প্রশান্ত বসু
খেলায় হার–জিৎ আছেই। হারলেই সমালোচনা করতে হবে, এমনও নয়। তাই বলে, তিনটির তিনটি টেস্টেই হার! তাও আবার দেশের মাটিতে! এমন শোচনীয় পরাজয় মেনে নেওয়া সত্যিই বেশ যন্ত্রণার। পরপর দুই টেস্টে হারের পরও টনক নড়ল না! তৃতীয় টেস্টেও সেই একই করুণ পরিণতি!
ভারতের তারকা ব্যাটসম্যানদের দেখে বারবার মনে হয়েছে, আমরা বোধ হয় জেতার চেষ্টাই করিনি। আমরা শুরু থেকেই ভেবে নিয়েছিলাম, তুড়ি মেরে অন্যদের হারিয়ে দেব। আর এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসটাই এই বিপর্যয় ডেকে এনেছে। তাই পরপর দুই টেস্টে হারের পরেও আমরা দেওয়াল লিখন পড়তে পারিনি। মুম্বই টেস্টেও একের পর এক উইকেট বিসর্জন দিয়ে এসেছি।
একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টা পরিষ্কার হবে। শেষ ইনিংসে জেতার জন্য ভারতের দরকার ছিল মাত্র ১৪৭ রান। হাতে ছিল তখনও আড়াই দিনেরও বেশি সময়। ভারতের যা ব্যাটিং লাইন আপ, তাতে এই রান তোলার কোনও কঠিন ব্যাপার! কিন্তু এই রান তুলতে গিয়েও কেউ ছয় মারতে গেলেন, কেউ রিভার্স সুইপ করতে গেলেন। কেউ অহেতুক খোঁচা দিলেন। মোদ্দা কথা, টেস্ট খেলতে গেলে যে ধৈর্য আর দায়িত্ববোধ লাগে, তার কোনওটাই দেখা গেল না। যেখানে আগের দুই টেস্টে হেরে এমনিতেই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, সেখানে তো আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত। কীসের এত তাড়া ছিল, কে জানে! একে একে উইকেট উপহার দিয়ে এলেন।
আসলে, আইপিএল খেলতে খেলতে সেই ধৈর্যটাই যেন হারিয়ে ফেলেছেন। সুনীল গাভাসকার একেবারে সঠিক জায়গাতেই আলো ফেলেছেন। তিনটে বা চারটে বলে খেলার পরই কেউ কেউ ভেবে নিচ্ছেন, তাঁরা উইকেটে সেট হয়ে গেছেন। এবার হাত খুলে মারতেই পারেন। তাঁরা একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। সাদা বলের ক্রিকেট আর লাল বলের ক্রিকেটের ফারাক কতটা, তা এঁরা এখনও বুঝে উঠতেই পারলেন না। আইপিএলে ছোট মাঠ, বল সেভাবে সুইং করে না, স্পিনাররাও রান বাঁচানোর বোলিং করেন। ফিল্ডিংয়েও নানা বিধিনিষেধ। তাই সেখানে ছয় মারা অনেক সহজ। কিন্তু টেস্ট ব্যাপারটা এত সহজ নয়। অনেক বেশি ধৈর্য লাগে, নিষ্ঠা লাগে, সাধনা লাগে। অনেক বেশি বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা লাগে।
এই হার থেকে ভারত কি সেগুলো শিখবে? নইলে, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কিন্তু আরও অনেক বিপর্যয় অপেক্ষা করে আছে।