্রান্তির ভুলভুলাইয়ায় পাক খেতে থাকেন।

সামনে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। নিঃসন্দেহে লড়াইটা আরও কঠিন। স্পিনের সামনে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দুর্বলতা যেভাবে প্রকট হয়ে গেল, তাঁরাও হয়তো নাথান লায়নকে এগিয়ে দেবেন। আগের দু’‌বার সিরিজ হাতে এসেছিল বলেই এবারও আসবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। ভারত আরও অন্ধকারে তলিয়ে যায়, নাকি ঘুরে দাঁড়ায়, সেটাই আপাতত দেখার। ‌

 

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.